পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুই বোন l 8 لأوان এই সময়ে মথুর এল শৰ্মিলার কাছে মুখ ভার করে। বললে, “তোমরা চলে ঘাচ্ছ ঠিক সময়েই । তোমার সঙ্গে কথাবার্তা স্থির হয়ে যাবার পরেই আমি আপসে শশাঙ্কের জন্যে কাজ বিভাগ করে দিয়েছিলেম। আমার সঙ্গে ওর লাভলোকসানের দায় জড়িয়ে রাখি নি। সম্প্রতি কাজ গুটিয়ে নেবার উপলক্ষে শশাঙ্ক ক'দিন ধরে হিসাব বুঝে নিচ্ছিল। দেখা গেল তোমার টাকা সম্পূর্ণ ডুবেছে। তা ছাপিয়েও যা দেন জমেছে তাতে বোধ হয় বাড়ি বিক্রি করতে হবে।” শৰ্মিলা জিজ্ঞাসা করলে, “সর্বনাশ এত দূর এগিয়ে চলেছিল— উনি জানতে পারেন নি ।” _ মখুর বললে, “সর্বনাশ-জিনিসটা অনেক সময় বাজ পড়ার মতে, যে মুহূর্তে মারে তার আগে পর্যন্ত সম্পূর্ণ জানান দেয় না। ও বুঝেছিল ওর লোকসান হয়েছে। , তখনে অল্পেই সামলে নেওয়া যেত। কিন্তু দুবুদ্ধি ঘটল ; ব্যাবসার গলদ তাড়াতাড়ি শুধরে নেবে মনে করে আমাকে লুকিয়ে পাথুরে কয়লার হাটে তেজিমন্দি খেলা শুরু করলে । চড়ার বাজারে যা কিনেছে সস্তার বাজারে তাই বেচে দিতে হল। হঠাৎ আজ দেখলে হাউইয়ের মতো ওর সব গেছে উড়ে পুড়ে, বাকি রইল ছাই। এখন ভগবানের কৃপায় নেপালে কাজ পেলে তোমাদের ভাবতে হবে मी ।” শৰ্মিলা দৈন্যকে ভয় করে না । বরঞ্চ ও জানে, অভাবের দিনে স্বামীর সংসারে ওর স্থান আরো বেড়ে যাবে । দারিদ্র্যের কঠোরতাকে যথাসম্ভব মৃদ্ধ করে এনে দিন চালাতে পারবে, এ বিশ্বাস ওর আছে । বিশেষত গয়না যা হাতে রইল ত৷ নিয়ে এখনো কিছুকাল বিশেষ দুঃখ পেতে হবে না। এ কথাটাও সসংকোচে মনে উকি মেরেছে যে, উমির সঙ্গে বিয়ে হলে তার সম্পত্তিও তো স্বামীরই হবে। কিন্তু শুধু জীবনযাত্রাই তো যথেষ্ট নয়। এত দিন ধরে নিজের শক্তিতে নিজের হাতে স্বামী যে সম্পদ স্বষ্টি করে তুলেছিল, যার খাতিরে আপন হৃদয়ের অনেক প্রবল দাবিকেও শর্মিলা ইচ্ছে করে দিনে দিনে ঠেকিয়ে রেখেছে, সেই ওদের উভয়ের সম্মিলিত জীবনের মূতিমান আশা আজ মরীচিকার মতে মিলিয়ে গেল, এরই অগৌরব ওকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে। মনে মনে বলতে লাগল, তখনই যদি মরতুম তা হলে তো এই ধিক্কারটা বঁাচত আমার। আমার ভাগ্যে ষা ছিল তা তো হল, কিন্তু দৈন্য-অপমানের এই নিদারুণ শূন্তত একদিন কি পরিতাপ আনবে ন। ওঁর মনে । যার মোহে অভিভূত হয়ে এটা ঘটতে পারল একদিন হয়তো তাকে মাপ করতে পারবেন না, তার দেওয়া অন্ন ওঁর মুখে বিষ ঠেকবে। নিজের মাতলামির