পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ઇન્દ রবীন্দ্র-রচনাবলী নিজের মধ্যে সজীব মনুষ্যত্ব থাকলে তবেই প্রাচীন এবং আধুনিক মনুষ্যত্বকে, পূর্ব ও পশ্চিমের মকুন্যত্বকে, নিজের ব্যবহারে আনতে পারা যায়। মৃত মকুন্যই যেখানে পড়ে আছে সম্পূর্ণরূপে সেইখানকারই। জীবিত মহন্ত দশ দিকের কেন্দ্রস্থলে। সে ভিন্নতার মধ্যে ঐক্য এবং বিপরীতের মধ্যে সেতুস্থাপন করে সকল সত্যের মধ্যে আপনার অধিকার বিস্তার করে ; এক দিকে নত না হয়ে চতুর্দিকে প্রসারিত হওয়াকেই সে আপনার প্রকৃত উন্নতি জ্ঞান করে। 〉3○b" সমাজভেদ গত জানুয়ারি মাসে কণ্টেম্পোরারি রিভিয়ু পত্রে ডাক্তার ডিলন ‘ব্যাঘ্ৰ চীন এবং মেষশাবক যুরোপ নাম দিয়া একটি প্রবন্ধ লিখিয়াছেন। তাহাতে যুদ্ধ-উপলক্ষে চীনবাসীদের প্রতি য়ুরোপের অকথ্য অত্যাচার বর্ণিত হইয়াছে। জঙ্গিস খা, তৈমুর লং প্রভৃতি লোকশত্রুদিগের ইতিহাসবিখ্যাত নিদারুণ কীতি সভ্য য়ুরোপের উন্মত্ত বর্বরতার নিকট নতশির হইল। যুরোপ নিজের দয়াধর্মপ্রবণ সভ্যতার গৌরব করিয়া এশিয়াকে সর্বদাই ধিক্কার দিয়া থাকে, তাহার জবাব দিবার উপলক্ষ পাইয়া আমাদের কোনো স্থখ নাই। কারণ, অপবাদ রটনা করিয়া দুর্বল সবলের কোনো ক্ষতি করিতে পারে না। কিন্তু সবল দুর্বলের নামে যে অপবাদ ঘোষণা করে তাহা দুর্বলের পক্ষে কোনো-না কোনো সময়ে সাংঘাতিক হইয়া উঠে। সাধারণত এশিয়া-চরিত্রের ক্রুরতা বর্বরতা দুজ্ঞেয়তা যুরোপীয় সমাজে একটা প্রবাদবাক্যের মতো। এইজন্য এশিয়াকে যুরোপের আদর্শে বিচার করা কর্তব্য নহে, এই একটা ধুয়া আজকাল খৃস্টান-সমাজে বেশি করিয়া উঠিয়াছে। আমরা যখন য়ুরোপের শিক্ষা প্রথম পাইলাম তখন মানুষে মানুষে অভেদ এই ধুয়াটাই সে শিক্ষা হইতে গ্রহণ করিয়াছিলাম। সেইজন্ত আমাদের নূতন শিক্ষকটির সঙ্গে আমাদের সমস্ত প্রভেদ যাহাতে ঘুচিয়া যায় আমরা সেইভাবেই প্রস্তুত হইয়া উঠিতেছিলাম। এমন সময় মাস্টারমশায় তাহার ধর্মশাস্ত্র বন্ধ করিয়া বলিলেন, পূর্বপশ্চিমে এমন প্রভেদ ষে সে আর লঙ্ঘন করিবার জো নাই । আচ্ছা বেশ, প্রভেদ আছে, প্রভেদ থাকৃ। বৈচিত্র্যই সংসারের স্বাস্থ্যরক্ষা করে ।