পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বদেশ স্বতন ও পুরাতন আমরা পুরাতন ভারতবর্ষীয় ; বড়ো প্রাচীন, বড়ো শ্রান্ত । আমি অনেক সময়ে নিজের মধ্যে আমাদের সেই জাতিগত প্রকাও প্রাচীনত্ব অনুভব করি। মনোযোগপূর্বক যখন অস্তরের মধ্যে নিরীক্ষণ করে দেখি তখন দেখতে পাই, সেখানে কেবল চিস্তা এবং বিশ্রাম এবং বৈরাগ্য। যেন অস্তরে বাহিরে একটা স্থলীর্ঘ ছুটি। যেন জগতের প্রাতকালে আমরা কাছারির কাজ সেরে এসেছি, তাই এই উত্তপ্ত মধ্যাহ্নে যখন আর-সকলে কার্যে নিযুক্ত তখন আমরা দ্বার রুদ্ধ করে নিশ্চিস্তে বিশ্রাম করছি : আমরা আমাদের পুরা বেতন চুকিয়ে নিয়ে কর্মে ইস্তফা দিয়ে পেন্সনের উপর সংসার চালাচ্ছি। বেশ আছি । এমন সময়ে হঠাৎ দেখা গেল, অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বহুকালের যে ব্ৰহ্মত্রটুকু পাওয়া গিয়েছিল তার ভালে দলিল দেখাতে পারি নি বলে নূতন রাজার রাজত্বে বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে। হঠাৎ আমরা গরিব । পৃথিবীর চাষার যে-রকম খেটে মরছে এবং খাজনা দিচ্ছে আমাদেরও তাই করতে হবে । পুরাতন জাতিকে হঠাৎ নৃতন চেষ্টা আরম্ভ করতে হয়েছে । অতএব চিন্তা রাখে, বিশ্রাম রাখে, গৃহকোণ ছাড়ে ; ব্যাকরণ স্তায়শাস্ত্র প্রতিস্থতি এবং নিত্যনৈমিত্তিক গার্হস্থ্য নিয়ে থাকলে আর চলবে না ; কঠিন মাটির ঢেলা ভাঙে, পৃথিবীকে উর্বর করে এবং নব-মানব রাজার রাজস্ব দাও ; কালেজে পড়ে, হোটেলে খাও এবং আপিসে চাকরি করো। হায়, ভারতবর্ষের পুরপ্রাচীর ভেঙে ফেলে এই অনাবৃত বিশাল কর্মক্ষেত্রের মধ্যে জামাদের কে এনে দাড় করালে। আমরা চতুর্দিকে মানসিক বাধ নির্মাণ করে কালস্রোত বদ্ধ করে দিয়ে সমস্ত নিজের মনের মতো গুছিয়ে নিয়ে বসেছিলুম। চঞ্চল পরিবর্তন ভারতবর্ষের বাহিরে সমুজের মতো নিশিদিন গর্জন করত, আমরা অটল স্থিরত্বের মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে গতিশীল নিখিল-সংসারের অস্তিত্ব বিস্তৃত হয়ে বসেছিলুম। এমন সময় কোন ছিত্রপথ দিয়ে চির-অশান্ত মানবস্রোত আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে সমস্ত