পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6圏@5壱 86 ዓ ঘাম ছুটিতে লাগিল। কোনোমতে আড়ষ্ট হইয়া নিজের শরীরটাকে যতদূর সংকীর্ণ করিতে হয় তাহা সে করিল, কিন্তু সে যতটুকু জায়গা ছাড়িয়া দিল ততটুকু জায়গা ভরিয়া উঠিল। মজুমদার মনে মনে তর্ক করিতে লাগিল যে, কোন প্রাচীন যুরোপীয় জ্ঞানী বলিয়াছেন। Nature abhors vacuumতাই তো দেখিতেছি । কিন্তু এটা কী রে !! এটা কি Nature ? যদি আমাকে কিছু না বলে তবে আমি এখনই ইহাকে সমস্ত জায়গাটা ছাডিয়া দিয়া লাফাইয়া পড়ি । লাফ দিতে সাহসী হইল না- পাছে পিছনের দিক হইতে অভাবিতপূর্ব একটা কিছু ঘটে । ‘পাহারাওয়ালা’ বলিয়া ডাক দিবার চেষ্টা করিল— কিন্তু বহুকষ্টে এমনই একটুখানি অদ্ভূত ক্ষীণ আওয়াজ বাহির হইল যে, অত্যন্ত ভয়ের মধ্যেও তাহার হাসি পাইল । অন্ধকারে ময়দানের গাছগুলো ভূতের নিন্তব্ধ পার্লামেন্টের মতো পরস্পর মুখামুখি করিয়া দাড়াইয়া রহিল, এবং গ্যাসের খুঁটিগুলো সমস্তই যেন জানে। অথচ কিছুই যেন বলিবে না এমনিভাবে খাড়া হইয়া মিটমিট আলোকশিখায় চােখ টিপিতে লাগিল। মজুমদার মনে করিল, চট করিয়া এক লফে সামনের আসনে গিয়া বসিবে । যেমনি মনে করা আমনি অনুভব করিল, সামনের আসন হইতে কেবলমাত্র একটা চাহনি তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া আছে । চক্ষু নাই, কিছুই নাই, অথচ একটা চাহনি । সে চাহনি যে কাহার তাহা যেন মনে পড়িতেছে অথচ কোনোমতেই যেন মনে আনিতে পাবিতেছি না ; মজুমদার দুই চক্ষু জোর করিয়া বুজিবার চেষ্টা করিল— কিন্তু ভয়ে বুজিতে পাির্থবল না। -- সেই অনিৰ্দেশ্য চাহনির দিকে দুই চোখ এমন শক্ত করিয়া মেলিয়া রহিল যে, নিমেষ /*८७ 2x ०: न्ताः : এ দিকে গাডিটা কেবলই ময়দানের রাস্তার উত্তর হইতে দক্ষিণে ও দক্ষিণ হইতে উত্তরে চক্রপথে ঘূরিতে লাগিল । ঘোড়া দুটাে ক্রমেই যেন উন্মত্ত হইয়া উঠিল— তাহাদের বেগ কেবলই বাডিয়া চলিল— গাডির খড় খড়েগুলো থারথার করিয়া কাপিয়া ঝরঝর শব্দ করিতে লাগিল । এমন সময় গাডিটা যেন কিসের উপর খুব একটা ধাক্কা খাইয়া হঠাৎ থামিয়া গেল। মজুমদার চকিত হইয়া দেখিল, তাহদেরই রাস্তায় গাড়ি দাড়াইয়াছে ও গাড়োয়ান তাহাকে নাড়া দিয়া জিজ্ঞাসা কবিতেছে, “সাহেব, কোথায় যাইতে হইবে বলে ।” মজুমদার রাগিয়া জিজ্ঞাসা কবিল, “এতক্ষণ ধরিয়া আমাকে ময়দানের মধ্যে ঘুরাইলি কেন ।” গাডোয়ান আশ্চর্য হইয়া কহিল, “কই, ময়দানের মধ্যে তো ঘুরাই নাই ।” মজুমদার বিশ্বাস না করিয়া কহিল, “তবে এ কি শুধু স্বপ্ন ।” গাডোয়ান একটু ভাবিয়া ভীত হইয়া কহিল, “বাবুসাহেব, বুঝি শুধু স্বপ্ন নহে। আমার এই গাড়িতেই আজ তিন বছর হইল একটা ঘটনা ঘটিয়াছিল।” মজুমদারের তখন নেশা ও ঘুমের ঘোর সম্পূৰ্ণ ছাডিয়া যাওয়াতে গাড়োয়ানের গল্পে কৰ্ণপাত না করিয়া ভাড়া চুকাইয়া দিয়া চলিয়া গেল। { কিন্তু রাত্রে তাহার ভালো করিয়া ঘুম হইল না- কেবলই ভাবিতে লাগিল, সেই চাহনিটা কার । S অধর মজুমদারের বাপ সামান্য শিপ-সরকারি হইতে আরম্ভ করিয়া একটা বড়ো, হীেসের মুঙ্গুন্দিগিরি পর্যন্ত উঠিয়াছিলেন । অধরবাবু বাপের উপার্জিত নগদ টাকা সুদে খাটাইতেছেন, তাহাকে আর নিজে খাটিতে হয় না । বাপ মাথায় সাদা ফোঁটা বাধিয়া পালকিতে করিয়া আপিসে যাইতেন, এ দিকে তাহার ক্রিয়াকর্ম দানধ্যান যথেষ্ট ছিল । বিপদে-আপদে অভাবে-অনটনে সকল শ্রেণীর লোকেই যে তাহাকে আসিয়া ধরিয়া পড়িত, ইহাই তিনি গর্বের বিষয় মনে করিতেন । অধরবাবু বড়ো বাড়ি ও গাড়ি-জুড়ি করিয়াছেন, কিন্তু লোকের সঙ্গে আর তাহার সম্পর্ক নাই ; কেবল টাকা-ধারের দালাল আসিয়া তাহার বাধানো উকায় তামাক টানিয়া যায় এবং অ্যাটনি আপিসের বাবুদের সঙ্গে স্ট্যাম্প-দেওয়া দলিলের শর্ত সম্বন্ধে আলোচনা হইয়া থাকে । তাহার সংসারে খরচপত্র