পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ○○ রবীন্দ্র-রচনাবলী

  • যতীন কুড়ানির কপালে হাত দিয়া কহিল, “তুমি কেমন বোধ করিতেছি, কুড়ানি।”

কুড়ানি তাহার কোনো উত্তর না করিয়া যতীনের হাতটি আপনার কপালেই চাপিয়া রাখিয়া দিল । যতীন আবার জিজ্ঞাসা করিল, “ভালো বোধ হইতেছে ?” কুড়ানি একটুখানি চােখ বুজিয়া কহিল, “ই।” যতীন জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার গলায় এটা কী, কুড়ানি ।” কুড়ানি তাড়াতাড়ি কাপড়টা টানিয়া তাহা ঢাকিবার চেষ্টা করিল। যতীন দেখিল, সে একগাছি শুকনো বকুলের মালা । তখন তাহার মনে পড়িল, সে মালাটা কী । ঘড়ির টিকটিক শব্দের মধ্যে যতীন চুপ করিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল। কুড়ানির এই প্রথম লুকাইবার চেষ্টা- নিজের হৃদয়ের ভাব গোপন করিবার এই তাহার প্রথম প্ৰয়াস। কুড়ানি মৃগশিশু ছিল, সে কখন হৃদয়ভারাতুর যুবতী নারী হইয়া উঠিল। কোন রৌদ্রের আলোকে, কোন রৌদ্রের উত্তাপে তাহার বুদ্ধির উপরকার সমন্ত কুয়াশা কাটিয়া গিয়া তাহার লজ্জা, তাহার শঙ্কা, তাহার বেদনা এমন হঠাৎ গুণ কাশিত হইয়া পড়িল । রাত্ৰি দুটা-আড়াইটার সময় যতীন চৌকিতে বসিয়াই ঘুমাইয়া পডিয়াছে । হঠাৎ দ্বার খোলার শব্দে চমকিয়া উঠিয়া দেখিল, পটল এবং হরকুমারবাবু এক বড়ো ব্যাগ হাতে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিলেন । হরকুমার কহিলেন, “তোমার চিঠি পাইয়া কাল সকালে আসিব বলিয়া বিছানায় শুইলাম। অর্ধেক রাত্রে পটল কহিল, ‘ওগো, কাল সকালে গেলে কুন্ডানিকে দেখিতে পাইব না- আমাকে এখনই যাইতে হইবে ' পটলকে কিছুতেই বুঝাইয়া রাখা গেল না, তখনই একটা গাড়ি করিয়া বাহির হইয়া পডিয়াছি ?” হরকুমার ঈষৎ আপত্তির আড়ম্বর করিয়া যতীনের ঘরে গিয়া শুইয়া পড়িলেন, তাহার নিদ্রা যাইতেও দেরি হইল না । পটল ফিরিয়া আসিয়া যতীনকে ঘরের এক কোণে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আশা আছে ?” যতীন কুড়ানির কাছে আসিয়া তাহার নাডি দেখিয়া মাথা নাড়িয়া ইঙ্গিতে জানাইল যে, আশা নাই । পটল কুড়ানির কাছে আপনাকে প্রকাশ না করিয়া যতীনকে আড়ালে লইয়া কহিল, “যতীন, সত্য दाब्ला, ट्रभि कि कृ७निएक लाgनायाम ना ।" V যতীন পটলকে কোনো উত্তর না দিয়া কুড়ানির বিছানার পাশে আসিয়া বসিল । তাহার হােত চাপিয়া क्षत्रिग्रा नाड़ा निग्रा कश्लि, "कृ७ानि, कूgानि।" কুড়ানি চোখ মেলিয়া মুখে একটি শান্ত মধুর হাসির আভাসমােত্র আনিয়া কহিল, কী দাদাবাবু।” যতীন কহিল, “কুড়ানি, তোমার এই মালাটি আমার গলায় পরাইয়া দাও।” কুড়ানি অনিমেষ অবুঝ চোখে যতীনের মুখের দিকে তাকাইয়া রহিল। যতীন কহিল, “তোমার মালা আমাকে দিবে না ?” যতীনের এই আদরের প্রশ্রয়টুকু পাইয়া কুড়ানির মনে পূর্বকৃত অনাদরের একটুখানি অভিমান জাগিয়া উঠিল । সে কহিল, “কী হবে, দাদাবাবু।” শুনিয়া ক্ষণকালের জন্য কুড়ানি স্তন্ধ রহিল ; তাহার পরে তাহার দুই চক্ষু দিয়া অজস্র জল পড়িতে লাগিল ৷ যতীন বিছানার পাশে নামিয়া হাঁটু গাড়িয়া বসিল, কুড়ানির হাতের কাছে মাথা নত করিয়া রাখিল । কুড়ানি গলা হইতে মালা খুলিয়া যতীনের গলায় পরাইয়া দিল । তখন পটল তাহার কাছে আসিয়া ডাকিল, “কুড়ানি ।” कृद्धानि उठाशा नैीर्षं भृथं उच्चन्न कत्रिग्रा कश्नि, “मै, निनि ।।” পটল তাহার কাছে আসিয়া তাহার হাত ধরিয়া কহিল, “আমার উপর তোর আর কোনো রাগ নাই, বোন ?” কুন্ডানি সিন্ধকোমলদুটিতে কহিল, “না, দিদি ।”