পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S9\ኃbr রবীন্দ্র-রচনাবলী ফিরিয়া দেখি তখনো লোকটা একেবারে অভিভূতের মতো বসিয়া আছে । কথা জিজ্ঞাসা করিলে উত্তর দিতে পারে না, মুখের দিকে তাকাইয়া থাকে । এখন তাহার কাছে, এই নদী, ঐ গ্রাম, ঐ থানা, এই মেঘাচ্ছন্ন আদ্ৰ পঙ্কিল পৃথিবীটা স্বপ্নের মতো । বারংবার প্রশ্নের দ্বারা জানিলাম, একবার একজন কনস্টেবল আসিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, ট্যাকে কিছু আছে কি না । সে উত্তর করিয়াছিল, সে নিতান্তই গরিব, তাহার কিছু নাই । কনস্টেবল বলিয়া গেছে, “থাক বেটা, তবে এখন বসিয়া থাক ।” এমন দৃশ্য পূর্বেও অনেকবার দেখিয়াছি, কখনো কিছুই মনে হয় নাই । আজ কোনোমতেই সহ্য করিতে পারিলাম না । আমার শশীর করুণা-গদগদ অব্যক্ত কণ্ঠ সমস্ত বাদলার আকাশ জুড়িয়া বাজিয়া উঠিল । ঐ কন্যাহারা বাক্যহীন চাষার অপরিমেয় দুঃখ আমার বুকের পাজারগুলাকে যেন ঠেলিয়া ऐeठिहुङ व्लाोिव्न । দারোগাবাবু বেতের মোড়ায় বসিয়া আরামে গুড়গুড়ি টানিতেছিলেন । তাহার কন্যাদায়গ্ৰস্ত আত্মীয় মেসোটি আমার প্রতি লক্ষ করিয়াই সম্প্রতি দেশ হইতে আসিয়াছেন ; তিনি মাদুরের উপর বসিয়া গল্প করিতেছিলেন । আমি একদমে ঝড়ের বেগে সেখানে উপস্থিত হইলাম । চীৎকার করিয়া বলিলাম, “আপনারা মানুষ না পিশাচ ?” বলিয়া আমার সমস্ত দিনের উপার্জনের টাকা ঝনাৎ করিয়া তাহার সম্মুখে ফেলিয়া দিয়া কহিলাম, “টাকা চান তো এই নিন, যখন মরিবেন সঙ্গে লইয়া যাইবেন ; এখন এই লোকটাকে ছুটি দিন, ও কন্যার সৎকার করিয়া আসুক ।” বহু উৎপীডিতের অশ্রুসেচনে দারোগার সহিত ডাক্তারের যে প্ৰণয় বাডিয়া উঠিয়াছিল তাহা এই ঝডে ভূমিসাৎ হইয়া গেল । অনতিকাল পরে দারোগার পায়ে ধরিয়াছি, তাহার মহদাশয়তার উল্লেখ করিয়া অনেক স্তুতি এবং নিজের বুদ্ধিভ্রংশ লইয়া অনেক আত্মধিককার প্রয়োগ করিয়াছি, কিন্তু শেষটা ভিটা ছাড়িতে হইল । 5リ > ○○" ফেল ল্যাজা এবং মুড়া, রাহু এবং কেতু, পরস্পরের সঙ্গে আড়াআড়ি করিলে যেমন দেখিতে হইত এও ঠিক সেইরকম । প্রাচীন হালদার বংশ দুই খণ্ডে পৃথক হইয়া প্ৰকাণ্ড বসত-বাড়ির মাঝখানে এক ভিত্তি তুলিয়া পরস্পর পিঠা পিঠি করিয়া বসিয়া আছে ; কেহ কাহারও মুখদর্শন করে না । নবগোপালের ছেলে নলিন এবং ননীগোপালের ছেলে নন্দ একবংশজাত, একবয়সি, এক ইস্কুলে যায় এবং পারিবারিক বিদ্বেষ ও রেষারেষিতেও উভয়ের মধ্যে সম্পূৰ্ণ ঐক্য । নলিনের বাপ নবগোপাল অত্যন্ত কড়া লোক । ছেলেকে ইপি ছাড়িতে দিতেন না, পড়াশুনা ছাড়া আর কথা ছিল না । খেলা খাদ্য ও সাজসজ্জা সম্বন্ধে ছেলের সর্বপ্রকার শখ তিনি খাতপত্র ও ইস্কুল-বইয়ের নীচে চাপিয়া রাখিয়াছিলেন । নন্দর বাপ ননীগোপালের শাসনপ্রণালী অত্যন্ত শিথিল ছিল । মা তাহাকে অত্যন্ত ফিটফাট করিয়া সাজাইয়া ইস্কুলে পাঠাইতেন, আনা-তিনেক জলপানিও সঙ্গে দিতেন ; নন্দ ভাজা মসলা ও কুলপির বরফ, লাঠিম ও মার্কলগুলিকা ইচ্ছামত ভোগবিতরণের দ্বারা যশস্বী হইয়া উঠিয়াছিল । মনে মনে পরাভব অনুভব করিয়া নলিন কেবলই ভাবিত, নন্দর বাবা যদি আমার বাবা হইত এবং আমার বাবা যদি নন্দর পিতৃস্থান অধিকার করিত, তাহা হইলে নন্দকে মজা দেখাইয়া দিতাম । কিন্তু, সেরূপ সুযোগ ঘটিবার পূর্বে ইতিমধ্যে নন্দ বৎসরে বৎসরে প্রাইজ পাইতে লাগিল ; নলিন রিক্তহস্তে বাড়ি আসিয়া ইস্কুলের কর্তৃপক্ষদের নামে পক্ষপাতের অপবাদ দিতে লাগিল । বাপ তাহাকে