পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ና፲፭q8ጂ 8心@ হরলাল কহিল, “এ কী ব্যাপার । কখন আসিয়াহু ।” বেণু কহিল, “অনেকক্ষণ আসিয়াছি। আপনি যে এত দেরি করিয়া আপিস হইতে ফেরেন তাহা তো আমি জানিতাম না ।” বহুকাল হইল সেই- যে নিমন্ত্রণ খাইয়া গেছে তাহার পরে আর একবারও বেণু এ বাসায় আসে নাই । বলা নাই, কহা নাই, আজ হঠাৎ এমন করিয়া সে যে সন্ধ্যার সময় এই অন্ধকার ঘরের মধ্যে অপেক্ষা করিয়া বসিয়া আছে ইহাতে হরলালের মন উদবিগ্ন হইয়া উঠিল। উপরের ঘরে গিয়া বাতি জ্বালিয়া দুইজনে বসিল । হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “সব ভালো তো ? কিছু বিশেষ খবর আছে ?” বেণু কহিল, পড়াশুনা ক্রমে তাহার পক্ষে বড়োই একঘেয়ে হইয়া আসিয়াছে। কঁহতক সে বৎসরের পর বৎসর ঐ সেকেন্ড ইয়ারেই আটকা পড়িয়া থাকে । তাহার চেয়ে অনেক বয়সে-ছোটাে ছেলের সঙ্গে তাহাকে একসঙ্গে পড়িতে হয়- তাহার বড়ো লজা করে । কিন্তু বাবা কিছুতেই বোঝেন না । হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার কী ইচ্ছা ।” বেণু কহিল, তাহার ইচ্ছা সে বিলাত যায়, বারিস্টার হইয়া আসে । তাঁহারই সঙ্গে একসঙ্গে পড়িত, এমন-কি, তাহার চেয়ে পড়াশুনায় অনেক কাচা একটি ছেলে বিলাতে যাইবে স্থির হইয়া গেছে। হরলাল কহিল, “তোমার বাবাকে তোমার ইচ্ছা জানাইয়াছ ?” বেণু কহিল, “জানাইয়াছি। বাবা বলেন, পাস না করিলে বিলাতে যাইবার প্রস্তাব তিনি কানে আনিবেন না । কিন্তু আমার মন খারাপ হইয়া গেছে- এখানে থাকিলে আমি কিছুতেই পাস করিতে পারিব না ।” হরলাল চুপ করিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল। বেণু কহিল, “আজ এই কথা লইয়া বাবা আমাকে যাহা মুখে আসিয়াছে তাহাই বলিয়াছেন । তাই আমি বাড়ি ছাড়িয়া চলিয়া আসিয়াছি । মা থাকিলে এমন কখনোই হইতে পারিত না ।” বলিতে বলিতে সে অভিমানে কাদিতে লাগিল । হরলাল কহিল, “চলো আমি-সুদ্ধ তোমার বাবার কাছে যাই, পরামর্শ করিয়া যাহা ভালো হয় স্থির कां शादि ।” বেণু কহিল, “না, আমি সেখানে যাইব না।” বাপের সঙ্গে রাগারগি করিয়া হরলালের বাড়িতে আসিয়া বেণু থাকিবে, এ কথাটা হরলালের মোটেই ভালো লাগিল না । অথচ "আমার বাড়ি থাকিতে পরিবে না।” এ কথা বলাও বড়ো শক্ত । হরলাল ভাবিল, আর-একটু বাদে মনটা একটু ঠাণ্ডা হইলেই ইহাকে ভুলইয়া বাড়ি লইয়া যাইব । জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি খাইয়া আসিয়াছ ?” বেণু কহিল, “না, আমার ক্ষুধা নাই- আমি আজ খাইব না।” হরলাল কহিল, “সে কি হয় ।” তাড়াতাড়ি মাকে গিয়া কহিল, “মা, বেণু আসিয়াছে, তাহার জন্য কিছু খাবার চাই ।” শুনিয়া মা ভারি খুশি হইয়া খাবার তৈরি করিতে গেলেন। হরলাল আপিসের কাপড় ছাড়িয়া মুখহাত ধুইয়া বেণুর কাছে আসিয়া বসিল । একটুখানি কাশিয়া একটুখানি ইতন্তত করিয়া সে বেণুর কাধের উপর হাত রাখিয়া কহিল, “বেণু, কাজটা ভালো হইতেছে না। বাবার সঙ্গে ঝগড়া করিয়া বাড়ি হইতে চলিয়া আসা, এটা তোমার উপযুক্ত নয়।” শুনিয়া তখনই বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া বেণু কহিল, “আপনার এখানে যদি সুবিধা না হয় আমি সতীশের বাড়ি যাইব ।” বলিয়া সে চবিয়া যাইবার উপক্ৰম করিল। হরলাল তাহার হাত ধরিয়া কহিল, “রোসো, কিছু খাইয়া যাও।” বেণু রাগ করিয়া কহিল, “না, আমি খাইতে পারিব না।” বলিয়া হাত ছাড়াইয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল ।