পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

TEN Obra মুহুর্তে চারুর মীেন ভাঙিয়া গিয়া সে বলিয়া উঠিত, “ঐ-যে তুমি লিখেছি! আমাকে ফাঁকি ! দেখাও ।” অমল বলিত, “এখনো শেষ হয় নি, আর-একটু লিখে শোনাব ।” চারু । না, এখনই শোনাতে হবে । অমল এখনই শোনাইবার জন্যই ব্যন্ত ; কিন্তু চারুকে কিছুক্ষণ কড়াকড়ি না করাইয়া সে শোনাইত না। তার পরে অমল কাগজখানি হাতে করিয়া বসিয়া প্রথমটা একটুখানি পাতা ঠিক করিয়া লইত, পেনসিল লইয়া দুই-এক জায়গায় দুটাে-একটা সংশোধন করিতে থাকিত, ততক্ষণ চারুর চিত্ত পুলকিত কৌতুহলে জলভারনত মেঘের মতো সেই কাগজ কয়খানির দিকে ঝুঁকিয়া রহিত । অমল দুই-চারি প্যারাগ্রাফ যখন যাহা লেখে তাহা যতটুকুই হােক চারুকে সদ্য সদ্য শোনাইতে হয় । বাকি অলিখিত অংশটুকু আলোচনা এবং কল্পনায় উভয়ের মধ্যে মথিত হইতে থাকে । এতদিন দুজনে আকাশকুসুমের চয়নে নিযুক্ত ছিল, এখন কাব্যকুসুমের চাষ আরম্ভ হইয়া উভয়ে আর-সমন্তই ভুলিয়া গেল । একদিন অপরান্ধুে অমল কলেজ হইতে ফিরিলে তাহার পকেটটা কিছু অতিরিক্ত ভরা বলিয়া বোধ হইল । অমল যখন বাড়িতে প্ৰবেশ করিল তখনই চারু অন্তঃপুরের গবাক্ষ হইতে তাহার পকেটের পূর্ণতার প্রতি লক্ষ করিয়াছিল। অমল অন্যদিন কলেজ হইতে ফিরিয়া বাড়ির ভিতরে আসিতে দেরি করিত না ; আজ সে তাহার ভরা পকেট লইয়া বাহিরের ঘরে প্রবেশ করিল, শীঘ্ৰ আসিবার নাম করিল না । চারু অন্তঃপুরের সীমান্তদেশে আসিয়া’অনেকবার তালি দিল, কেহ শুনিল না। চারু কিছু রাগ করিয়া তাহার বারান্দায় মন্মথ দত্ত্বর এক বই হাতে করিয়া পড়িবার চেষ্টা করিতে লাগিল । মন্মথ দত্ত নূতন গ্রন্থকার । তাহার লেখার ধরন অনেকটা অমলেরই মতো, এইজন্য অমল তাহাকে কখনো প্ৰশংসা করিত না ; মাঝে মাঝে চারুর কাছে তাহার লেখা বিকৃত উচ্চারণে পডিয়া বিদ্রুপ করিত— চারু অমলের নিকট হইতে সে বই কাডিয়া লইয়া অবজাভরে দূরে ফেলিয়া দিত । আজ যখন অমলের পদশব্দ শুনিতে পাইল তখন সেই মন্মথ দত্তর কলকণ্ঠ’-নামক বই মুখের কাছে তুলিয়া ধরিয়া চারু অত্যন্ত একাগ্রভাবে পড়িতে আরম্ভ করিল। অমল বারান্দায় প্রবেশ করিল, চারু। লক্ষও করিল না । অমল কহিল, “কী বোঠান, কী পড়া " চারুকে নিরুত্তর দেখিয়া অমল চৌকির পিছনে আসিয়া বইটা দেখিল । কহিল, “মন্মথ দত্তর ?iთოiლ I” চারু কহিল, “আঃ, বিরক্ত কোরো না, আমাকে পড়তে দাও।” পিঠের কাছে দাড়াইয়া অমল ব্যঙ্গস্বরে পড়িতে লাগিল, “আমি তৃণ, ক্ষুদ্র তৃণ ; ভাই রক্তাম্বর রাজবেশধারী, অশোক, আমি তৃণমাত্ৰ ! আমার ফুল নাই, আমার ছায়া নাই, আমার মন্তক আমি আকাশে তুলিতে পারি না, বসন্তের কোকিল আমাকে আশ্রয় করিয়া কুহুস্বরে জগৎ মাতায় না- তবু ভাই অশোক, তোমার ঐ পুম্পিত উচ্চ শাখা সুড়ঙ্গমকে উপেক্ষা করিয়ে না; তােমাৰ পাৱে পড়িয়া আৰু আমি তৃণ তৰু আমাকে তুচ্ছ नीं ।” অমল এইটুকু বই হইতে পড়িয়া তার পরে বিলুপ করিয়া বানাইয়া বলিতে লাগিল, “আমি কলার কাদি, কাচকলার কাদি, ভাই কুত্মাণ্ড, ভাই গৃহচালবিহারী কুন্মাণ্ড, আমি নিতান্তই কাচকলার কাদি ।” চারু কৌতুহলের তাড়নায় রাগ রাখিতে পারিল না ; হাসিয়া উঠিয়া বই ফেলিয়া দিয়া কহিল, “তুমি ভারি হিংসুটে, নিজের লেখা ছাড়া কিছু পছন্দ হয় না।” অমল কহিল, “তোমার ভারি উদারতা, তৃণটি পেলেও গিলে খেতে চাও।” চারু । আচ্ছা মশায়, ঠাট্টা করতে হবে না- পিকেটে কী আছে বের করে ফেলো । var | à vaso virtur roi !