পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ፻፭8% NOVO পঞ্চম পরিচ্ছেদ চারু নিমন্ত্রণে গিয়াছিল। মন্দা ঘরে বসিয়া চুলে দড়ি বিনাইতেছিল। “বউঠান” বলিয়া অমল ঘরের মধ্যে প্ৰবেশ করিল । মন্দা নিশ্চয় জানিত যে, চারুর নিমন্ত্রণে যাওয়ার সংবাদ অমলের অগোচর ছিল না ; হাসিয়া কহিল, “আহা আমলবাবু, কাকে খুঁজতে এসে কার দেখা পেলে । এমনি তোমার অদৃষ্ট ।” । অমল কহিল, “বা দিকের বিচালিও যেমন ডান দিকের বিচালিও ঠিক তেমনি, গর্দভের পক্ষে দুইই সমান আদরের ” বলিয়া সেইখানে বসিয়া গেল । অমল । মন্দা-বোঠান, তোমাদের দেশের গল্প বলো, আমি শুনি । লেখার বিষয় সংগ্ৰহ করিবার জন্য অমল সকলের সব কথা কৌতুহলের সহিত শুনিত । সেই কারণে মন্দাকে এখন সে আর পূর্বের ন্যায় সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিত না । মন্দার মনস্তত্ত্ব, মন্দার ইতিহাস, এখন তাহার কাছে ঔৎসুক্যজনক । কোথায় তাহার জন্মভূমি, তাহদের গ্রামটি কিরূপ, ছেলেবেলা কেমন কবিয়া কাটিত, বিবাহ হইল কবে, ইত্যাদি সকল কথাই সে খুঁটিয়া খুঁটিয়া জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল । মন্দার ক্ষুদ্র জীবনবৃত্তান্ত সম্বন্ধে এত কৌতুহল কেহ কখনো প্ৰকাশ করে নাই । মন্দা আনন্দে নিজের কথা বকিয়া যাইতে লাগিল ; মাঝে মাঝে কহিল, “কী বাকছি। তার ঠিক নাই ।” অমল উৎসাহ দিয়া কহিল, “না, আমার বেশ লাগছে, বলে যাও।” মন্দার বাপের এক কানা গোমন্তা ছিল, সে তাহার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করিয়া এক-একদিন অভিমানে অনশন ব্ৰত গ্রহণ করিত, অবশেষে ক্ষুধার জ্বালায় মন্দাদের বাড়িতে কিরূপে গোপনে আহার করিতে আসিত এবং দৈবাৎ একদিন স্ত্রীর কাছে কিরূপে ধরা পডিয়াছিল, সেই গল্প যখন হইতেছে এবং অমল মনোযোগের সহিত শুনিতে শুনিতে সকৌতুকে হাসিতেছে, এমন সময় চারু ঘরের মধ্যে আসিয়া প্ৰবেশ করিল। গল্পের সূত্র ছিন্ন হইয়া গেল । তাহার আগমনে হঠাৎ একটা জমাট সভা ভাঙিয়া গেল, চারু তাহা স্পষ্টই বুঝিতে পারিল । অমল জিজ্ঞাসা করিল, “বউঠান, এত সকাল-সকাল ফিরে এলে যে ” চারু কহিল, “তাই তো দেখছি । বেশি সকাল-সকালই ফিরেছি ।” বলিয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম করিলা । অমল কহিল, “ভালোই করেছি, বাঁচিয়েছ আমাকে । আমি ভাবছিলুম, কখন না জানি ফিরবে। মন্মথ দত্তর ‘সন্ধার পাখি বলে নুতন বইটা তোমাকে পড়ে শোনাব বলে এনেছি।” চারু । এখন থাক, আমার কাজ আছে। অমল। কাজ থাকে তো আমাকে হুকুম করো, আমি করে দিচ্ছি। চারু জানিত অমল আজি বই কিনিয়া আনিয়া তাহাকে শুনাইতে আসিবে ; চারু ঈর্ষা জন্মাইবার জন্য মন্মথর লেখার প্রচুর প্রশংসা করিবে এবং অমল সেই বইটাকে বিকৃত করিয়া পড়িয়া বিদ্রুপ করিতে থাকিবে । এই সকল কল্পনা করিয়াই অধৈৰ্যবশত সে অকালে নিমন্ত্রণ গৃহের সমস্ত অনুনয়বিনয় লঙ্ঘন করিয়া অসুখের ছুতায় গৃহে চলিয়া আসিতেছে। এখন বার বার মনে করিতেছে, * সেখানে ছিলাম ভালো, চলিয়া আসা অন্যায় হইয়াছে।’ মন্দাও তো কম বেহায়া নয় । একলা আমলের সহিত একঘরে বসিয়া দাত বাহির করিয়া হাসিতেছে। লোকে দেখিলে কী বলিবে । কিন্তু মন্দাকে এ কথা লইয়া ভৎসনা করা চারুর পক্ষে বড়ো কঠিন । কারণ, মন্দা যদি তাহারই দৃষ্টিান্তের উল্লেখ করিয়া জবাব দেয়। কিন্তু সে হইল এক, আর এ হইল এক । সে অমলকে রচনায় উৎসাহ দেয়, অমলের সঙ্গে সাহিত্যালোচনা করে, কিন্তু মন্দার তো সে উদ্দেশ্য আদবেই নয় । মন্দা নিঃসন্দেহই সরল যুবককে মুগ্ধ করিবার জন্য জাল বিস্তার করিতেছে । এই ভয়ংকর বিপদ হইতে বেচারা অমলকে রক্ষা করা তাহারই কর্তব্য । অমলকে এই মায়াবিনীর মতলব কেমন করিয়া বুঝাইবে । বুঝাইলে তাহার প্রলোভনের নিবৃত্তি না হইয়া যদি উলটা አ