পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

New &)ፄ (ሉ পাত্রের দল একদিন আসিয়া মেয়েটিকে পছন্দ করিয়া গীরের ছাচ, মারিকেলের মিষ্টান্ন ও নাটোরের কাচাগোল্লা খাইয়া গেল। বিভূতি তাহার অনতিকাল পরে আসিয়া খবর শুনিলেন । যজ্ঞেশ্বর মনের আনন্দে তাহাকেও কঁাচাগোল্লা খাওয়াইতে উদ্যত হইলেন । কিন্তু ক্ষুধার অত্যন্ত অভাব জানাইয়া বিভূতি কিছু খাইল না। কাহারও সহিত ভালো করিয়া কথাই কহিল না, বাড়ি চলিয়া গেল । সেইদিনই সন্ধ্যাবেলায় উকিলবাবু বিভূতির কাছ হইতে এক পত্র পাইলেন । মর্মটা এই, যজ্ঞেশ্বরের কন্যাকে তাহার বড়ো পছন্দ এবং তাহাকে সে বিবাহ করিতে উৎসুক । উকিল ভাবিলেন, “এ তো বিষম মুশকিলে পড়িলাম। গীেরসুন্দরবাবু ভাবিবেন, আমিই আমার আত্মীয় কন্যার সহিত তাহার ছেলের বিবাহের চক্রান্ত করিতেছি ।” অত্যন্ত ব্যস্ত হইয়া তিনি যজ্ঞেশ্বরকে দেশে পাঠাইলেন, এবং পূৰ্যেক্ত পাত্রটির সহিত বিবাহের দিন যথাসম্ভব নিকটবতী করিয়া দিলেন । বিভূতিকে ডাকিয়া অভিভাবক মহাশয় পড়াশুনা ছাড়া আর-কোনো দিকে মন দিতে বিশেষ করিয়া নিষেধ করিলেন । শুনিয়া রাগে বিভূতির জেদ চার গুণ বাড়িয়া গেল । বিবাহের আয়োজন উদ্যোগ চলিতেছে এমন সময় একদিন যজ্ঞেশ্বরের খোড়ো ঘরে বিভূতিভূষণ স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত । যজ্ঞেশ্বর ব্যন্ত হইয়া কহিলেন, “এসো বাবা, এসো।” কিন্তু, কোথায় বসাইবেন, কী খাওয়াইবেন, কিছুই ভাবিয়া পাইলেন না । এখানে নাটােরের কাচাগোল্লা কোথায় ! বিভূতিভূষণ যখন স্নানের পূর্বে রোয়াকে বসিয়া তেল মাখিতেছেন তখন জ্যাঠাইমা তাহার রাজতগিরিনিভ, গীের পুট দেহটি দেখিয়া মুগ্ধ হইলেন । যজ্ঞেশ্বরকে ডাকিয়া কহিলেন, “এই ছেলেটির সঙ্গে আমাদের কমলের বিবাহ হয় না কি ?” তীব্রু যজ্ঞেশ্বর বিস্ফারিত নেত্ৰে কহিলেন, “সে কি হয় ?” জ্যাঠাইমা কহিলেন, “কোন হইবে না । চেষ্টা করিলেই হয় ।” এই বলিয়া তিনি বাথানপাড়ার গোয়ালাদের ঘর হইতে ভালো ছানা ও দীর আনাইয়া বিবিধ আকার ও আয়তনের মোদক –নির্মাণে প্ৰবৃত্ত হইলেন । স্নানাহারের পর বিভূতিভূষণ সলজে সসংকোচে নিজের বিবাহের প্রস্তাব উত্থাপন করিলেন । যজ্ঞেশ্বর আনন্দে ব্যাকুৰন্ত হইয়া জ্যাঠাইমাকে সুসংবাদ দিলেন । জ্যাঠাইমা শান্ত মুখে কহিলেন, “তা বেশ হয়েছে বাপু, কিন্তু তুমি একটু ঠাণ্ডা হও ।” তাহার পক্ষে এটা কিছুই আশাতীত হয় নাই। যদি কমলার জন্য এক দিক হইতে কাবুলের আমীর ও অন্য দিক হইতে চীনের সম্রাট তাহার দ্বারস্থ হইত। তিনি আশ্চর্য হইতেন না । ক্ষীণাশ্বাস যজ্ঞেশ্বর বিভূতিভূষণের হাত ধরিয়া বলিতে লাগিলেন, “দেখো বাবা, আমার সকল দিক Cयन् न न यः ।।' বিবাহের প্রস্তাব পাকা করিয়া বিভূতিভূষণ তাহার কাপের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন । গীেরসুন্দর নিজে নিরক্ষার ছিলেন বলিয়া শিক্ষিত ছেলেটিকে মনে মনে বিশেষ খাতির করিতেন । তাহার কোনো আচরণে বা মতে পাছে তাহার ছেলের কাছে সুশিক্ষা বা শিষ্টতার অভাব ধরা পড়ে এই সংকোচ তিনি দূর করিতে পারিতেন না। তাহার একমাত্র প্রাণাধিক পুত্ৰ যেন ব্যাপকে মনে মনে ধিককার না দেয়, যেন অশিক্ষিত বাপের জন্য তাহাকে লজিত না হইতে হয়; এ চেষ্টা তাহার সর্বদা ছিল। কিন্তু তবু যখন শুনিলেন, বিভূতি দরিদ্রকন্যাকে বিবাহ করিতে উদ্যত, তখন প্রথমটা রাগ প্রকাশ করিয়া উঠিলেন। বিভূতি নতশিরে চুপ করিয়া রহিল। তখন গীেরসুন্দর কিঞ্চিৎ শান্ত হইয়া নিজেকে সংশোধন করিয়া লইয়া কহিলেন, “আমি কি পণের লোভে তোমাকে বিবাহ করিতে বলিতেছি । তা মনে করিয়ো না । নিজের ছেলেকে লইয়া বেহাইয়ের সঙ্গে দরদভরা করিতে বসিব, আমি তেমন ছোটো লোক নই। কিন্ত বড়ো ঘরের মেয়ে চাই ।” বিভূতিভূষণ বুঝাইয়া দিলেন, যজেশ্বর সত্ৰান্তবংশীয়, সম্প্রতি গরিব হইয়াছেন। গীেরসুন্দর দায়ে পড়িয়া মত দিলেন। কিন্তু মনে মনে যজেশ্বরের প্রতি অত্যন্ত রাগ করিলেন । তখন দুই পক্ষে কথাবার্তা চলিতে লাগিল। আর সব ঠিক হইল। কিন্তু বিবাহ হইবে কোথায় তাহা