পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VOGO রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বামী জিজ্ঞাসা করিতেন, কেমন বোধ হইতেছে । আমি বলিতাম, অনেকটা ভালো । আমি মনে করিতেও চেষ্টা করিতাম যে, ভালেই হইতেছে । যখন বেশি জল পড়িতে থাকিত তখন ভাবিতাম জল কাটিয়া যাওয়াই ভালো লক্ষণ ; যখন জল পড়া বন্ধ হইত। তখন ভাবিতাম, এই তো আরোগ্য হইবার পথে দাড়াইয়াছি। কিন্তু কিছুকাল পরে যন্ত্রণা অসহ্য হইয়া উঠিল। চোখে ঝাপসা দেখিতে লাগিলাম এবং মাথার বেদনায় আমাকে স্থির থাকিতে দিল না । দেখিলাম, আমার স্বামীও যেন কিছু অপ্রতিভ হইয়াছেন । এতদিন পরে কী ছুতা করিয়া যে ডাক্তার ডাকিবেন, ভাবিয়া পাইতেছেন না। আমি তাহাকে বলিলাম, “দাদার মন রক্ষার জন্য একবার একজন ডাক্তার ডাকিতে দোষ কী । এই লইয়া তিনি অনর্থক রাগ করিতেছেন, ইহাতে আমার মনে কষ্ট হয়। চিকিৎসা তো তুমিই করিবে, ডাক্তার একজন উপসর্গ থাকা ভালো ।” স্বামী কহিলেন, “ঠিক বলিয়াছ।” এই বলিয়া সেইদিনই এক ইংরাজ ডাক্তার লইয়া হাজির করিলেন। কী কথা হইল জানি না। কিন্তু মনে হইল, যেন সাহেব আমার স্বামীকে কিছু ভৎসনা করিলেন ; তিনি নতশিরে নিরুত্তরে দাড়াইয়া রহিলেন । ডাক্তার চলিয়া গেলে আমি আমার স্বামীর হাত ধরিয়া বলিলাম, “কোথা হইতে একটা গোয়ার গোরা-গর্দভ ধরিয়া আনিয়াছ, একজন দেশী ডাক্তার আনিলেই হইত। আমার চোখের রোগ ও কি তোমার চেয়ে ভালো বুঝিবে ।” স্বামী কিছু কুষ্ঠিত হইয়া বলিলেন, “চোখে অন্ত্র করা আবশ্যক হইয়াছে।” আমি একটু রাগের ভান করিয়া কহিলাম, “অস্ত্ৰ করিতে হইবে, সে তো তুমি জানিতে কিন্তু প্ৰথম হইতেই সে কথা আমার কাছে গোপন করিয়া গেছ । তুমি কি মনে কর, আমি ভয় করি ।” স্বামীর লজ্জা দূর হইল ; তিনি বলিলেন, “চোখে অস্ত্ৰ করিতে হইবে শুনিলে ভয় না করে, পুরুষের মধ্যে এমন বীর কয়জন আছে।” : আমি ঠাট্টা করিয়া বলিলাম, “পুরুষের বীরত্ব কেবল স্ত্রীর কাছে।” স্বামী তৎক্ষণাৎ স্নান গভীর হইয়া কহিলেন, “সে কথা ঠিক । পুরুষের কেবল অহংকার সার ।” আমি তাহার গান্তীর্য উড়াইয়া দিয়া কহিলাম, “অহংকারেও বুঝি তোমরা মেয়েদের সঙ্গে পাের ? তাহাতেও আমাদের জিত ।” ইতিমধ্যে দাদা আসিলে আমি দাদাকে বিরলে ডাকিয়া বলিলাম, “দাদা, আপনার সেই ডাক্তারের ব্যবস্থামত চলিয়া এতদিন আমার চোখ বেশ ভালেই হইতেছিল, একদিন ভ্ৰমক্রমে খাইবার ওষুধটা চক্ষে লেপন করিয়া তাহার পর হইতে চোখ যায়-যায় হইয়া উঠিয়াছে । আমার স্বামী বলিতেছেন, চোখে অস্ত্ৰ করিতে হইবে ।” দাদা বলিলেন, “আমি ভাবিতেছিলাম, তোর স্বামীর চিকিৎসাই চলিতেছে, তাই আরো আমি রাগ कक्रिग्रा ७ाउन्ाि यामि नाष्ट्रि ।” আমি বলিলাম, “না, আমি গোপনে সেই ডাক্তারের ব্যবস্থামতই চলিতেছিলাম, স্বামীকে জানাই নাই, পাছে তিনি রাগ ‘ করেন ।” শ্ৰীজন্ম গ্ৰহণ করিলে এত মিথ্যাও বলিতে হয় ! দাদার মনেও কষ্ট দিতে পারি না, স্বামীর যশও ক্ষুন্ন করা চলে না । মা হইয়া কোলের শিশুকে ভুলাইতে হয়, শ্ৰী হইয়া শিশুর ব্যাপকে ভুলাইতে হয়QGrig gvs gvajg Zigitroi ছলনার ফল হইল। এই যে, অন্ধ হইবার পূর্বে আমার দাদা এবং স্বামীর মিলন দেখিতে পাইলাম । দাদা ভাবিলেন, গোপনচিকিৎসা করিতে গিয়া এই দুর্ঘটনা ঘটিল ; স্বামী ভাবিলেন, গোড়ায় আমার দাদার পরামর্শ শুনিলেই ভালো হইত। এই ভাবিয়া দুই অনুতপ্ত হৃদয় ভিতরে ভিতরে ক্ষমাপ্ৰাখী হইয়া পরস্পরের অত্যন্ত নিকটবতী হইল । স্বামী দাদার পরামর্শ লাইতে লাগিলেন, দাদাও বিনীতভাবে সকল বিষয়ে আমার স্বামীর মতের প্রতিই নির্ভর প্রকাশ করিলেন ।