পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Tre 8Oዒ কথা ভাবিল, কৰ্ণমূল লোহিত হইয়া উঠিল, সবেগে বলিল, চুলোয় যাক আষাঢ়ের চাঁদ আর অমাবস্যার আলো । আমি ব্যারিস্টার হয়ে এসে দাদাকে যদি সাহায্য করতে পারি। তবেই আমি পুরুষমানুষ।” গত রাত্রি সমন্ত রাত জাগিয়া চারু ভাবিয়া রাখিয়াছিল অমলকে বিদায়কালে কী কথা বলিবেসহাস্য অভিমান এবং প্রফুল্প ঔদাসীন্যের দ্বারা মজিয়া মজিয়া সেই কথাগুলিকে সে মনে মনে উজ্জ্বল ও শানিত করিয়া তুলিয়াছিল। কিন্তু বিদায় দিবার সময় চারুর মুখে কোনো কথাই বাহির হইল না । সে কেৰল বলিল, “চিঠি লিখবে তো, অমল ?” অমল ভূমিতে মাথা রাখিয়া প্ৰণাম করিল, চারু চুটিয়া শয়নঘরে গিয়া দ্বার বন্ধ করিয়া দিল । ত্ৰয়োদশ পরিচ্ছেদ ভূপতি বর্ধমানে গিয়া অমলের বিবাহ-অন্তে তাহাকে বিলাতে রওনা করিয়া ঘরে ফিরিয়া আসিল । নানা দিক হইতে ঘা খাইয়া বিশ্বাস্যপরায়ণ ভূপতির মনে বহিঃসংসারের প্রতি একটা বৈরাগ্যের ভাব আসিয়াছিল। সভাসমিতি মেলামেশা কিছুই তাহার ভালো লাগিত না । মনে হইল, “এই সব লইয়া আমি এতদিন কেবল নিজেকেই ফাকি দিলাম- জীবনের সুখের দিন বৃথা বহিয়া গেল এবং সারভাগ আবর্জনাকুণ্ডে ফেলিলাম।” ভূপতি মনে মনে কহিল, যাক, কাগজটা গেল, ভালেই হইল। মুক্তিলাভ করিলাম।” সন্ধ্যার সময় আঁধারের সূত্রপাত দেখিলেই পাখি। যেমন করিয়া নীড়ে ফিরিয়া আসে, ভূপতি সেইরূপ তাহার দীর্ঘদিনের সঞ্চারণক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়া অন্তঃপুরে চারুর কাছে চলিয়া আসিল । মনে মনে স্থির করিল, “বাস, এখন আর-কোথাও নয় ; এইখানেই আমার স্থিতি ! যে কাগজের জাহাজটা লইয়া সমস্তদিন খেলা করিতাম সেটা ডুবিল, এখন ঘরে চলি ।” বোধ করি ভূপতির একটা সাধারণ সংস্কার ছিল, মীর উপর অধিকার কাহাকেও অর্জন করিতে হয় না, শ্ৰী ধ্ৰুবতারার মতো নিজের আলো নিজেই জ্বালাইয়া রাখে- হাওয়ায় নেবে না, তেলের অপেক্ষা রাখে না । বাহিরে যখন ভাঙচুর আরম্ভ হইল। তখন অন্তঃপুরে কোনো খিলানে ফাটল ধরিয়াছে কি না। তাহা একবার পরখ করিয়া দেখার কথাও ভূপতির মনে স্থান পায় নাই । ভূপতি সন্ধ্যার সময় বর্ধমান হইতে বাড়ি ফিরিয়া আসিল । তাড়াতাড়ি মুখহাত ধুইয়া সকাল সকাল খাইল । অমলের বিবাহ ও বিলাতযাত্রার আদ্যোপান্ত বিবরণ শুনিবার জন্য স্বভাবতই চারু একান্ত উৎসুক হইয়া আছে স্থির করিয়া ভূপতি আজ কিছুমাত্র বিলম্ব করিল না। ভূপতি শোবার ঘরে বিছানায় গিয়া শুইয়া গুড়গুড়ির সুদীর্ঘ নল টানিতে লাগিল । চারু এখনো অনুপস্থিত, বোধ করি গৃহকাৰ্য করিতেছে। তামাক পুড়িয়া শ্ৰান্ত ভূপতির ঘুম আসিতে লাগিল। ক্ষণে ক্ষণে ঘুমের ঘোর ভাঙিয়া চমকিয়া জাগিয়া উঠিয়া সে ভাবিতে লাগিল, এখনো চারু আসিতেছে না কেন । অবশেষে ভূপতি থাকিতে না পারিয়া চারুকে ডাকিয়া পঠাইল। ভূপতি জিজ্ঞাসা করিল, “চারু, আজ যে এত দেরি का ?” চারু তাহার জবাবদিহি না করিয়া কহিল, “ই, আজ দেরি হয়ে গেল।” চারুর আগ্রহপূর্ণ প্রত্যুের জন্য ভূপতি অপেক্ষা করিয়া রহিল ; চারু কোনো প্রশ্ন করিল না। ইহাতে ভূপতি কিছু ক্ষুব্ধ হইল। তবে কি চারু অমলকে ভালোবাসে না। অমল যতদিন উপস্থিত ছিল ততদিন চারু তাহাকে লইয়া আমোদ-আহলাদ করিল, আর যেই চলিয়া গেল অমনি তাহার সম্বন্ধে উদাসীন ! এইরূপ বিসদৃশ ব্যবহারে ভূপতির মনে খটকা লাগিল, সে ভাবিতে লাগিল- তবে কি চারুর হৃদয়ের গভীরতা নাই। কেবল সে আমোদ করিতেই জানে, ভালোবাসিতে পারে না ? মেয়েমানুষের পক্ষে gv fry er (V ety ai i চারু ও অমলের সখিতে ভূপতি আনন্দ বোধ করিত। এই দুইজনের ছেলেমানুষি আড়ি ও ভাব, খেলা ও মন্ত্রণা তাহার কাছে সুমিষ্ট কীেভুকাবহ ছিল ; অমলকে চারু সর্বদা যে যত্ন আদর করিত