পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

55 88s শশধর । ঐ দেখো, তোমরা ছোটো কথাকে বড়ো করে তোল । যদিই বা সতীশ খোকাকে কখনো সুকুমারী । সে তুমি সহ্য করতে পাের, আমি পারব না- ছেলেকে তো তোমার গর্ভে ধরতে श्श नेि । শশধর । সে কথা আমি অস্বীকার করতে পারব না । এখন তোমার অভিপ্ৰায় কী শুনি । সুকুমারী । শিক্ষা সম্বন্ধে তুমি তো বড়ো বড়ো কথা বল, একবার তুমি ভেবে দেখো-না, আমরা হবেনাকে যেভাবে শিক্ষা দিতে চাই তার মাসি তাকে অন্যরূপ শেখায়- সতীশের দৃষ্টান্তটিই বা তার পক্ষে কিরূপ সেটাও তো ভেবে দেখতে হয় । শশধর । তুমি যখন অত বেশি করে ভাবিছ তখন তার উপরে আমার আর ভাববার দরকার কি আছে । এখন কর্তব্য কী বলো । সুকুমারী । আমি বলি সতীশকে তুমি বলো, তার মার কাছে থেকে সে এখন কাজকর্মের চেষ্টা দেখুক । পুরুষমানুষ পরের পয়সায় বাবৃগিরি করে, সে কি ভালো দেখতে হয় । শশধর r ওর মা যে টাকা পায় তাতে সতীশের চলবে কী করে । সুকুমারী ; কেন, ওদের বাড়ি ভাড়া লাগে না, মাসে পচাত্তর টাকা কম কী । শশধর । সতীশের যেরূপ চাল দাড়িয়েছে, পচাত্তর টাকা তো সে চুরুটের ডগাতেই ফুকে দেবে। মারা গহনাগাটি ছিল, সে তো অনেকদিন হল গেছে ; এখন হবিষ্যান্ন বাধা দিয়ে তো দেনা শোধ হবে না । সুকুমারী । যার সামর্থ কম তার অত লম্বা চালেই বা দরকার কী । শশধর । মন্মথ তো সেই কথাই বলত। আমরাই তো সতীশকে অন্যরূপ বুঝিয়েছিলেম। এখন ওকে দোষ দিই। কী করে । সুকুমারী ; না, দোষ কি ওর হতে পারে। সব দোষ আমারই ! তুমি তো আর কারও কোনো দোষ দেখতে পাও না- কেবল আমার বেলাতেই তোমার দর্শনশক্তি বেড়ে যায় । শশধর । ওগো, রাগ কর কেন- আমিও তো দোষী । সুকুমারী । তা হতে পারে । তোমার কথা তুমি জান । কিন্তু, আমি কখনো ওকে এমন কথা বলি নি যে, তুমি তোমার মেসোর ঘরে পায়ের উপর পা দিয়ে গোফে তা দাও, আর লম্বা কেদারায় বসে বসে আমার বাছার উপর বিষদৃষ্টি দিতে থাকো । শশধর । না, ঠিক ঐ কথাগুলো তুমি তাকে মাথার দিবা দিয়ে শপথ করিয়ে নাও নি- অতএব তোমাকে দোষ দিতে পারি। নে । এখন কী করতে হবে বলো । সুকুমারী । সে তুমি যা ভালো বোধ করা তাই করে । কিন্তু আমি বলছি, সতীশ যতক্ষণ এ বাড়িতে থাকবে, আমি খোকাকে কোনোমতে বাইরে যেতে দিতে পারব না । ডাক্তার খোকাকে হাওয়া খাওয়াতে বিশেষ করে বলে দিয়েছে।— কিন্তু হাওয়া খেতে গিয়ে ও কখন একলা সতীশের নজরে পড়বে, সে কথা মনে করলে আমার মন স্থির থাকে না । ও তো আমারই আপন বোনের ছেলে, কিন্তু আমি ওকে এক মুহুর্তের জন্যও বিশ্বাস করি নে- এ আমি তোমাকে স্পষ্টই বললেম । সতীশের প্রবেশ সতীশ । কাকে বিশ্বাস কর না মাসিমা । আমাকে ? আমি তোমার খোকাকে সুযোগ পেলে গলা টিপে মারব, এই তোমার ভয় ? যদি মারি তবে, তুমি তোমার বোনের ছেলের যে অনিষ্ট করেছ, তার চেয়ে ওর কি বেশি অনিষ্ট করা হবে । কে আমাকে ছেলেবেলা হতে নবাবের মতো শৌখিন করে তুলেছে এবং আজ ভিক্ষুকের মতো পথে বের করলে । কে আমাকে পিতার শাসন হতে কেড়ে এনে বিশ্বের লাঞ্ছনার মধ্যে টেনে আনলে । কে আমাকে সুকুমারী। ওগো, শুনিছ ? তোমার সামনে আমাকে এমনি করে অপমান করে ? নিজের মুখে