পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૧૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী আশা, জীবনে সে অশ্রাস্ত বল, বিশ্বাসের সে অপ্রতিহত প্রভাব কোথায়। তবে তে৷ পৃথিবীপ্রান্তে এই অজ্ঞাতবাসই ভালো, এই ক্ষুদ্র সন্তোষ এবং নিজীব শাস্তিই আমাদের যথালাভ । তখন বসে বসে মনকে এই বলে বোঝাই যে, আমরা যন্ত্র তৈরি করতে পারি নে, জগতের সমস্ত নিগৃঢ় সংবাদ আবিষ্কার করতে পারি নে, কিন্তু ভালোবাসতে পারি, ক্ষমা করতে পারি, পরস্পরের জন্যে স্থান ছেড়ে দিতে পারি। দুঃসাধ্য জুরাশা নিয়ে অস্থির হয়ে বেড়াবার আবশ্বক কী। নাহয় এক পাশেই পড়ে রইলুম, টাইমস-এর জগৎপ্রকাশক স্তম্ভে আমাদের নাম নাহয় না’ই উঠল। কিন্তু দুঃখ আছে, দারিদ্র্য আছে, প্রবলের অত্যাচার অাছে, অসহায়ের ভাগ্যে অপমান আছে ; কোণে বসে কেবল গৃহকর্ম এবং আতিথ্য করে তার কী প্রতিকার করবে । হায়, সেই তো ভারতবর্ষের দুঃসহ দুঃখ । আমরা কার সঙ্গে पूर्फ করব । রূঢ় মানবপ্রকৃতির চিরন্তন নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ! যিশুখ্রস্টের পবিত্র শোণিতস্রোত যে অনুর্বর কাঠিন্তকে আজও কোমল করতে পারে নি সেই পাষাণের সঙ্গে ! প্রবলতা চিরদিন দুর্বলতার প্রতি নির্মম, আমরা সেই আদিম পশুপ্রকৃতিকে কী করে জয় করব ? সভা করে ? দরখাস্ত করে ? আজ একটু ভিক্ষা পেয়ে ? কাল একটা তাড়া খেয়ে ? তা কখনোই হবে না। তবে প্রবলের সমান প্রবল হয়ে ? তা হতে পারে বটে। কিন্তু যখন ভেবে দেখি যুরোপ কতখানি প্রবল, কত কারণে প্রবল— যখন এই দুর্দাস্ত শক্তিকে একবার কায়মনে সর্বতোভাবে অনুভব করে দেখি, তখন আর কি আশা হয়। তখন মনে হয়, এসো ভাই, সহিষ্ণু হয়ে থাকি এবং ভালোবাসি এবং ভালো করি । পৃথিবীতে যতটুকু কাজ করি তা যেন সত্যসত্যই করি, ভান না করি । অক্ষমতার প্রধান বিপদ এই যে, সে বৃহৎ কাজ করতে পারে না বলে বৃহৎ ভানকে শ্রেয়স্কর জ্ঞান করে। জানে না যে মনুষ্যত্বলাভের পক্ষে বড়ো মিথ্যার চেয়ে ছোটো সত্য ঢের বেশি মূল্যবান । কিন্তু উপদেশ দেওয়া আমার অভিপ্রায় নয়। প্রকৃত অবস্থাটা কী তাই আমি দেখতে চেষ্টা করছি। তা দেখতে গেলে যে পুরাতন বেদ পুরাণ সংহিতা খুলে বসে নিজের মনের মতো শ্লোক সংগ্রহ করে একটা কাল্পনিক কাল রচনা করতে হবে তা নয়, কিম্বা অস্ত জাতির প্রকৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনাযোগে আপনাদের বিলীন করে দিয়ে আমাদের নবশিক্ষার ক্ষীণভিত্তির উপর প্রকাগু চুরাশার দুর্গ নির্মাণ করতে হবে তাও নয় ; দেখতে হবে এখন আমরা কোথায় আছি । আমরা যেখানে অবস্থান করছি