পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9. \Obry সৌন্দৰ্য আছে। কিন্তু বাড়িটাকে কেবল ছবির হিসাবে দেখিলে চলে না, তাহতে বাস করিতে হয়, অতএব আর্টিস্ট যাহাঁই বলুন, মেরামত আবশ্যক। বৈধব্য লইয়া তুমি তো দূর হইতে দিব্য কবিত্ব করিতে চাও, কিন্তু তাহার মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ মানবহৃদয় আপনার বিচিত্র বেদনা লইয়া বাস করিতেছে, সেটা স্মরণ রাখা কর্তব্য ।” মনে করিয়াছিলাম, নবীনামাধবকে কোনোমতেই দলে টানিতে পারিব না, সেদিন সেইজন্যই কিছু অতিরিক্ত উন্মর সহিত কথা কহিয়াছিলাম। কিন্তু হঠাৎ দেখিলাম, আমার বক্তৃতা-অবসানে নবীনামাধব একটিমাত্র গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া আমার সমন্ত কথা মানিয়া লইল ; বাকি আরো অনেক ভালো ভালো কথা বলিবার অবকাশই দিল না । সপ্তাহখানেক পরে নবীন আসিয়া কহিল, “তুমি যদি সাহায্য কর আমি একটি বিধবাবিবাহ করিতে প্ৰস্তুত আছি ।” এমনি খুশি হইলাম- নবীনকে বুকে টানিয়া কোলাকুলি করিলাম ; কহিলাম, “যত টাকা লাগে । আমি দিব ।” তখন নবীন তাহার ইতিহাস বলিল । বুঝিলাম, তাহার প্রিয়তমা কাল্পনিক নহে। কিছুকাল ধরিয়া একটি বিধবা নারীকে সে দূর হইতে ভালোবাসিত, কাহারও কাছে তাহা প্ৰকাশ করে নাই । যে মাসিক পত্রে নবীনের ওরফে আমার, কবিতা বাহির হইত। সেই পত্রগুলি যথাস্থানে গিয়া পীেহিত । কবিতাগুলি ব্যর্থ হয় নাই । বিনা সাক্ষাৎকারে চিত্ত আকর্ষণের এই এক উপায় আমার বন্ধু বাহির করিয়াছিলেন । কিন্তু নবীন বলেন, তিনি চক্রান্ত করিয়া এই-সকল কৌশল অবলম্বন করেন নাই ! এমন-কি, তাহার বিশ্বাস ছিল বিধবা পড়িতে জানেন না। বিধবার ভাইয়ের নামে কাগজগুলি বিনা স্বাক্ষরে বিনা মূল্যে পাঠাইয় দিতেন । এ কেবল মানকে সান্তনা দিবার একটা পাগলামি মাত্র । মনে হইত। দেবতার উদ্দেশে পুষ্পাঞ্জলি দান করা গেল, তিনি জানুন বা না জানুন, গ্ৰহণ করুন, বা নাই করুন । নানা ছুতায় বিধবার ভাইয়ের সহিত নবীন যে বন্ধুত্ব করিয়া লইয়াছিলেন, নবীন বলেন, তাহারও মধ্যে কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। যাহাকে ভালোবাসা যায় তাহার নিকটবতী আগ্ৰীয়ের সঙ্গ মধুর বোধ शयः । অবশেষে ভাইয়ের কঠিন পীড়া উপলক্ষে ভগিনীর সহিত কেমন করিয়া সাক্ষাৎ হয় সে সুদীর্ঘ কথা । কবির সহিত কবিতার অবলম্বিত বিষয়টির প্রত্যক্ষ পরিচয় হইয়া কবিতা সম্বন্ধে অনেক আলোচনা হইয়া গেছে । আলোচনা যে, কেবল ছাপানো কবিতা-কয়টির মধ্যেই বদ্ধ ছিল তাহাও নহে । । সম্প্রতি আমার সহিত তর্কে পরান্ত হইয়া নবীন সেই বিধবার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া বিবাহের প্রস্তাব করিয়া বসিয়াছে। প্রথমে কিছুতেই সন্মতি পায় নাই। নবীন তখন আমার মুখের সমস্ত যুক্তিগুলি প্রয়োগ করিয়া এবং তাহার সহিত নিজের চোখের দুই-চার ফোটা জল মিশাইয়া তাহাকে সম্পূর্ণ হার মানাইয়াছে। এখন বিধবার অভিভাবক। পিসে কিছু টাকা চায়। আমি বলিলাম, “এখনই লাও ।” নবীন বলিল, “তাহা ছাড়া বিবাহের পর প্রথম মাস পাঁচ-ছয় বাবা নিশ্চয় আমার মাসহরা বন্ধ করিয়া দিবেন, তখনকার মতো উভয়ের খরচ চালাইবার জোগাড় করিয়া দিতে হইবে।” আমি কথাটি না কহিয়া চেক লিখিয়া দিলাম । বলিলাম, “এখন তাহার নামটি বলে । আমার সঙ্গে যখন কোনো প্রতিযোগিতা নাই তখন পরিচয় দিতে ভয় করিয়ো না । তোমার গা ধুইয়া শপথ করিতেছি, আমি মৃত্যু নামে কবিতা লিখিব না, এবং যদি লৰি উত্তর ভাইকোন পামৰীয়া তােমার কাছে পাঠাইয় "ן নবীন কহিল, “আয়ে, সেজন্য আমি ভয় করি না । বিধবাবিবাহের লজায় তিনি অত্যন্ত কাতর, তাই তোমাদের কাছে তাহার সম্বন্ধে আলোচনা করিতে তিনি অনেক করিয়া নিষেধ করিয়া দিয়াছিলেন । কিন্তু এখন আর ঢাকিয়া রাখা মিথ্যা । তিনি তোমারই প্রতিবেশিনী, ১৯ নম্বরে शाकन ।।”