পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5国@瓦 VS মনোভাব-সকল নির্দিষ্ট বিশেষত্ব প্ৰাপ্ত হয় নাই । বড়ো বড়ো সাধারণ ভাবের কথা আছে, কিন্তু তাহা বাষ্পপাবৎ অনিশ্চিত, লেখকের অন্তরের মধ্যে আকার ও জীবন প্ৰাপ্ত হইয়া তাহা সুজিত হইয়া উঠে | বৃশ্চিকের পুচ্ছদেশেই হুল থাকে, বামাচরণবাবুর সমালোচনার উপসংহারেই তীব্রতম বিষ সঞ্চিত ছিল । আসন গ্ৰহণ করিবার পূর্বে তিনি বলিলেন, আমার এই নাটকের অনেকগুলি দৃশ্য এবং মূলভাবটি গেটে-রচিত টাসো নাটকের অনুকরণ, এমন-কি অনেকস্থলে অনুবাদ । এ কথার সদুত্তর ছিল। আমি বলিতে পারিতাম, হউক অনুকরণ, কিন্তু সেটা নিন্দার বিষয় নহে! সাহিত্যরাজ্যে চুরিবিদ্যা বড়ো বিদ্যা, এমন-কি, ধরা পড়িলেও । সাহিত্যের বড়ো বড়ো মহাজনগণ এই কাজ করিয়া আসিয়াছেন, এমন-কি, সেক্সপিয়রও বাদ যান না । সাহিত্যে যাহার অরিজিন্ন্যালিটি অত্যন্ত অধিক সেই চুরি করিতে সাহস করে, কারণ, সে পরের জিনিসকে সম্পূৰ্ণ আপনার করিতে পারে । ভালো ভালো এইরূপ আরো অনেক কথা ছিল, কিন্তু সেদিন বলা হয় নাই । বিনয় তাহার কারণ নহে । আসল কথা, সেদিন একটি কথাও মনে পড়ে নাই । প্ৰায় পাঁচ-সাতদিন পরে একে একে উত্তরগুলি দৈবাগত ব্ৰহ্মান্ত্রের ন্যায় আমার মনে উদয় হইতে লাগিল ; কিন্তু শত্রুপক্ষ সম্মুখে উপস্থিত না থাকাতে সে অস্ত্রগুলি আমাকেই বিধিয়া মারিল । ভাবিতম, এ কথাগুলো অন্তত আমার ক্লাসের ছাত্ৰাদিগকে শুনাইয়া দিব । কিন্তু উত্তরগুলি আমার সহাধ্যায়ী গর্দভদিগের বুদ্ধির পক্ষে কিছু অতিমাত্র সূক্ষ্ম ছিল ! তাহারা জানিত, চুরিমাত্রেই চুরি ; আমার চুরি এবং অন্যের চুরিতে যে কতটা প্ৰভেদ আছে তাহা বুঝিবার সামর্থ্য যদি তাঁহাদের থাকিত তবে আমার সহিতও তাঁহাদের বিশেষ প্ৰভেদ থাকিত না । বি. এ. পরীক্ষা দিলাম, পরীক্ষায় উত্তীৰ্ণ হইতে পারিব তাহাতেও আমার সন্দেহ ছিল না ; কিন্তু মনে আনন্দ রহিল না । বামাচরণের সেই গুটিকতক কথার আঘাতে আমার সমস্ত খ্যাতি ও আশার অভ্ৰভেদী মন্দির ভগ্নস্তৃপ হইয়া পড়িল। কেবল আমার প্রতি অবোধ অমূল্যের শ্রদ্ধা কিছুতেই হ্রাস হইল না ; প্ৰভাতে যখন যশঃসূৰ্য আমার সম্মুখে উদিত ছিল তখনো সেই শ্রদ্ধা অতি দীর্ঘ ছায়ার ন্যায় আমার পদতললগ্ন হইয়া ছিল, আবার সায়াহ্নে যখন আমার যশঃ সূর্য পশ্চাতে অস্তোন্মুখ হইল। তখনো সেই শ্রদ্ধা দীর্ঘািয়তন বিস্তার করিয়া আমার পদপ্রান্ত পরিত্যাগ করিল না । কিন্তু এ শ্ৰদ্ধায় কোনো পরিতৃপ্তি নাই, ইহা শূন্য ছায়ামাত্র, ইহা মূঢ় ভক্তহৃদয়ের মোহান্ধকার, ইহা বুদ্ধির উজ্জ্বল রশ্মিপাত ୩୦୧ । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ বাবা বিবাহ দিবার জন্য আমাকে দেশ হইতে ডাকিয়া পাঠাইলেন । আমি কিছুদিন সময় লইলাম । বামাচরণবাবুর সমালোচনায় আমার নিজের মধ্যে একটা আত্মবিরোধ, নিজের প্রতি নিজের একটা বিদ্রোহভাব জন্মিয়াছিল । আমার সমালোচক অংশ আমার লেখক অংশকে গোপনে আঘাত দিতেছিল । আমার লেখক অংশ বলিতেছিল, আমি ইহার প্রতিশোধ লইব ; আবার একবার লিখিব এবং তখন দেখিব, আমি বড়ো না। আমার সমালোচক বড়ো । মনে মনে স্থির করিলাম, বিশ্বপ্ৰেম, পরের জন্য আত্মবিসর্জন এবং শক্রকে মার্জনা- এই ভাবটি অবলম্বন করিয়া গদ্যে হউক পদ্যে হউক, খুব সাব্লাইম-গোছের একটা-কিছু লিখিব ; বাঙালি সমালোচকদিগকে সুবৃহৎ সমালোচনার খোরাক জোগাইব । স্থির করিলাম, একটি সুন্দর নির্জন স্থানে বসিয়া আমার জীবনের এই সর্বপ্রধান কীর্তিটির সৃষ্টিকার্য সমাধা করিব। প্রতিজ্ঞা করিলাম, অন্তত একমাসকাল বন্ধুবান্ধব পরিচিত-অপরিচিত কাহারও সহিত नांक९ कवि ना । অমূল্যকে ডাকিয়া আমার প্ল্যান বলিলাম। সে একেবারে স্তম্ভিত হইয়া গেল, সে যেন তখনই আমার ললাটে স্বদেশের অনতিদূরবতী ভাবী মহিমার প্রথম অরুণ-জ্যোতি দেখিতে পাইল । গভীর