পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Test 8ᎶᏬ শশধর । আঁ্যা, সে কী কথা । বেলা যে বিস্তর হয়েছে । আজ এইখানেই খেয়ে যাও । সতীশ । আর খাওয়া নয় মেসোমশায় । এক দফা শোধ করলেম, অন্নঋণ আবার নূতন করে मैंगन(ठ *ालय ना । {थहीने সুকুমারী । বাপের হাত হতে রক্ষা করে এতদিন ওকে খাইয়ে-পরিয়ে মানুষ করলেম, আজ হাতে দূ-পয়সা আসতেই ভাবখানা দেখেছি ! কৃতজ্ঞতা এমনিই বটে ! ঘোর কলি কিনা । সতীশ । বড়োসাহেব হিসাবের খাতাপত্ৰ কাল দেখবেন । মনে করেছিলেম, ইতিমধ্যে “গানির টাকাটা নিশ্চয় পাওয়া যাবে, তহবিল পূরণ করে রাখব।— কিন্তু বাজার নেমে গেল । এখন জেল ছাড়া গতি নেই । ছেলেবেলা হতে সেখানে যাবারই আয়োজন করা গেছে । কিন্তু, অদৃষ্টকে ফাকি দেব । এই পিস্তলে দুটি গুলি পুরেছি— এই যথেষ্ট । নেলি- না না, ও নাম নয়, ও নাম নয়- আমি তা হলে মরতে পারব না । যদি-বা সে আমাকে ভালোবেসে থাকে, সে ভালোবাসা আমি ধূলিসাৎ করে দিয়ে এসেছি । চিঠিতে আমি তার কাছে সমস্তই কবুল করে লিখেছি । এখন পৃথিবীতে আমার কপালে যাব ভালোবাসা বাকি রইল সে আমার এই পিস্তল । আমার অস্তিমের প্ৰেয়সী, ললাটে তোমার চুম্বন নিয়ে চক্ষু মুদব । মেসোেমশায়ের এ বাগানটি আমারই তৈরি । যেখানে যত দুর্লভ গাছ পাওয়া যায় সব সংগ্রহ করে এনেছিলেম । ভেবেছিলেম, এ বাগান একদিন আমারই হবে । ভাগা কার জন্য আমাকে দিয়ে এই গাছগুলো রোপণ করে নিচ্ছিল তা আমাকে তখন বলে নি- তা হোক, এই ঝিলের ধারে এই বিলাতি স্টিফানেটিস লতার কুঞ্জে আমার এ জন্মের হাওয়া খাওয়া শেষ করব।— মৃত্যুর দ্বারা আমি এ বাগান দখল করে নেব- এখানে হাওয়া খেতে আসতে আর কেউ সাহস করবে না । মেসোেমশােয়কে প্ৰণাম করে পয়েব ধুলো নিতে চাই । পৃথিবী হতে ঐ ধূলোটুকু নিয়ে যেতে পারলে আমার মৃত্যু সার্থক হত । কিন্তু, এখন সন্ধ্যার সময় তিনি মাসিমার কাছে আছেন- আমার এ অবস্থায় মাসিমার সঙ্গে দেখা করতে আমি সাহস করি নে । বিশেষত পিস্তল ভরা আছে । মরবার সময় সকলকে ক্ষমা করে শান্তিতে মরার উপদেশ শাস্ত্ৰে আছে । কিন্তু, আমি ক্ষমা করতে পারলেম না । আমার এ মরবার সময় নয় । আমার অনেক সুখের কল্পনা, ভোগের আশা ছিল— অল্প কয়েক বৎসরের জীবনে তা একে একে সমস্তই টুকরা টুকরা হয়ে ভেঙেছে । আমার চেয়ে অনেক অযোগ্য, অনেক নির্বোিধ লোকের ভাগো অনেক অযাচিত সুখ জুটেছে, আমার জুটেও জুটল না— সেজন্য যারা দায়ী তাদের কিছুতেই ক্ষমা করতে পারব না— কিছুতেই না। আমার মৃত্যুকালের অভিশাপ যেন চিরজীবন তাদের পিছনে পিছনে ফেরে- তাদের সকল সুখকে কানা করে দেয় । তাদের তৃষ্ণার জলকে বাষ্প করে দেবার জন্য আমার দগ্ধ জীবনের সমস্ত দাহকে যেন আমি রেখে যেতে পারি । হায় ! প্ৰলাপ ! সমস্তই প্ৰলাপ! অভিশাপের কোনো বলই নেই। আমার মৃত্যু কেবল আমাকেই শেষ করে দেবে- আর কারও গায়ে হাত দিতে পারবে না । আঃ- তারা আমার জীবনটাকে একেবারে ছারখার করে দিলে, আর আমি মরেও তাদের কিছুই করতে পারলেম না । তাদের কোনো ক্ষতি হবে না- তারা সুখে থাকবে, তাদের দাঁতমােজা হতে আরম্ভ করে মশারি-ঝাড়া পর্যন্ত কোনাে তুচ্ছ কাজটিও বন্ধ থাকবে না- অথচ আমার সূর্য-চন্দ্র-নক্ষত্রের সমন্ত আলোক এক ফুৎকারে নিবল- আমার নেলি- উঃ, ও নাম নয় । ও কে ও ! হরেন ! সন্ধ্যার সময় বাগানে বার হয়েছে যে ! বাপ-মাকে লুকিয়ে চুরি করে কাচা