পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ዕ O রবীন্দ্র-রচনাবলী বললে কিনা খোকাকে গলা টিপে মারবে ? ওমা, কী হবে গো । আমি কালসাপকে নিজের হাতে দুধকলা দিয়ে পুষেছি। সতীশ । দুধকলা আমারও ঘরে ছিল- সে দুধকলায় আমার রক্ত বিষ হয়ে উঠত না- তা হতে চিরকালের মতো বঞ্চিত করে তুমি যে দুধকলা আমাকে খাইয়েছ, তাতে আমার বিষ জমে উঠেছে। সত্য কথাই বলছি, এখন আমাকে ভয় করাই চাই- এখন আমি দংশন করতে পারি। বিধুমুখীর প্রবেশ বিধু । কী সতীশ, কী হয়েছে, তোকে দেখে যে ভয় হয় । অমন করে তাকিয়ে আছিস কেন । আমাকে চিনতে পারছিস নে ? আমি যে তোর মা, সতীশ । সতীশ । মা, তোমাকে মা বলব কোন মুখে । মা হয়ে কেন তুমি আমার পিতার শাসন হতে আমাকে বঞ্চিত করলে । কেন তুমি আমাকে জেল হতে ফিরিয়ে আনলে । সে কি মাসির ঘর হতে ভয়ানক । তোমরা ঈশ্বরকে মা বলে ডাক, তিনি যদি তোমাদের মতো মা হন তবে তার আদর চাই নে, তিনি যেন আমাকে নরকে দেন । শশধর । আঃ সতীশ ! চলো চলো- কী বাকছত থামো | এসো, বাইরে আমার ঘরে এসো । ষোড়শ পরিচ্ছেদ শশধর । সতীশ, একটু ঠাণ্ডা হও । তোমার প্রতি অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে, সে কি আমি জানি নে । তোমার মাসি রাগের মুখে কী বলেছেন, সে কি আমন করে মনে নিতে আছে । দেখো, গোড়ায় যা ভুল হয়েছে তা এখন যতটা সম্ভব প্ৰতিকার করা যাবে, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো । সতীশ । মেসোমশায়, প্ৰতিকারের আর কোনো সম্ভাবনা নেই । মাসিমার সঙ্গে আমার এখন যেরূপ সম্পর্ক দাডিয়েছে তাতে তোমার ঘরের অন্ন আমার গলা দিয়ে আর গলবে না। এতদিন তোমাদের যা খরচ করিয়েছি তা যদি শেষ কডিটি পর্যন্ত শোধ করে না দিতে পারি, তবে আমার মরেও শান্তি নেই । প্ৰতিকার যদি কিছু থাকে তো সে আমার হাতে, তুমি কী প্ৰতিকার করবে । শশধর । না, শোনো সতীশ, একটু স্থির হও । তোমার যা কর্তব্য সে তুমি পরে ভেবে- তোমার সম্বন্ধে আমরা যে অন্যায় করেছি। তার প্রায়শ্চিত্ত তো আমাকেই করতে হবে । দেখো, আমার বিষয়ের এক অংশ আমি তোমাকে লিখে দেব- সেটাকে তুমি দান মনে কোরো না, সে তোমার প্রাপ্য । আমি সমস্ত ঠিক করে রেখেছি- পরশু শুক্রবারে রেজেষ্টি করে দেব । সতীশ । ( শশধরের পায়ের ধূলা লইয়া) মেসোমশায়, কী আর বলব- তোমার এই স্নেহেশশধর । আচ্ছা, থাক থাক । ও-সব স্নেহ-ফ্লোহ আমি কিছু বুঝি নে, রসকষ আমার কিছুই নেইযা কর্তব্য তা কোনোরকমে পালন করতেই হবে এই বুঝি। সাড়ে আটটা বাজল, তুমি আজ কোরিস্থিয়ানে যাবে বলেছিলে, যাও । সতীশ, একটা কথা তোমাকে বলে রাখি । দানপত্ৰখানা আমি মিস্টার ভাদুডিকে দিয়েই লিখিয়ে নিয়েছি । ভাবে বোধ হল, তিনি এই ব্যাপারে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন- তোমার প্রতি যে তার টান নেই এমন তো দেখা গেল না। এমন-কি, আমি চলে আসবার সময় তিনি আমাকে বললেন, সতীশ আজকাল আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে না কেন । [সতীশের প্রস্থান ওরে রামচরণ, তোর মা-ঠাকুরানীকে একবার ডেকে দে তো । সুকুমারীর প্রবেশ সুকুমারী। কী স্থির করলে । শশধর । একটা চমৎকার প্ল্যান ঠাউরেছি।