পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

✓©ዔ O রবীন্দ্র-রচনাবলী ইহার চেয়ে একটু যেন বেশি ফ্যাকাশে, ইহার গৌরবর্ণে একটু যেন হলদে আভায় সোনা মিশাইয়াছে। ইহাকে তো হাতছাড়া করা যায় না । নলিন বিমৰ্ষভাবে চিত হইয়া গুড়গুড়ি টানিতে টানিতে কহিল, “ওহে হাজরা, কী করা যায় বলে। তো ।” স্বাক্ষর বলল, “মহাৰাজ, শঙ্কটা কী ? বলিয়া পুলক অন্তত অৰ্থনীতে কাল্পনিক টাকা বাঙ্গাইয় টাকাটা যখন সত্যই সশব্দে বাজিয়া উঠিল তখন যথোচিত ফল হইতে বিলম্ব হইল না । কন্যার পিতা একটা অকারণ ছুতা করিয়া বরের পিতার সহিত তুমুল ঝগড়া বাধাইলেন । বরের পিতা বলিলেন, “তোমার কনার সহিত আমার পুত্রের যদি বিবাহ দিই। তবে-” ইত্যাদি ইত্যাদি । কনার পিতা আরো একগুণ অধিক কবিয়া বলিলেন, “তোমার পুত্রের সহিত আমার কন্যার যদি বিবাহ দিই। তবে” ইত্যাদি ইত্যাদি । অতঃপর আর বিলম্ব মাত্র না করিয়া নলিন নন্দকে ফাকি দিয়া শুভলগ্নে শুভবিবাহ সত্বর সম্পন্ন কবিয়া ফেলিল । এবং হাসিতে হাসিতে হাজরাকে বলিল, “বি. এ. পাস করা তো একেই বলে । কী বলে হে হাজরা । এবারে আমাদের ও বাড়ির বড়োবাবু ফেল।” অনতিকাল পরেই ননীগোপালের বাড়িতে একদিন ঢাক ঢোল সানাই বাজিয়া উঠিল । নন্দর গায়ে হলুদ । নলিন কহিল, “ওহে হাজরা, খবর লও তো পাত্রীটি কে ৷” হাজরা আসিয়া খবর দিল, পাত্রীটি সেই রাওলপিণ্ডির মেয়ে । রাওলপিণ্ডির মেয়ে ! হাঃ হাঃ হাঃ ! নলিন অত্যন্ত হাসিতে লাগিল । ও বাড়ির বড়োবাবু আর কন্যা পাইলেন না, আমাদেরই পরিত্যক্ত পাত্রীটিকে বিবাহ করিতেছেন । হাজরাও বিস্তর হাসিল । কিন্তু, উত্তরোত্তর নলিনের হাসির আর জোর রহিল না । তাহার হাসির মধ্যে কীট প্রবেশ করিল। একটি ক্ষুদ্র সংশয় তীক্ষ স্বরে কানে কানে বলিতে লাগিল, “আহা, হাতছাড়া হইয়া গেল। শেষকালে নন্দর কপালে জুটিল ( ক্ষুদ্র সংশয় ক্রমশই রক্তস্ফীত জোকের মতো বড়ো হইয়া উঠিল, তাহার কণ্ঠস্বরও মোটা হইল । সে বলিল, “এখন আর কোনোমতেই ইহাকে পাওয়া যাইবে না, কিন্তু আসলে ইহাকেই দেখিতে ভালো | ভারি ঠকিয়াছ ।” অন্তঃপুরে নলিন যখন খাইতে গেল তখন তাহার স্ত্রীর ছোটােখাটাে সমস্ত খুঁত মস্ত হইয়া তাহাকে উপহাস করিতে লাগিল । মনে হইতে লাগিল, স্ত্রীটা তাহাকে ভয়ানক ঠকাইয়াছে । রাওলপিণ্ডিতে যখন সম্বন্ধ হইতেছিল, তখন নলিন সেই কন্যার যে ফোটো পাইয়াছিল, সেইখানি বাহির করিয়া দেখিতে লাগিল। “বাহবা, অপরূপ রূপমাধুরী । এমন লক্ষ্মীকে হাতে পাইয়া ঠেলিয়াছি, আমি এত বড়ো গাধা ।” বিবাহসন্ধ্যায় আলো জ্বালাইয়া বাজনা বাজাইয়া জুড়িতে চড়িয়া বর বাহির হইল । নলিন শুইয়া পড়িয়া গুড়গুড়ি হইতে যৎসামান্য সাস্তুনা আকর্ষণের নিম্ফল চেষ্টা করিতেছে এমন সময় হাজরা প্ৰসন্নবদনে হাসিতে হাসিতে আসিয়া নন্দকে লক্ষ্য করিয়া পরিহাস জমাইবার উপক্ৰম করিল। নলিন হাকিল, “দরোয়ান !” বাবু হাজরাকে দেখাইয়া দিয়া কহিল, “অবহি ইস্কো কান পাকড়কে বাহার নিকাল দো ।” ठशिन् ७७०१