পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ና፲፱q}ቛ こ総ぬ ভূপতি এমন বিষয়ে প্রশ্ন করিতেছে। যাহার একটিও জবাব দিবার নাই, সেইজন্য চারু ভিতরে ভিতরে অধীর হইয়া উঠিল ; মনে হইতে লাগিল, ভূপতি এখন তাহাকে নিষ্কৃতি দিয়া ছাডিয়া গেলে সে 5 ভূপতি দ্বিতীয়বার কোনো উত্তর না পাইয়া পুনর্বাের স্নেহসিক্ত স্বরে কহিল, “আমি সর্বদা তোমার কাছে আসতে পারি। নে চারু, সেজন্যে আমি অপরাধী, কিন্তু আর হবে না । এখন থেকে দিনরাত কাগজ নিয়ে থাকব না। আমাকে তুমি যতটা চাও ততটাই পাবে।” চারু অধীর হইয়া বলিল, “সেজন্যে নয় ।” ভূপতি কহিল, “তবে কী জন্যে ।” বলিয়া খাটের উপর বসিল । চারু বিরক্তির স্বর গোপন করিতে না পারিয়া কহিল, “সে এখন থাক, রাত্রে বলব ।” ভূপতি মুহুর্তকাল স্তন্ধ থাকিয়া কহিল, “আচ্ছ, এখন থাক।” বলিয়া আন্তে আন্তে উঠিয়া বাহিরে চলিয়া গেল । তাহার নিজের একটা কী কথা বলিবার ছিল, সে আর বলা হইল না । ভূপতি যে একটা ক্ষোভ পাইয়া গেল, চারুর কাছে তাহা অগোচর রহিল না । মনে হইল, “ফিরিয়া ডাকি ।” কিন্তু ডাকিয়া কী কথা বলিবে । অনুতাপে তাহাকে বিদ্ধ করিল, কিন্তু কোনো প্ৰতিকার সে খুজিয়া পাইল না । রাত্রি হইল। চারু আজ সবিশেষ যত্ন করিয়া ভূপতির রাত্রের আহার সাজাইল এবং নিজে পাখা হাতে করিয়া বসিয়া রহিল । এমন সময় শুনিতে পাইল মন্দা উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতেছে, “ব্ৰজ, ব্ৰজ ।” ব্ৰজ চাকর সাড়া দিলে জিজ্ঞাসা করিল, “আমলবাবুর খাওয়া হয়েছে কি ?” ব্ৰজ উত্তর করিল, “হয়েছে।” মন্দা কহিল, “খাওয়া হয়ে গেছে অথচ পান নিয়ে গেলি নে যে ” মন্দা ব্ৰজকে অত্যন্ত তিরস্কার করিতে লাগিল । এমন সময় ভূপতি অন্তঃপুরে আসিয়া আহারে বসিল, “চারু পাখা করিতে লাগিল । চারু আজ প্ৰতিজ্ঞা করিয়াছিল, ভূপতির সঙ্গে প্ৰফুল্ল স্নিগ্ধভাবে নানা কথা কহিবে। কথাবার্তা আগে হইতে ভাবিয়া প্ৰস্তুত হইয়া বসিয়া ছিল। কিন্তু মন্দার কণ্ঠস্বরে তাহার বিস্তৃত আয়োজন সমস্ত ভাঙিয়া দিল, আহারকালে ভূপতিকে সে একটি কথাও বলিতে পারিল না। ভূপতিও অত্যন্ত বিমৰ্য অন্যমনস্ক হইয়া ছিল । সে ভালো করিয়া খাইল না, চারু একবার কেবল জিজ্ঞাসা করিল, “কিছু খােচ্ছ ଗୀ c୯ ।” ভূপতি প্ৰতিবাদ করিয়া কহিল, “কেন । কম খাই নি তো।” শয়নঘরে উভয়ে একত্র হইলে ভূপতি কহিল, “আজ রাত্ৰে তুমি কী বলবে বলেছিলে ।” চারু কহিল, “দেখো, কিছুদিন থেকে মন্দার ব্যবহার আমার ভালো বোধ হচ্ছে না। ওকে এখানে রাখতে আমার আর সাহস হয় না ।” ভূপতি । কেন, কী করেছে। চারু । অমলের সঙ্গে ও এমনি ভাবে চলে যে, সে দেখলে লিজা হয় । ভূপতি হাসিয়া উঠিয়া কহিল, “ই, তুমি পাগল হয়েছি! অমল ছেলেমানুষ । সেদিনকার ছেলে-” চারু । তুমি তো ঘরের খবর কিছুই রাখ না, কেবল বাইরের খবর কুড়িয়ে বেড়াও । যাই হােক, বেচারা দাদার জন্যে আমি ভাবি । তিনি কখন খেলেন না খেলেন মন্দা তার কোনো খোজও রাখে না, অথচ অমলের পান থেকে চুন খসে গেলেই চাকরিবাকিরদের সঙ্গে বকাবিকি করে অনৰ্থ করে। ভূপতি । তোমরা মেয়েরা কিন্তু ভারি সন্দিন্ধাতা বলতে হয় । চারু রাগিয়া বলিল, “আচ্ছা বেশ, আমরা সন্দিন্ধ, কিন্তু বাড়িতে আমি এ-সমন্ত বেহায়াপনা হতে দেব না তা বলে রাখছি।” চারুর এ-সমস্ত অমূলক আশঙ্কায় ভূপতি মনে মনে হাসিল, খুশিও হইল। গৃহ যাহাতে পবিত্র থাকে, দাম্পত্যধর্মে আনুমানিক কাল্পনিক কলঙ্কও লেশমাত্র স্পর্শ না করে, এজন্য সাধাৰী মীদের যে অতিরিক্ত সতর্কতা, যে সন্দেহাকুল দৃষ্টিক্ষেপ, তাহার মধ্যে একটি মাধুর্য এবং মহত্ব আছে। ভূপতি শ্ৰদ্ধায় এবং জেহে চারুর ললাট চুম্বন করিয়া কহিল, "এ নিয়ে আর কোনো গোল করবার