পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Gł o od কেবল আমাদের দেশেই ধর্মে ও সমাজে কোথাও কোনো কৃত্রিমতা ও বিকৃতি নাই, অথচ বাহিরে দুর্গতি অাছে, তবে সত্যের সংঘাত তাহার পক্ষে স্থখকর হইবে না, তিনি সত্যকে আপনার শত্রু বলিয়া গণ্য করিবেন। তাহাদের মন রক্ষা করিয়া ষে চলিবে হয় তাহাকে মূঢ় নয় তাহাকে ভীরু হইতে হইবে। নিজেরদেশের আদর্শকে যে ব্যক্তি যে পরিমাণে ভালোবাসিবে সেই তাহারবিকারকে সেই পরিমাণেই আঘাত করিবে, ইহাই শ্রেয়স্কর । ভালোমন্দ সমস্তকেই সমান নিবিচারে সর্বাঙ্গে মাখিয়া নিশ্চল হইয়া বসিয়া থাকাকেই প্রেমের পরিচয় বলিতে পারি না। দেশের মধ্যে এমন অনেক আবর্জন ভূপাকার হইয়া উঠিয়াছে যাহা আমাদের বুদ্ধিকে শক্তিকে ধর্মকে চারি দিকে আবদ্ধ করিয়াছে ; সেই কৃত্রিম বন্ধন হইতে মুক্তি পাইবার জন্য এ দেশে মাহুষের আত্মা অহরহ কাজিতেছে— সেই কান্নাই ক্ষুধার কান্না, মারীর কান্না, অকালমৃত্যুর কান্না, অপমানের কান্ন। সেই কান্নাই "নানা নাম ধরিয়া আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে এমন একটা ব্যাকুলতার সঞ্চার করিয়াছে, সমস্ত দেশকে নিরানন্দ করিয়া রাখিয়াছে, এবং বাহিরের সকল আঘাতের সম্বন্ধেই তাহাকে এমন একান্তভাবে অসহায় করিয়া তুলিয়াছে। ইহার বেদনা কি প্রকাশ করিব না। কেবল মিথ্যা কথা বলিব এবং সেই বেদনার কারণকে দিনরাত্রি প্রশ্রয় দিতেই থাকিব ? অস্তরে যে-সকল মর্মাস্তিক বন্ধন আছে বাহিরের শৃঙ্খল তাহারই স্কুল প্রকাশ মাত্র । অস্তরের সেই পাপগুলাকে কেবলই বাপু বাছা বলিয়া নাচাইব, আর ধিক্কার দিবার বেলায় ঐ বাহিরের শিকলটাই আছে ? আমাদের পাপ আছে বলিয়াই শাস্তি আছে । যত লড়াই ঐ শাস্তির সঙ্গে ? অার, যত মমতা ঐ পাপের প্রতি ? তবে কি এই কথাই সত্য ষে আমাদের কোথাও পাপ নাই, আমরা বিধাতার অন্তায় বহন করিতেছি ? যদি তাহা সত্য না হয়, যদি পাপ থাকে, তবে সে পাপের বেদনা আমাদের সাহিত্যে কোথায় প্রকাশ পাইতেছে ? আমরা কেবলই আপনাকে ভুলাইতে চেষ্টা করিতেছি যে, সমস্ত অপরাধ বাহিরের দিকেই। আপনার মধ্যে যেখানে সকলের চেয়ে বড়ো শত্রু অাছে, যেখানে সকলের চেয়ে ভীষণ লড়াই প্রতীক্ষা করিতেছে, সেদিকে কেবলই আমরা মিথ্যার আড়াল দিয়া আপনাকে বঁাচাইবার চেষ্টা করিতেছি । কিন্তু আমি আপনাকে বলিতেছি, আমার পক্ষে প্রতিদিন ইহা অসহ্য হইয়া উঠিয়াছে। আমাদের সমস্ত-দেশ-ব্যাপী এই বন্দীশালাকে একদিন আমিও নানা মিষ্ট নাম দিয়া ভালোবাসিতে চেষ্টা করিয়াছি ; কিন্তু তাহাতে অন্তরাত্মা তৃপ্তি পায় নাই— এই পাষাণ-প্রাচীরের চারি দিকেই তাহার মাথ৷