পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 SR রবীন্দ্র-রচনাবলী শশধর । প্রকৃতির কঠোর শিক্ষাই যদি একমাত্র শিক্ষা হত। তবে বিধাতা বাপমায়ের মনে স্নেহটুকু দিতেন না। মন্মথ, তুমি যে দিনরাত কর্মফল কর্মফল করো আমি তা সম্পূর্ণ মানি না। প্রকৃতি আমাদের কাছ হতে কর্মফল কাঁড়ায় গাণ্ডায় আদায় করে নিতে চায় কিন্তু প্ৰকৃতির উপরে যিনি কর্তা আছেন তিনি মাঝে পড়ে তার অনেকটাই মহকৃপ দিয়ে থাকেন, নইলে কর্মফলের দেনা শুধতে শুধতে আমাদের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিকিয়ে যেত । বিজ্ঞানের হিসাবে কর্মফল সত্য, কিন্তু বিজ্ঞানের উপরেও বিজ্ঞান আছে, সেখানে প্রেমের হিসাবে ফলাফল সমান্ত অন্যরকম । কর্মফল নৈসৰ্গিক, মার্জনটা তার ళా శాt | মন্মথ । যিনি অনৈসৰ্গিক মানুষ তিনি যা খুশি করবেন, আমি অতি সামান্য নৈসৰ্গিক, আমি কর্মফল শেষ পর্যন্তই মানি । শশধর । আচ্ছা, আমি যদি সতীশের দেনা শোধ করে তাকে খালাস করি, তুমি কী করবে। মন্মথ । আমি তাকে ত্যাগ করব । দেখো, সতীশকে আমি যে ভাবে মানুষ করতে চেয়েছিলেম প্ৰথম হতেই বাধা দিয়ে তোমরা তা ব্যৰ্থ করেছ । এক দিক হতে সংযম আর-এক দিক হতে প্রশ্ৰয় পেয়ে সে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে । ক্রমাগতই ভিক্ষা পেয়ে যদি তার সম্মানবোধ এবং দায়িত্ববোধ চলে যায়, যে কাজের যে পরিণাম তোমরা যদি মাঝে পড়ে কিছুতেই তাকে তা বুঝতে না দাও, তবে তার আশা আমি ত্যাগ করলেম । তোমাদের মতেই তাকে মানুষ করে- দুই নীেকোয় পা দিয়েই তার বিপদ ঘটেছে । শশধর । ও কী কথা বলহু মন্মথ- তোমার ছেলে মন্মথ । দেখো শশধর, নিজের প্রকৃতি ও বিশ্বাস-মাতেই নিজের ছেলেকে আমি মানুষ করতে পারি, অন্য কোনো উপায় তো জানি না । যখন নিশ্চয় দেখছি তা কোনোমতেই হবার নয়, তখন পিতার দায়িত্ব আমি আর রাখব না । আমার যা সাধ্য তার বেশি। আমি করতে পারব না । OF sefa শশধর । কী করা যায় । ছেলেটাকে তো জেলে দেওয়া যায় না। অপরাধ মানুষের পক্ষে যত সর্বনেশেই হােক, জেলখানা তার চেয়ে ঢের বেশি । দশম পরিচ্ছেদ ভাদুড়িজায়া । শুনেছে ? সতীশের বাপ হঠাৎ মারা গেছে। মিস্টার ভাদুড়ি । হা, সে তো শুনেছি। জায়া । সে-যে সমান্ত সম্পত্তি হাসপাতালে দিয়ে গেছে, কেবল সতীশের মার জন্য জীবিতকাল পর্যন্ত ৭৫ টাকা মােসহরা বরাদ্দ করে গেছে । এখন কী করা যায় । ভাদুড়ি । এত ভাবনা কেন তোমার । জায়া। বেশ লোক যা হােক তুমি । তোমার মেয়ে যে সতীশকে ভালোবাসে সেটা বুঝি তুমি দুই চক্ষু মেলে দেখতে পাও না ! তুমি তো ওদের বিবাহ দিতেও প্রান্তত ছিলে । এখন উপায় কী করবে। ভাদুড়ি । আমি তো মন্মথর টাকার উপর বিশেষ নির্ভর করি নি। জায়া। তবে কি ছেলেটির চেহারার উপরেই নির্ভর করে বসেছিলে। অল্পবক্সটা বুঝি অনাবশ্যক ? ভাদুড়ি । সম্পূর্ণ আবশ্যক। যিনি যাই বলুন, ওর চেয়ে আবশ্যক আর-কিছুই নেই। সতীশের একটি মেসো আছে, বোধ হয় জান । জায়া । মেমো তো ঢের লোকেরই থাকে, তাতে ক্ষুধাশক্তি হয় না। ভাদুড়ি । এই মেসোটি আমার মকেল- অগাধ টাকা- ছেলেপূলে কিছুই নেই- বয়সও নিতান্ত অল্প নয়। সে তো সতীশকেই পোষ্যপুত্র নিতে চায়।