পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ܓ Q 8 রোষশান্তি করিবে । কিন্তু একটা লেখার উপলক্ষ করিয়া ডাকিতে হইবে । অমলেরই একটা লেখার অনুকরণ করিয়া ‘অমাবস্যার আলো’ নামে সে একটা প্ৰবন্ধ ফাদিয়াছে । চারু এটুকু বুঝিয়াছে যে তাহার স্বাধীন ছাদের লেখা অমল পছন্দ করে না । পৃণিমা তাহার সমস্ত আলোক প্রকাশ করিয়া ফেলে বলিয়া চারু তাহার নূতন রচনায় পূৰ্ণিমাকে অত্যন্ত ভৎসনা করিয়া লজ্জা দিতেছে । লিখিতেছে- অমাবস্যার অতলম্পর্শ অন্ধকারের মধ্যে ষোলোকলা চাদের সমস্ত আলোক স্তরে স্তরে আবদ্ধ হইয়া আছে, তাহার এক রশ্মিও হারাইয়া যায় নাই- তাই পূৰ্ণিমার উজ্জ্বলতা অপেক্ষা অমাবস্যার কালিমা পরিপূর্ণতর- ইত্যাদি । অমল নিজের সকল লেখাই সকলের কাছে প্ৰকাশ করে এবং চারু তাহা করে না- পূর্ণিমা-অমাবস্যার তুলনার মধ্যে কি সেই কথাটার আভাস আছে । এ দিকে এই পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি ভূপতি কোনো আসন্ন ঋণের তাগিদ হইতে মুক্তিলাভের জন্য তাহার পরম বন্ধু মতিলালের কাছে গিয়াছিল । মতিলালকে সংকটের সময় ভূপতি কয়েক হাজার টাকা ধার দিয়াছিল- সেদিন অত্যন্ত বিব্রত হইয়া সেই টাকাটা চাহিতে গিয়াছিল । মতিলাল স্নানের পর গা ধুলিয়া পাখার হাওয়া লাগাইতেছিল এবং একটা কাঠের বাক্সর উপর কাগজ মেলিয়া অতি ছোটাে অক্ষরে সহস্ৰ দুৰ্গানাম লিখিতেছিল । ভূপতিকে দেখিয়া অত্যন্ত হৃদ্যতার স্বরে কহিল, “এসো এসো- আজকাল তো তোমার দেখাই পাবার ୫୩ (ମୋଽ ।” মতিলাল টাকার কথা শুনিয়া আকাশপাতাল চিন্তা করিয়া কহিল, “কোন টাকার কথা বলছি । এর মধ্যে তোমার কাছ থেকে কিছু নিয়েছি নাকি ৷” ভূপতি সাল-তারিখ স্মরণ করাইয়া দিলে মতিলাল কহিল, “ওঃ, সেটা তো অনেকদিন হল তােমাদি হয়ে গেছে ।” ভূপতির চক্ষে তাহার চতুদিকের চেহারা সমান্ত যেন বদল হইয়া গেল । সংসারের যে অংশ হইতে মুখোশ খসিয়া পড়িল সে দিকটা দেখিয়া আতন্তে ভূপতির শরীর কন্টকিত হইয়া উঠিল । হঠাৎ বন্যা আসিয়া পড়িলে ভীত ব্যক্তি যেখানে সকলের চেয়ে উচ্চ চূড়া দেখে সেইখানে যেমন দুটিয়া যায়, সংশয়াক্রান্ত বহিঃসংসার হইতে ভূপতি তেমনি বেগে অন্তঃপুরে প্রবেশ করিল, মনে মনে কহিল, ‘আর যাই হোক, চারু তো আমাকে বঞ্চনা করিবে না ।” চারু তখন খাটে বসিয়া কোলের উপর বালিশ এবং বালিশের উপর খাতা রাখিয়া ঝুঁকিয়া পড়িয়া একমনে লিখিতেছিল। ভূপতি যখন নিতান্ত তাহার পাশে আসিয়া দাড়াইল তখনই তাহার চেতনা মনে যখন বেদন থাকে তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয় । চারু এমন অনাবশ্যক সত্বরতার সহিত তাহার লেখা গোপন করিল দেখিয়া ভূপতির মনে বাজিল । ভূপতি ধীরে ধীরে খাটের উপর চারুর পাশে বসিল । চারু তাহার রচনালোতে অনপেক্ষিত বাধা পাইয়া এবং ভূপতির কাছে হঠাৎ খাতা লুকাইবার ব্যস্ততায় অপ্রতিভ-হইয়া কোনো কথাই জোগাইয়া 8ठिंड •द्रिकृत ना ! সেদিন ভূপতির নিজের কিছু দিবার বা কহিবার ছিল না । সে রিক্তহন্তে চারুর নিকটে প্রার্থী হইয়া আসিয়াছিল । চারুর কাছ হইতে আশঙ্কাধমী ভালোবাসার একটা-কোনো প্রশ্ন, একটা-কিছু আদর পাইলেই তাহার ক্ষত-যন্ত্রণায় ঔষধ পড়িত । কিন্তু হ্যাদে লক্ষ্মী হৈল লক্ষ্মীছাড়া', এক মুহুর্তের প্রয়োজনে প্রতিভাণ্ডারের চাবি চারু যেন কোনোখানে খুজিয়া পাইল না । উভয়ের সুকঠিন মীেনে খানিকক্ষণ নিতান্ত চুপচাপ থাকিয়া ভূপতি নিশ্বাস ফেলিয়া খাট ছাড়িয়া উঠিল এবং ধীরে ধীরে বাহিরে চলিয়া আসিল । সেই সময় অমল বিস্তর শক্ত শক্ত কথা মনের মধ্যে বোঝাই করিয়া লইয়া চারুর ঘরে দ্রুতপদে