পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 রবীন্দ্র-রচনাবলী ডাক্তারের ওষুধ তো খেটে গেল। অস্থির হােস নে সতীশ । একমনে ভগবানকে ডাক- তার কাছে কোনো ডাক্তারই লাগে না । তিনি যদি সতীশ । আহা, তিনি যদি এখনো- এখনো সময় আছে । মা, এদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, কিন্তু যেরকম অন্যায় হল, সে ভাব রক্ষা করা শক্ত হয়ে উঠেছে । ঈশ্বরের কাছে ঐদের একটা দুর্ঘটনা না প্রার্থনা করে থাকতে পারছি নে- তিনি দয়া করে যেনে বিধু । আহা! তাই হােক, নইলে তোর উপায় কী হবে সতীশ, আমি তাই ভাবি । হে ভগবান, তুমি ζξο সতীশ । এ যদি না হয় তবে ঈশ্বরকে আমি আর মানব না । কাগজে নাস্তিকতা প্রচার করব । বিধু । আরো চুপ চুপ, এখন এমন কথা মুখে আনতে নেই । তিনি দয়াময়, তার দয়া হলে কী না ঘটতে পারে । সতীশ, তুই আজ এত ফিটফাট সাজ করে কোথায় চলেছিস । উচু কলার পরে মাথা যে আকাশে গিয়ে ঠেকািল ! ঘাড় হেঁট করবি কী করে । সতীশ । এমনি করে কলারের জোরে যতদিন মাথা তুলে চলতে পারি চলাব, তার পরে ঘাড় ঠোঁট করবার দিন যখন আসবে তখন এগুলো ফেলে দিলেই চলবে । বিশেষ কাজ আছে মা, চললেম, কথাবার্তা পরে হবে । [প্ৰস্থান বিধু । কাজ কোথায় আছে তা জানি । মাগো, ছেলের আর তব স্যা না ; এ বিবাহটা ঘটবেই ; আমি জানি, আমার সতীশের অদৃষ্ট খারাপ নয় ; প্রথমে বিত্ম যতই ঘটক, শেষকালটায় ওর ভালো হয়ই, এ আমি বরাবর দেখে আসছি । না হবেই বা কেন ? আমি তো জ্ঞাতসারে কোনো পাপ করি নি- আমি তো সতী স্ত্রী ছিলাম, সেইজনে আমার খুব বিশ্বাস হচ্ছে দিদির এবারে দ্বাদশ পরিচ্ছেদ সুকুমারী । সতীশ । সতীশ ; কী মাসিমা । সুকুমারী ! কাল যে তোমাকে খোকার কাপড় কিনে আনবার জন্য এত করে বললেম, অপমান বোধ হল বুঝি { সতীশ । অপমােন কিসের মাসিমা । কাল ভাদুড়ি-সাহেবের ওখানে আমার নিমন্ত্রণ ছিল তাইসুকুমারী { ভাদুডি-সাহেবের ওখানে তোমার এত ঘন ঘন যাতায়াতের দরকার কী, তা তো ভেবে পাই নে ! তারা সাহেব মানুষ, তোমার মতো অবস্থার লোকের কি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সাজে । আমি তো শুনলেম, তোমাকে তারা আজকাল পোছে না, তবু বুঝি ঐ রঙিন টাইয়ের উপর টাইবিং পরে বিলাতি কার্তিক সেজে তাদের ওখানে আনাগোনা কবিতেই হবে । তোমার কি একটুও সম্মানবোধ নেই । তাই যদি থাকবে। তবে কি কাজকর্মের কোনো চেষ্টা না করে এখানে এমন করে পডে থাকতে । তার উপরে আবার একটা কাজ করতে বললে মনে মনে রাগ করা হয়, পাছে ওঁকে কেউ বাড়ির সরকার মনে ক'রে ভুল করে । কিন্তু, সরকার ও তো ভালো- সে খেটে উপাৰ্জন কবে খায় । সতীশ । মাসিম, আমিও হয়তো তা পারতেম, কিন্তু তুমিই তো— সুকুমারী। তাই বটে । জানি, শেষকালে আমারই দোষ হবে । এখন বুঝছি তোমার বাপ তোমাকে ঠিক চিনতেন । তাই তোমাকে এমন করে শাসনে রেখেছিলেন । আমি আরো ছেলেমানুষ বলে দয়া করে তোমাকে ঘরে স্থান দিলেম, জেল থেকে বাচালেম, শেযকালে আমারই দোষ হল । একেই বলে কৃতজ্ঞতা !! আচ্ছা, আমারই নাহয় দোষ হল, তবু যে কদিন এখানে আমাদের অন্ন খােচ্ছ, দরকারমত দুটাে কাজই নাহয় করে দিলে। এমনকি কেউ করে না । এতে কি অত্যন্ত অপমান বোধ হয় ।