পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R ○○ রবীন্দ্ৰ -সন্মাচনাবলী দরকার হবে না । উমাপদ ময়মনসিংহে প্রাকটিস করতে যাচ্ছে, মন্দাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে ।” অবশেষে নিজের দুশ্চিন্তা এবং এই-সকল অগ্ৰীতিকর আলোচনা দূর করিয়া দিবার জন্য ভূপতি টেবিল হইতে একটা খাতা তুলিয়া লইয়া কহিল, “তোমার লেখা আমাকে শোনাও-না, চারু ।” চারু খাতা কাডিয়া লইয়া কহিল, “এ তোমার ভালো লাগবে না, তুমি ঠাট্টা করবে ।” ভূপতি এই কথায় কিছু ব্যথা পাইল, কিন্তু তাহা গোপন করিয়া হাসিয়া কহিল, “আচ্ছা, আমি ঠাট্টা করব না, এমনি স্থির হয়ে শুনব যে তোমার ভ্রম হবে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি ।” কিন্তু ভূপতি আমল পাইল না- দেখিতে দেখিতে খাতাপত্ৰ নানা আবরণ-আচ্ছাদনের মধ্যে उञ्जुईिऊ शरैशी काळ्न ! নবম পরিচ্ছেদ সকল কথা ভূপতি চারুকে বলিতে পাৱে নাই । উমাপদ ভূপতির কাগজখানির কর্মধ্যক্ষ ছিল । চান্দা আদায়, ছাপাখানা ও বাজারের দেনা শোধ, চাকরীদের বেতন দেওয়া, এ-সমস্তই উমাপদর উপৰ ইতিমধ্যে হঠাৎ একদিন কাগজওয়ালার নিকট হইতে উকিলের চিঠি পাইয়া ভূপতি আশ্চর্য হইয়া গেল ; ভূপতির নিকট হইতে তাহদের ২৭০০ টাকা পাওনা জানাইয়াছে । ভূপতি উমাপদ বে: ডাকিয়া কহিল, “এ কী ব্যাপার । এ টাকা তো আমি তোমাকে দিয়ে দিয়েছি ! কাগজের দেনা চার-পাচশোর বেশি তো হবার কথা নয় ।” উমাপদ কহিল, “নিশ্চয় এরা ভুল করেছে ।” কিন্তু, আর চাপা রহিল না । কিছুকাল হইতে উমাপদ এইরূপ ফাকি দিয়া আসিতেছে । কেবল কাগজ সম্বন্ধে নহে, ভূপতির নামে উমাপদ বাজারে অনেক দেনা করিয়াছে । গ্রামে সে যে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করিতেছে তাহার মালমসলার কতক ভূপতির নামে লিখাইয়াছে অধিকাংশই কাগজের টাকা হইতে শোধ করিয়াছে । যখন নিতান্তই ধরা পড়িল তখন সে রুক্ষ স্বরে কহিল, “আমি তো আর নিরুদ্দেশ্য হচ্ছি নে । কাজ করে আমি ক্রমে ক্রমে শোধ দেব- তোমার সিকি পয়সার দেনা যদি বাকি থাকে। তবে আমার নাম উমাপদ নয় ।” তাহার নামের ব্যত্যয়ে ভূপতির কোনো সাত্মনা ছিল না। অর্থের ক্ষতিতে ভূপতি তত ক্ষুদ্র হয় নাই, কিন্তু অকস্মাৎ এই বিশ্বাসঘাতকতায় সে যেন ঘর হইতে শূন্যের মধ্যে পা ফেলিল । সেইদিন সে অকালে অন্তঃপুরে গিয়াছিল । পৃথিবীতে একটা যে নিশ্চয় বিশ্বাসের স্থান আছে, সেইটে ক্ষণকালের জন্য অনুভব করিয়া আসিতে তাহার হৃদয় ব্যাকুল হইয়াছিল । চারু তখন নিজের দুঃখে সন্ধ্যাদীপ নিবাইয়া জানলার কাছে অন্ধকারে বসিয়া ছিল । উমাপদ পরদিনই ময়মনসিংহে যাইতে প্ৰস্তুত । বাজারের পাওনাদাররা খবর পাইবার পূর্বেই সে সরিয়া পড়িতে চায় । ভূপতি ঘূণাপূর্বক উমাপদর সহিত কথা কহিল না— ভূপতির সেই মীেনাবস্থা উমাপদ সৌভাগ্য বলিয়া জ্ঞান করিলা । অমল আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মন্দা-বোঠান, এ কী ব্যাপার। জিনিসপত্র গোদাবার ধুম যে ?” মন্দা । আর ভাই, যেতে তো হবেই । চিরকাল কি থাকব । SOM I TRI GKQ3 Fawr i Cymr | অমল । কেন । এখানে অসুবিধাটা কী হল । মন্দা । অসুবিধে আমার কী বল । তোমাদের পাঁচজনের সঙ্গে ছিলুম, সুখেই ছিলুম। কিন্তু অন্যের অসুবিধে হতে লাগল যে । বলিয়া চারুর ঘরের দিকে কটাক্ষা করিল।