পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 S. KO করিয়াছিলেন- শব্দপ্রয়োগ সম্বন্ধে এরূপ দুর্ঘটনা বর্তমান লেখকের দ্বারাও অনেক ঘটিয়াছেঅতএব, সমস্ত গভীরভাবে পর্যালোচনা করিয়া আশা হইতেছে, কালিদাসের যেরূপ পরিণাম হইয়াছিল, আমার পক্ষেও তাহা অসম্ভব নহে । ইতি শ্ৰীহঃ এ গল্প যদি ছাপানো হয়, আমি বাপের বাড়ি চলিয়া যাইব । শ্ৰীমতী নিঃ আমিও তৎক্ষণাৎ শ্বশুরবাড়ি যাত্রা করিব । শ্ৰীহঃ Pir > o» ठळफ्रान् সকালবেলায় শীত-শীত ছিল। দুপুরবেলায় বাতাসটি অল্প-একটু তাতিয়া উঠিয়া দক্ষিণ দিক হইতে বহিতে আরম্ভ করিয়াছে । যতীন যে বারান্দায় বসিয়াছিল। সেখান হইতে বাগানের এক কোণে এক দিকে একটি কঁঠাল ও আর-এক দিকে একটি শিরীষগাছের মাঝখানের ফাক দিয়া বাহিরের মাঠ চোখে পড়ে । সেই শূন্য মাঠ ফায়ুনের রৌদ্রে ধুধু করিতেছিল। তাহারই এক প্রান্ত দিয়া কঁচা পথ চলিয়া গেছে- সেই পথ বাহিয়া বোঝাই-খালাস গোরুর গাড়ি মন্দগমনে গ্রামের দিকে ফিরিয়া চলিয়াছে, গাড়োয়ান মাথায় গামছা ফেলিয়া অত্যন্ত বেকারভাবে গান গাহিতেছে । এমন সময় পশ্চাতে একটি সহসা নারীকণ্ঠ বলিয়া উঠিল, “কী যতীন, পূর্বজন্মের কারও কথা ভাবিতে ছ বুঝি ।” যতীন কহিল, “কোন পটল, আমি এমনিই কি হতভাগা যে, ভাবিতে হইলেই পূর্বজন্ম লইয়া টান *iछि८ठ ठूग्न ।" আত্মীয়সমাজে ‘পটাল' নামে খ্যাত এই মেয়েটি বলিয়া উঠিল, “আর মিথ্যা বড়াই করিতে হইবে না । তোমার ইহজন্মের সব খবরই তো রাখি, মশায় । ছিছি, এত বয়স হইল, তবু একটা সামান্য বউও ঘরে আনিতে পারিলে না । আমাদের ঐ-যে ধনা মালীটা, ওরও একটা বউ আছে- তার সঙ্গে দুইবেল ঝগড়া করিয়া সে পাড়াসুদ্ধ লোককে জানাইয়া দেয় যে, বউ আছে বটে। আর তুমি যে মাঠের দিকে তাকাইয়া ভান করিতেছি, যেন কার চাদমুখ ধ্যান করিতে বসিয়াছ, এ-সমস্ত চালাকি আমি কি বুঝি না- ও কেবল লোক দেখাইবার ভড়ং মাত্র । দেখো যতীন, চেনা বামুনের পৈতের দরকার হয় না- আমাদের ঐ ধনাটা তো কোনোদিন বিরহের ছুতা করিয়া মাঠের দিকে আমন তাকাইয়া থাকে না ; অতিবড়ো বিচ্ছেদের দিনেও গাছের তলায় নিড়ানি হাতে উহাকে দিন কাটাইতে দেখিয়াছিকিন্তু উহার চোখে তো অমন ঘোর-ঘোর ভাব দেখি নাই। আর তুমি মশায়, সাতজন্ম বউয়ের মুখ দেখিলে না— কেবল হাসপাতালে মড়া কাটিয়া ও পড়া মুখস্থ করিয়া বয়স পার করিয়া দিলে, তুমি অমনতরো দুপুরবেলা আকাশের দিকে গদগদ হইয়া তাকাইয়া থাক কেন । না, এ-সমন্ত বাজে চালাকি আমার ভালো লাগে না । আমার গা জ্বালা করে ।” যতীন হাতজোড় করিয়া কহিল, “থাক থাক, আর নয় । আমাকে আর লজা দিয়ে না । তোমাদের ধনাই ধন্য । উহারই আদর্শে আমি চলিতে চেষ্টা করিব । আর কথা নয়, কাল সকালে উঠিয়াই যে কাঠকুড়ানি মেয়ের মুখ দেখিব, তাহারই গলায় মালা দিব- ধিককার আমার আর সহ্য হইতেছে না ।” পটল । তবে এই কথা রহিল ? যতীন । 'ই, রহিল ।