পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rðo রবীন্দ্র-রচনাবলী ২ নাগরিক। দাদা, আমাদের সঙ্গে পুণ্যাত্মাদের তফাতটা এই যে, গুনতিতে তারা একটা-দুটো আমরা অনেক । যদি ভরসা করে সেই অনেকে মিলে টান দিতে পারি রথ চলবেই। মিলতে পারলেম না বলে টানতে পারলেম না, পুণ্যাত্মাদের জন্যে শূন্যের দিকে তাকিয়ে রইলেম । ৪ নাগরিক। ওরে ভাই, দড়িটা মনে হল যেন নড়ে উঠল, কথাবার্তা সামলে বলিস রে । ১ নাগরিক। শাস্ত্ৰে আছে ব্ৰাহ্মমুহুর্তে রথের প্রথম টানটা পুরোহিতের হাতে, দ্বিতীয় প্রহরে দ্বিতীয় টানটা রাজার- সেও তো হয়ে গেল, রথ এগোল না- এখন তৃতীয় টানটা কার হাতে পড়বে। সৈন্যদলের প্রবেশ ১ সৈন্য । বড়ো লজা দিলে রে ! স্বয়ং রাজা হাত লাগালে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা হাজার জনে ধরে টান দিলুম, চাকার একটু কঁ্যাচার্কোচ শব্দও হল না। ২ সৈন্য । আমরা ক্ষত্রিয়, আমরা তো শূদ্রের মতো গোরু নাই- রথ টানা আমাদের কাজ নয়, আমাদের কাজ রথে চড়া । ২ সৈনিক । কিংবা রথ ভাঙা । ইচ্ছে করছে কুড়ালখানা নিয়ে রথটািকে টুকরো টুকরো করে ফেলি। দেখি মহাকাল কেমন ঠেকাতে পারেন । ১ নাগরিক। দাদা, তোমাদের অন্ত্রের জোরে রথ চলবেও না, রথ ভাঙবেও না । গণৎকার কী গুনে বলেছে তা শোন নি বুঝি ? ১ সৈনিক । কী বল তো । ১ নাগরিক । ত্রেতাযুগে একবার যে কাণ্ড ঘটেছিল, এখন তাই ঘটবে। ১ সৈনিক । আরে, ব্ৰেতাযুগে তো লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছিল । ১ নাগরিক । সে নয়, সে নয় । ২ সৈনিক । কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ? ১ নাগরিক। তারই কাছাকাছি । সেই- যে শূদ্র তপস্যা করতে গিয়েছিল, মহাকাল তাতেই তো সেদিন ক্ষেপে উঠেছিলেন । তার পর রামচন্দ্ৰ শূদ্রের মাথা কেটে তবে বাবাকে শান্ত করেছিলেন । ৩ সৈনিক । আজ তো সে ভয় নেই, আজ ব্ৰাহ্মণই তপস্যা ছেড়ে দিয়েছে, শূদ্রের তো কথাই নেই । ১ নাগরিক । এখনকার শূদ্রেরা কেউ কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে শাস্ত্র পড়তে আরম্ভ করেছে। ধরা পড়লে বলে, আমরা কি মানুষ নই। স্বয়ং কলিযুগ শূদ্রের কানে মন্ত্র দিতে বসেছে যে তারা মানুষ । রথ যে চলে না। তাতে মহাকালের দোষ কী- না চললেই ভালো। যদি চলতে শুরু করে তা হলে চন্দ্ৰসূৰ্য গুড়িয়ে ফেলবে । শূদ্র চোখ রাঙিয়ে বলে কিনা ‘আমরা কি মানুষ নাই ! কালে কালে কতই শুনব ! ১ সৈনিক । আজ শূদ্র পড়ছে শাস্ত্ৰ, কাল ব্ৰাহ্মণ ধরবে লাঙল ! সর্বনাশ ! ২ সৈনিক । তা হলে চল, ওদের পাড়ায় গিয়ে একবার কযে হাত চালানো যাক । ওরা মানুষ না আমরা মানুষ, প্রত্যক্ষ দেখিয়ে দিই । ২ নাগরিক। রাজাকে কে গিয়ে বলেছে, কলিযুগে শাস্ত্ৰও চলে না, অস্ত্ৰও চলে না, একমাত্র চলে স্বর্ণমুদ্রা। রাজা তাই আমাদের ধনপতি শেঠজিকে তলব করেছেন। ধনপতি টান দিলেই রথ চলবে এইরকম সকলের বিশ্বাস । ১ সৈনিক । বেনের টানে যদি রথ চলে তা হলে আমরা অন্ত্র গলায় বেঁধে জলে ডুবে মরব। ২ সৈনিক । তা, রাগ করলে চলবে কেন । বেনের টান আজকাল সব জায়গাতেই লেগেছে । এমন-কি, পুষ্পধনুর ছিলেটা বেনের টানেই চঞ্চল হয়ে ওঠে । তার তীরগুলো বোেনর ঘরেই তৈরি । ৩ সৈনিক । তা সত্যি, আজকাল আমাদের রাজত্বে রাজা থাকেন সামনে, কিন্তু পিছনে থাকে (Kr |