পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হই বোন I 8&వి মালা পরিয়ে ওকে খাওয়াবে সামনে বসিয়ে— জালাবে ৰূপবাতি, পাশের ঘরে গ্রামোফোনে বাজবে সানাই। অন্তান্ত বছর শশাঙ্ক ওকে আগে থাকতে না জানিয়ে একটা-কিছু শখের জিনিস কিনে দিত। শৰ্মিলা ভেবেছিল ‘এবারেও নিশ্চয় দেবে, কাল পাব জানতে ।” * আজ ও আর কিছুই সহ্য করতে পারছে না। ঘরে যখন কেউ নেই তখন কেবলই বলে বলে উঠছে, “মিথ্যে ! মিথ্যে ! মিথ্যে ! কী হবে এই খেলায় !” রাত্রে ঘুম হল না । ভোরবেলা শুনতে পেলে মোটর-গাড়ি দরজার কাছ থেকে চলে গেল। শৰ্মিলা ফুপিয়ে উঠে কেঁদে বললে, “ঠাকুর, তুমি মিথ্যে ।” এখন থেকে রোগ দ্রুত বেড়ে চলল। দুর্লক্ষণ যেদিন অত্যন্ত প্রবল হয়ে উঠেছে সেদিন শমিলা ডেকে পাঠালে স্বামীকে। সন্ধ্যাবেলা, ক্ষীণ আলো ঘরে, নার্সকে সংকেত করলে চলে যেতে। স্বামীকে পাশে বসিয়ে হাতে ধরে বললে, “জীবনে আমি ষে বর পেয়েছিলুম ভগবানের কাছে সে তুমি । তার যোগ্য শক্তি আমাকে দেন নি। সাধ্যে যা ছিল করেছি। ক্রটি অনেক হয়েছে, মাপ কোরো আমাকে ৷” শশাঙ্ক কী বলতে যাচ্ছিল, বাধা দিয়ে বললে, “না, কিছু বোলো না। উর্মিকে দিয়ে গেলুম তোমার হাতে। সে আমার আপন বোন। তার মধ্যে আমাকেই পাবে, আরো অনেক বেশি পাবে যা আমার মধ্যে পাও নি। না, চুপ করে, কিছু বোলো না। মরবার কালেই আমার সৌভাগ্য পূর্ণ হল, তোমাকে সুখী করতে পারলুম।” নার্স বাইরে থেকে বললে, “ডাক্তারবাবু এসেছেন।” শমিলা বললে, “ডেকে দাও।” কথাটা বন্ধ হয়ে গেল । শমিলার মামা যত-রকম অশাস্ত্রীয় চিকিৎসার সন্ধানে উৎসাহী। সম্প্রতি এক সন্ন্যাসীর সেবায় তিনি নিযুক্ত। যখন ডাক্তাররা বললে আর-কিছু করবার নেই তখন তিনি ধরে পড়লেন, হিমালয়ের ফেরত বাবাজির ওষুধ পরীক্ষা করতে হবে। কোন তিব্বতি শিকড়ের গুড়ো আর প্রচুর পরিমাণে দুধ, এই হচ্ছে উপকরণ।