পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

fret 8ፄ » হরলাল কাল শুনিয়াছে বেণুর বাপের বিয়ে, তাই শুনিয়া অবধি বাছার মনে শান্তি নাই। আহা, বেণুকে कएछ एलाgछा दा6म । মা জিজ্ঞাসা করিলেন, “আজ তবে তোমার আর মফস্বলে যাওয়া হইবে না ?” হরলাল কহিল, “না।” বলিয়াই তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া পড়িল । অধরবাবুর বাড়ি পীে ছিবার পূর্বেই দূর হইতে শোনা গেল রিসনটােকি আলেয়া রাগিণীতে করুণস্বরে আলাপ জুড়িয়া দিয়াছে, কিন্তু হরলাল দরজায় ঢুকিয়াই দেখিল, বিবাহবাড়ির উৎসবের সঙ্গে একটা যেন অশান্তির লক্ষণ মিশিয়াছে। দরোয়ানের পাহারা কড়াকড়ি, বাড়ি হইতে চাকরিবােকর কেহ বাহির হইতে পারিতেছে না- সকলেরই মুখে ভয় ও চিন্তার ভাব ; হরলাল খবর পাইল, কাল রাত্রে বাড়িতে অনেক টাকার গহনা চুরি হইয়া গেছে। দুই-তিনজন চাকরকে বিশেষভাবে সন্দেহ করিয়া পুলিসের হাতে সমর্পণ করিবার উদযোগ হইতেছে। হরলাল দোতলায় বারান্দায় গিয়া দেখিল, অধরবাবু আগুন হইয়া বসিয়া আছেন, ও রতিকান্ত তামাক খাইতেছে। হরলাল কহিল, “আপনার সঙ্গে গোপনে আমার একটু কথা আছে।” অধরবাবু চটিয়া উঠিয়া কহিলেন, “তোমার সঙ্গে গোপনে আলাপ করিবার এখন আমার সময় নয়- যাহা কথা থাকে। এইখানেই বলিয়া ফেলো ।” তিনি ভাবিলেন, হরলাল বুঝি এই সময়ে তাহার কাছে সাহায্য বা ধার চাহিতে আসিয়াছে। রতিকান্ত কহিল, “আমার সামনে বাবুকে কিছু জানাইতে যদি লজা করেন, আমি নাহয় উঠি ।” অধর বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “আঃ, বোসো-না ।” হরলাল কহিল, “কাল রাত্রে বেণু আমার বাড়িতে এই ব্যাগ রাখিয়া গেছে।” অধর । ব্যাগে কী আছে । হরলাল ব্যাগ খুলিয়া অধীরবাবুর হাতে দিল । অধর। মাস্টারে ছাত্রে মিলিয়া বেশ কারবার খুলিয়াছ তো । জানিতে এ চোরাই মাল বিক্রি করিলে ধরা পড়িবে, তাই আনিয়া দিয়াছ- মনে করিতেছি সাধুতার জন্য বকশিশ পাইবে ? তখন হরলাল অধরের পত্ৰখানা তাহার হাতে দিল । পড়িয়া তিনি আগুন হইয়া উঠিলেন । বলিলেন, “আমি পুলিসে খবর দিব। আমার ছেলে এখনো সাবালক হয় নাই- তুমি তাহাকে চুরি করিয়া বিলাত পাঠাইয়াছ । হয়তো পাচশো টাকা ধারা দিয়া তিন হাজার টাকা লিখাইয়া লইয়াছ। এ ধার। আমি শুধিব না ।” হরলাল কহিল, “আমি ধার দিই নাই ।” অধর কহিলেন, “তবে সে টাকা পাইল কোথা হইতে । তোমার বাক্স ভাঙিয়া চুরি করিয়াছে ?” হরলাল সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না । রতিকান্ত টিপিয়া টিপিয়া কহিল, “ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন-না, তিন হাজার টাকা কেন, পাচশো টাকাও উনি কি কখনো চক্ষে দেখিয়াছেন ।” যাহা হউক, গহনা চুরির মীমাংসা হওয়ার পরেই বেণুর বিলাত পালানো লইয়া বাড়িতে একটা হুলস্থূল পড়িয়া গেল। হরলাল সমস্ত অপরাধের ভার মাথায় করিয়া লইয়া বাড়ি হইতে বাহির হইয়া ठानि । রান্তায় যখন বাহির হইল। তখন তাহার মন যেন অসাড় হইয়া গেছে । ভয় করিবার এবং ভাবনা করিবারও শক্তি তখন ছিল না । এই ব্যাপারের পরিণাম যে কী হইতে পারে মন তাহা চিন্তা করিতেও bाईिल ना । গলিতে প্ৰবেশ করিয়া দেখিল তাহার বাড়ির সম্মুখে একটা গাড়ি দাড়াইয়া আছে। চমকিয়া উঠিল। হঠাৎ আশা হইল, বেণু ফিরিয়া আসিয়াছে। নিশ্চয়ই বেণু! তাহার বিপদ যে সম্পূর্ণ নিরুপায়রাপে চূড়ান্ত হইয়া উঠিবে। এ কথা সে কোনোমতেই বিশ্বাস করিতে পারিল না। তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে আসিয়া দেখিল, গাড়ির ভিতরে তাহদের আপিসের একজন সাহেব বসিয়া আছে। সাহেব হরলালকে দেখিয়াই গাড়ি হইতে নামিয়া তাহার হাত ধরিয়া বাড়িতে প্ৰবেশ