পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻国3吸 8 R ? শরীর ছিপছিপে— মুখশ্ৰী সম্বন্ধে অধিক কিছু বলিবার নাই, কেবল মুখে এই একটি অসামান্যতা আছে যে দেখিলে যেন বনের হরিণের ভাব মনে আসে। কঠিন ভাষায় তাহাকে নিবৃদ্ধি বলা যাইতেও পারে- কিন্তু তাহা বোকামি নহে, তাহা বুদ্ধিবৃত্তির অপরিস্ফুরণমাত্র, তাহাতে কুড়ানির মুখের সৌন্দর্য নষ্ট না করিয়া বরঞ্চ একটি বিশিষ্টতা দিয়াছে । সন্ধাবেলায় হবকুমারবাবু কলিকাতা হইতে ফিরিয়া আসিয়া যতীনকে দেখিয়া কহিলেন, “এই যে, গঠন আসিয়াছ, ভালেই হইয়াছে ! তোমাকে একটু ডাক্তারি করিতে হইবে । পশ্চিমে থাকিতে দুর্ভিক্ষেত্র সময় আমরা একটি মেয়েকে লইয়া মানুষ করিতেছি— পটল তাহাকে কুড়ানি বলিয়া ডাকে উহার কাপ-মা এবং ঐ মেয়েটি আমাদের বাংলার কাছেই একটি গাছতলায় পডিয়ছিল যখন খবর পাইয়া গেলাম, গিয়া দেখি, উহার বাপ-মা মরিয়াছে, মেয়েটির প্রাণটুকু আছে মাত্র । পটল তাহাকে অনেক যত্নে বাচাইয়াছে । উহার জাতের কথা কেহ জানে না- তাহা লইয়া কেহ আপত্তি কৰিলেই পটল বলে, “ ও তো দ্বিজ ; একবার মরিয়া এবার আমাদের ঘরে জন্মিয়াছে, উহার সাবেক জ্ঞাত কোথায় ঘূচিয়া গেছে ' প্ৰথমে মেয়েটি পািটলকে মা বলিয়া ডাকিতে শুরু করিয়াছিল ; পটল তাহাকে ধমক দিয়া বলিল, “খবরদার, আমাকে মা বলিস নে- আমাকে দিদি বলিস ”। পটল বলে, অতবডো মেয়ে মা বলিলে নিজেকে বুডি বলিয়া মনে হইবে যে ' বোধ করি সেই দুর্ভিক্ষের উপবাসে বা আর-কোনো কারণে উহার থাকিয়া-থাকিয়া শূলবেদনার মতো হয় । ব্যাপারখানা কী তোমাকে ভালো কবিয পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে । ওরে তুলসি, কুন্ডানিকে ডাকিয়া আন তো।” কুন্ডানি চুল বাধিতে বাধিতে অসম্পূৰ্ণ বেণী পিঠের উপরে দুলাইয়া হরকুমারবাবুর ঘরে আসিয়া উপস্থিত হইল । তাহার হরিণের মতো চোখদুটি দুজনের উপর রাখিয়া সে চাহিয়া রহিল । যতীন ইতান্তত কবিতেছে দেখিয়া হরকুমার তাহকে কহিলেন, “বৃথা সংকোচ করিতেছি, যতীন । উহাকে দেখিতে মস্ত ডাগর, কিন্তু কচি ডাবের মতো উহার ভিতরে কেবল জল ছলছল করিতেছে— এখনো শাসের রেখা মাত্র দেখা দেয় নাই। ও কিছুই বোঝে না- উহাকে তুমি নারী বলিয়া ভ্ৰম করিয়ো না, ও বনের হরিণী ।” যতীন তাহার ডাক্তারি কর্তব্য সাধন করিতে লাগিল- কুড়ানি কিছুমাত্র কৃষ্ঠা প্ৰকাশ করিল না । যতীন কহিল, “এশরীর যন্ত্রের কোনো বিকার তো বোঝা গেল না ।” পটল ফাঁস করিয়া ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “হৃদয়যন্ত্রেরও কোনো বিকার ঘটে নাই । তার পরীক্ষা দেখিতে চাও ?” বলিয়া কুড়ানির কাছে গিয়া তাহার চিবুক স্পর্শ করিয়া কহিল, “ও কুড়ানি, আমার এই ভাইটিকে তোর পছন্দ হইয়াছে ?” কুন্ডানি মাথা হেলাইয়া কহিল, “ই ।” পটল কহিল, “আমার ভাইকে তুই বিয়ে করিবি ?” সে আবার মাথা হেলাইয়া কহিল, “ই ।” পটল এবং হরকুমারবাবু হাসিয়া উঠিলেন । কুড়ানি কৌতুকের মর্ম না বুঝিয়া তঁহাদের অনুকরণে মুখখানি হাসিতে ভরিয়া চাহিয়া রহিল । যতীন লাল হইয়া উঠিয়া ব্যন্ত হইয়া কহিল, “আঃ পটল, তুমি বাড়াবাড়ি করিতেছ- ভারি অন্যায় । হরকুমারবাবু, আপনি পটলকে বড়ো বেশি প্রশ্ৰয় দিয়া থাকেন।” হরকুমার কহিলেন, “নহিলে আমিও যে উহার কাছে প্রশ্ৰয় প্রত্যাশা করিতে পারি না । কিন্তু যতীন, কুড়ানিকে তুমি জান না বলিয়াই অত ব্যস্ত হইতেছ। তুমি লজ্জা করিয়া কুড়ানিকে সুদ্ধ লজ্জা করিতে শিখাইবে দেখিতেছি । উহাকে জ্ঞানবৃক্ষের ফল তুমি খাওয়াইয়ে না। সকলে উহাকে লইয়া কৌতুক করিয়াছে- তুমি যদি মাঝের থেকে গাতীর্য দেখাও, তবে সেটা উহার পক্ষে একটা অসংগত ব্যাপার হইবে ।” পটল । ঐজন্যই তো যতীনের সঙ্গে আমার কোনোকালেই বনিল না, ছেলেবেলা থেকে কেবলই