পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 NRSR রবীন্দ্র-রচনাবলী আবার আমি নিঃশব্দপদে ফিরিয়া গেলাম । উদ্দীপনা-আপিস হইতে নগদ দাম দিয়া একটা কাগজ কিনিয়া আনাইলাম। আমার লেখা বাহির হইয়াছে কি না দেখিবার জন্য কাগজ খুললাম। সূচীপত্র দেখিলাম, পুরস্কারযোগ্য গল্পটির নাম "বিক্রমনারায়ণ নহে, তাহার নাম “ননদিনী’, এবং অহার রচয়িতার নাম- এ কী ! এ যে নিঝরিণী দেবী ! বাংলাদেশে আমার শ্ৰী ছাড়া আর কাহারও নাম নিঝরিণী আছে কি । গল্পটি খুলিয়া পড়িলাম । দেখিলাম, নিবারের সেই হতভাগিনী জাঠতুতো বোনের বৃত্তান্তটিই ডালপালা দিয়া বর্ণিত । একেবারে ঘরের কথা- সাদা ভাষা, কিন্তু সমন্ত ছবির মতো চোখে পড়ে এবং চক্ষু জলে ভরিয়া যায় । এ নিকারিণী যে আমারই ‘নিকার তাহাতে সন্দেহ নাই । তখন আমার শয়নঘরের সেই দাহ্যদৃশ্য এবং ব্যথিত রমণীর সেই স্নানমুখ অনেকক্ষণ চুপ কবিয়া বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম । রাত্ৰে শুইতে আসিয়া স্ত্রীকে বলিলাম, “নিকার, যে খাতায় তোমার লেখাগুলি আছে সেটা কোথায় ।” নিকারিণী কহিল, “কেন, সে লইয়া তুমি কী করিবে ।” আমি কহিলাম, “আমি ছাপিতে দিব ।” নিকারিণী । আহা, আর ঠাট্টা করিতে হইবে না । আমি । না, ঠাট্টা করিতেছি না । সত্যিই ছাপিতে দিব । নিকারিণী । সে কোথায় গেছে। আমি জানি না । আমি কিছু জেদের সঙ্গেই বলিলাম, “না। নিকার, সে কিছুতেই হইবে না । বলো, সেটা কোথায় আছে ?” নিকারিণী কহিল, “সত্যই সেটা নাই ।” আমি । কেন, কী হইল । নিঝরিণী ! সে আমি পুড়াইয়া ফেলিয়াছি । আমি চমকিয়া উঠিয়া কহিলাম, “অ্যা, সে কী । কবে পূড়াইলে ।” নিবরিণী । আজই পূড়াইয়াছি । আমি কি জানি না যে, আমার লেখা ছাই লেখা । স্ত্রীলোকের রচনা বলিয়া লোকে মিথ্যা করিয়া প্ৰশংসা করে । ইহার পর হইতে এ পর্যন্ত নিঝরকে সাধ্যসাধনা করিয়াও এক ছত্র লিথাইতে পারি নাই । ইতি শ্ৰীহরিশচন্দ্ৰ হালদার উপরে যে গল্পটি লেখা হইয়াছে উহার পনেরো-আনাই গল্প । আমার স্বামী যে বাংলা কত অল্প জানেন, তাহা তাহার রচীত উপন্যাশটি পড়িলেই কাহারও বুঝিতে বাকি থাকিবে না । ছিা ছি নিজের ক্রিকে লইয়া এমনি করিয়া কি গল্প বানাইতে হয় ? ইতি শ্ৰীনিবারিনি দেবী স্ত্রীলোকের চাতুরী সম্বন্ধে দেশী-বিদেশী শাস্ত্ৰে-অশাস্ত্রে অনেক কথা আছে- তাহাই স্মরণ করিয়া পাঠকেরা ঠকিবেন না। আমার রচনাটুকুর ভাষা ও বানান কে সংশোধন করিয়া দিয়াছেন, সে কথা আমি বলিব না- না বলিলেও বিজ্ঞা পাঠক অনুমান করিতে পরিবেন । আমার স্ত্রী যে কয়-লাইন লিখিয়াছেন তাহার বানান ভুলগুলি দেখিলেই পাঠক বুঝিবেন, সেগুলি ইচ্ছাকৃত- তাহার স্বামী যে বাংলায় পরমপণ্ডিত এবং গল্পটা যে আষাঢ়ে, ইহাই প্ৰমাণ করিবার এই অতি সহজ উপায় তিনি বাহির কবিয়াছেন- এইজন্যই কালিদাস লিখিয়াছেন, মীণামশিক্ষিতপঢ়ত্বম । তিনি শ্ৰীচরিত্র বুঝিতেন । আমিও সম্প্রতি চোখ-ফোঁটার পর হইতে বুঝিতে শুরু করিয়াছি। কালে হয়তো কালিদাস হইয়া উঠিতেও পারিব । কালিদাসের সঙ্গে আরো একটু সাদৃশ্য.দেখিতেছি । শুনিয়াছি, কবিবর নববিবাহের পর তাহার বিদূষী স্ত্রীকে যে শ্লোক রচনা করিয়া শোনান তাহাতে উশব্দ হইতে রফলাটা লোপ