পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ve 8ԳԳ VO) গ্রামের নাম ধারাগোল। সেখানে মৃত্যুজয় মুন্দির দোকানে বসিয়া তামাক খাইতেছিল, আর অন্যমনস্ক হইয়া নানা কথা ভাবিতেছিল। কিছু দূরে মাঠের ধারা দিয়া একজন সন্ন্যাসী চলিয়া গেল । প্রথমটা মৃত্যুজয়ের মনোযোগ আকৃষ্ট হইল না। একটু পরে হঠাৎ তাহার মনে হইল, যে লোকটা চলিয়া গেল। এই তো সেই সন্ন্যাসী । তাড়াতাড়ি উঠুকাটি রাখিয়া মুদিকে সচকিত করিয়া একদীেড়ে সে দোকান হইতে বাহির হইয়া গেল। কিন্তু, সে সন্ন্যাসীকে দেখা গেল না । তখন সন্ধ্যা অন্ধকার হইয়া আসিয়াছে । অপরিচিত স্থানে কোথায় যে সন্ন্যাসীর সন্ধান করিতে যাইবে তাহা সে ঠিক করিতে পারিল না । দোকানে ফিরিয়া আসিয়া মুদিকে জিজ্ঞাসা করিল, “ঐ-যে মন্ত বন দেখা যাইতেছে, ওখানে কী আছে।” মুদি কহিল, “এককালে ঐ বন শহর ছিল কিন্তু অগত্য মুনির শাপে ওখানকার রাজা প্ৰজা সমস্তই মড়কে মরিয়াছে। লোকে বলে ওখানে অনেক ধনরত্ব আজও খুজিলে পাওয়া যায় ; কিন্তু দিনদুপুরেও ঐ বনে সাহস করিয়া কেহ যাইতে পারে না । যে গেছে সে আর • ফেরে নাই ।” মৃত্যুঞ্জয়ের মন চঞ্চল হইয়া উঠিল । সমস্ত রাত্রি মুদির দোকানে মাদুরের উপর পাড়িয়া মশার জ্বালায় সর্বাঙ্গ চাপড়াইতে লাগিল, আর ঐ বনের কথা, সন্ন্যাসীর কথা, সেই হারানো লিখনের কথা ভাবিতে থাকিল। বার বার পড়িয়া সেই লিখনটি মৃত্যুজয়ের প্রায় কণ্ঠস্থ হইয়া গিয়াছিল, তাই এই অনিদ্রাবস্থায় কেবলই তাহার মাথায় ঘুরিতে লাগিল

  • C 83 | রা নাহি দেয় রাধা । শেষে দিল রা,

Pfasfor URTV9 91 ti মাথা গরম হইয়া উঠিল— কোনোমতেই এই কটা ছত্র সে মন হইতে দূর করিতে পারিল না। অবশেষে ভোরের বেলায় যখন তাহার। তন্দ্ৰা আসিল তখন স্বপ্নে এই চারি ছত্রের অর্থ অতি সহজে তাহার নিকট প্রকাশ হইল । ‘রা নাহি দেয় রাধা” অতএব রাধার “রা’ না থাকিলে ‘ধা রহিল- “শেষে দিল রা', অতএব হইল ‘ধারা’- ‘পাগোল ছাড়ো পা- ‘পাগোল-এর ‘পা’ ছাড়িলে ‘গোল বাকি রহিল- অতএব সমান্তটা মিলিয়া হইল “ধারাগোল"- এ জায়গাটিার নাম তো "ধারাগোলই বটে । স্বপ্ন ভাঙিয়া মৃত্যুজয় লাফাইয়া উঠিল । 8 সমস্ত দিন বনের মধ্যে ফিরিয়া সন্ধ্যাবেলায় বহুকষ্টে পথ খুঁজিয়া আহারে মৃতপ্ৰায় অবস্থায় মৃত্যুজয় 3TG foyfoo ! পরদিন চাদরে চিড়া বাধিয়া পুনর্বার সে বনের মধ্যে যাত্ৰা করিল। অপরাহুে একটা দিঘির ধারে আসিয়া উপস্থিত হইল। দিঘির মাঝখানটা পরিষ্কার জল আর পাড়ের গায়ে গায়ে চারিদিকে পথ আর কুমুদের বন । পাথরে বাধানো ঘাট ভাঙিয়া চুরিয়া পড়িয়ছে, সেইখানে জলে চিড়া ভিজাইয়া খাইয়া দিঘির চারি দিক প্ৰদক্ষিণ করিয়া দেখিতে লাগিল । দিঘির পশ্চিমপাড়ির প্রান্তে হঠাৎ মৃত্যুজয় থমকিয়া দাড়াইল । দেখিল একটা তেঁতুলগাছকে বেষ্টন করিয়া প্ৰকাণ্ড বটগাছ উঠিয়াছে। তৎক্ষণাৎ তাহার মনে পড়িল তেঁতুল-বটের কোলে, দক্ষিণে যাও চলে ।