পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বিক্রম। এই উদ্যানে ? এখানে আজ ঋতুরাজের অধিকার। অন্তত আজ একদিনের জন্যেও সম্পূর্ণ করে তাকে স্বীকার করে । সুমিত্ৰা । আমি তো তোমার আদেশ পালনে ত্রুটি করি নি- উৎসব যাতে সুন্দর হয় আমি তো সেই আয়োজন করেছি। কিন্তু তোমারও কিছু করবার নেই কি ? উৎসব যাতে মহৎ হয়ে ওঠে তুমি তাই করো, তোমার রাজমহিমা দিয়ে । বিক্ৰম । বলো, আমার কী করবার আছে । সুমিত্ৰা । কাশ্মীর থেকে যে-সব লুদ্ধের দল তোমার সঙ্গে জালন্ধরে এসেছে, আজই সেই পরোপজীবীদের আদেশ করো কাশ্মীরে ফিরে যাক । বিক্ৰম । আমার এই বিদেশী অমাত্যদের পরে তোমার মনে ক্ৰোধ আছে। সুমিত্ৰা । তা আছে । বিক্ৰম । কাশ্মীরবিজয়ে ওরা আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল এই তার কারণ । সুমিত্ৰা । ই মহারাজ, আমি জানি, বিশ্বাসঘাতকের শক্ৰতা ভালো, তাদের মৈত্রী অম্পশ্য। বিক্ৰম । ওদের ধর্ম ওরা বুঝবে কিন্তু আমি কৃতায় হব। কী করে । সুমিত্ৰা । তোমার সপক্ষে ওরা পাপ করেছে, ক্ষমা করতে হয় কোরো, কিন্তু তোমার বিপক্ষে অন্যায় করছে তাও কি ক্ষমা করতে হবে । তোমার ক্ষমার আশ্রয়ে প্রজাদের প্রতি পীড়ন হচ্ছে, তাতেও বাধা দেবে না ? বিক্ৰম । মিথ্যা অপবাদ সৃষ্টি করছে প্ৰজারা, তাদের ঈর্ষা ওরা বিদেশী বলে। সুমিত্ৰা । তারও বিচার চাই । বিক্ৰম । এ-সব ব্যাপারে তুমি যখন হস্তক্ষেপ কর, মহারানী, তখন সুবিচার কঠিন হয় । তুমি স্বয়ং আন অভিযোগ, কোনো প্রমাণকে আমি কি তার উপরে আসন দিতে পারি। তুমি অনুরোধ করাতে যুধ্যজিৎকে বিনা বিচারেই পদচ্যুত করতে হল। আরো অমাতা-বলি চাই তোমার ? সুমিত্ৰা । তবে সেই ভালো । বিচার কোরো না । আমারই প্রার্থনা রাখো । কাশ্মীরের পঙ্গাপালগুলো যদি কোনো অপরাধ না করেও থাকে। তবু ওরা আমার রাত্ৰিদিনের লজ্জা । আমাকে তার থেকে *Tble বিক্ৰম । ওরা কলঙ্ক স্বীকার করে বিপদ সামনে রেখে আমার পাশে দাড়িয়েছিল। তোমার কথাতেও ওদের ত্যাগ করতে পারব না । দেখো প্ৰিয়ে, রাজার হৃদয়েই তোমার অধিকার, রাজার কর্তব্যে নয়। এই কথা মনে রেখো । সুমিত্ৰা । মহারাজ, তোমার বিলাসে আমি সঙ্গিনী, তোমার রাজধর্মে আমি কেউ নই। এ কথা মনে রেখে আমার সুখ নেই। বিক্ৰম । শুনে যাও মহিষী । সুমিত্ৰা । (ফিরে এসে) কী, বলে । বিক্রম। তুমি জাগছ না কেন । কিসের এই সূক্ষ্মী আবরণ। সমস্ত আমার রাজার শক্তি নিয়ে একে সরাতে পারলেম না। আপনাকে প্রকাশ করে- দেখা দাও, ধরা দাও । আমাকে এই অত্যন্ত অদৃশ্য বঞ্চনায় বিড়ম্বিত কোরো না । সুমিত্ৰা । আমিও তোমাকে ঐ কথাই বলছি। তুমি রাজা, আমি তোমার সম্পূর্ণ প্ৰকাশ দেখতে পাচ্ছি নে- তোমার শক্তিকে অন্ধকারে ঢেকে রাখলে । তুমি জাগ নি । তুমি আমাকে কেড়ে নিয়ে এসেছি কাশ্মীর থেকে- সেই অপমান আমার ঘুচিয়ে দাও- আমাকে রানীর পদ দিতে হবে । বিক্ৰম । আচ্ছা আচ্ছা, আমার রাজকোষ তোমার পায়ের তলায় সম্পূৰ্ণ ফেলে দিচ্ছি- তুমি প্রজাদের দান করতে চাও, করো দান যত খুশি । তোমার দাক্ষিণ্যের প্লাবন বয়ে যাক এ রাজ্যে । সুমিত্ৰা । ক্ষমা করো মহারাজ, তোমার কোব তোমারই থাক। আমার দেহের অলংকার থাক [ প্ৰস্থান