পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻司令项 8እፄ ভারটা নিজেই লইত- অপর পক্ষের ভূয়োভূয়ঃ আপত্তিতেও কৰ্ণপাত করিত না । এমনি করিয়া, যেখানে শৈলেন ছিল সেখানে সে চারি দিকের সকলেরই সকল বিষয়ে আশ্রয়স্বরূপ হইয়া উঠিয়াছিল । কেহ তাহার আশ্রয় স্বীকার না করিলে তাহার সেই ঔদ্ধত্য সে কোনোমতেই সহ্য করিতে পারিত না । লোকের হিত করিবার শখ তাহার এতই প্ৰবল । বেচারা কালীপদ নীচের স্যাতসেঁতে ঘরে ময়লা মাদুরের উপর বসিয়া একখানা ছেড়া গেজি পরিয়া বইয়ের পাতায় চোখ গুজিয়া দুলিতে দুলিতে পড়া মুখস্থ করিত। যেমন করিয়া হউক তাহাকে স্কলারশিপ পাইতেই হইবে । মা তাহাকে কলিকাতায় আসিবার পূর্বে মাথার দিব্য দিয়া বলিয়া দিয়াছিলেন বড়োমানুষের ছেলের সঙ্গে মেশামোশি করিয়া সে যেন আমোদপ্রমোদে মাতিয়া না ওঠে । কেবল মাতার আদেশ বলিয়া নহে, কালীপদকে যে দৈন্য স্বীকার করিতে হইয়াছিল তাহ রক্ষা করিয়া বড়োমানুষের ছেলের সঙ্গে মেলা তাহার পক্ষে অসম্ভব ছিল । সে কোনোদিন শৈলেনের কাছে ঘেঁষে নাই- এবং যদিও সে জানিত শৈলেনের মন পাইলে তাহার প্রতিদিনের অনেক দুরূহ সমস্যা এক মুহুর্তেই সহজ হইয়া যাইতে পারে তবু কোনো কঠিন সংকটেও তাহার প্রসাদ লাভের প্রতি কালীপদার লোভ আকৃষ্ট হয় নাই। সে আপনার অভাব লইয়া আপনার দারিদ্র্যের নিভৃত অন্ধকারের মধ্যে প্রচ্ছন্ন হইয়া বাস করিত । গরিব হইয়া। তবু দূরে থাকিবে শৈলেন এই অহংকারটা কোনোমতেই সহিতে পারিল না। তা ছাড়া অশনে বসনে কালীপদার দারিদ্র্যটা এতই প্ৰকাশ্য যে তাহা নিতান্ত দৃষ্টিকটু। তাহার অত্যন্ত দীনহীন কাপড়াচোপড় এবং মশারি বিছানা যখনই দোতলার সিঁড়ি উঠতে চোখে পড়িত তখনই সেটা যেন একটা অপরাধ বলিয়া মনে বাজিত । ইহার পরে, তাহার গলায় তাবিজ কুলানো, এবং সে দুই সন্ধ্যা যথাবিধি আহ্নিক করিত। তাহার এই সকল অদ্ভুত গ্ৰাম্যতা উপরের দলের পক্ষে বিষম হাস্যকর ছিল । শৈলেনের পক্ষের দুই-একটি লোক এই নিভৃতবাসী নিরীহ লোকটির রহস্য উদঘাটন করিবার জন্য দুই-চারিদিন তাহার ঘরে আনাগোনা করিল। কিন্তু এই মুখচোরা মানুষের মুখ তাহারা খুলিতে পারিল না । তাহার ঘরে বেশিক্ষণ বসিয়া থাকা সুখকর নহে, স্বাস্থ্যকর তো নয়ই, কাজেই ভঙ্গ দিতে হইল । তাহাদের পাঠার মাংসের ভোজে এই অকিঞ্চনকে একদিন আহবান করিলে সে নিশ্চয়ই কৃতাৰ্থ হইবে, এই কথা মনে করিয়া অনুগ্রহ করিয়া একদা নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হইল। কালীপদ জানাইল, ভোজের ভোজ্য সহ্য করা তাহার সাধ্য নহে, তাহার অভ্যাস অন্যরাপ ; এই প্ৰত্যাখ্যানে দলবল-সমেত শৈলেন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল । কিছুদিন তাহার ঠিক উপরের ঘরটাতে এমনি ধূপধ্যাপ শব্দ ও সবেগে গানবাজনা চলিতে লাগিল যে, কালীপদার পক্ষে পড়ায় মন দেওয়া অসম্ভব হইয়া উঠিল । দিনের বেলায় সে যথাসম্ভব গোলদিঘিতে এক গাছের তলে বই লইয়া পড়া করিত এবং রাত্ৰি থাকিতে উঠিয়া খুব ভোরের দিকে BBB sgu DB S DDO uDD DDD S কলিকাতায় আহার ও বাসস্থানের কষ্টে এবং অতিপরিশ্রমে কালীপদার একটা মাথা ধরার ব্যামো উপসর্গ জুটিল। কখনো কখনো এমন হইত তিন-চারিদিন তাহাকে পড়িয়া থাকিতে হইত। সে নিশ্চয় জানিত, এ সংবাদ পাইলে তাহার পিতা তাহকে কখনোই কলিকাতায় থাকিতে দিবেন না এবং তিনি ব্যাকুল হইয়া হয়তো বা কলিকাতা পর্যন্ত চুটিয়া আসিবেন । ভবানীচরণ জানিতেন। কলিকাতায় কালীপদ এমন সুখে আছে যাহা গ্রামের লোকের পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব। পাড়াগায়ে যেমন গাছপালা ঝোপঝাড়। আপনিই জন্মে কলিকাতার হওয়ায় সর্বপ্রকার আরামের উপকরণ যেন সেইরূপ আপনিই উৎপন্ন হয় এবং সকলেই তাহার ফলভোগ করিতে পারে এইরূপ তাহার একটা ধারণা ছিল । কালীপদ কোনোমতেই তাহার সে ভুল ভাঙে নাই। অসুখের অত্যন্ত কটের সময়ও সে একদিনও পিতাকে পত্র লিখিতে ছাড়ে নাই। কিন্তু এইরূপ পীড়ার দিনে শৈলেনের দল যখন গোলমাল করিয়া ভূতের কাণ্ড করিতে থাকিত তখন কালীপদার কাটের সীমা থাকিত না । সে কেবল এপােশ ওপােশ