পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

se ? ONS কালীপদ কহিল, “আমার বাক্স থেকে আপনারা নোট নিয়ে এসেছেন।” “এতবড়ো কথা ! আমাদের চোর বলতে চান !” কালীপদার হাতে যদি কিছু থাকিত তবে সেই মুহুর্তে সে খুনোখুনি করিয়া ফেলিত। তাহার রকম দেখিয়া চার-পাঁচজনে মিলিয়া তাহার হাত চাপিয়া ধরিল । সে জালাবদ্ধ বাঘের মতো গুমরাইতে লাগিল । এই অন্যায়ের প্রতিকার করিবার তাহার কোনো শক্তি নাই, কোনো প্ৰমাণ নাই- সকলেই তাহার সন্দেহকে উন্মত্ততা বলিয়া উড়াইয়া দিবে। যাহারা তাহাকে মৃত্যুবাণ মারিয়াছে তাহারা তাহার ঔদ্ধত্যকে অসহ্য বলিয়া বিষম আম্ফালন করিতে লাগিল । সে রাত্ৰি যে কালীপদার কেমন করিয়া কাটিল তাহ কেহ জানিতে পারিল না । শৈলেন একখানা একশো টাকার নেট বাহির করিয়া বলিল, “দাও, বাঙালটাকে দিয়ে এসো গে যাও ।” সহচররা কহিল, "পাগল হয়েছ ! তেজটুকু আগে মরুক- আমাদের সকলের কাছে একটা রিটন অ্যাপলজি আগে দিক, তার পরে বিবেচনা করে দেখা যাবে।” যথাসময়ে সকলে শুইতে গেল এবং ঘুমাইয়া পড়িতেও কাহারও বিলম্ব হইল না। সকালে কালীপদার কথা প্রায় সকলে ভুলিয়াই গিয়াছিল। সকালে কেহ কেহ সিঁড়ি দিয়া নীচে নামিবার সময় তাহার ঘর হইতে কথা শুনিতে পাইল । ভাবিল হয়তো উকিল ডাকিয়া পরামর্শ করিতেছে । দরজা ভিতর হইতে খিল-লাগানো । বাহিরে কান পাতিয়া যাহা শুনিল তাহার মধ্যে আইনের কোনো সংস্রব নাই, সমন্ত অসম্বন্ধ প্ৰলাপ । উপরে গিয়া শৈলেনকে খবর দিল । শৈলেন নামিয়া আসিয়া দরজার বাহিরে আসিয়া দাড়াইল । কালীপদ কী যে বকিতেছে ভালো বোঝা যাইতেছে না, কেবল ক্ষণে ক্ষণে “বাবা” “বাবা’ করিয়া চীৎকার of}{i \fồCoo | ভয় হইল, হয়তো সে নোটের শোকে পাগল হইয়া গিয়াছে। বাহির হইতে দুই-তিনবার ডাকিল, “কালীপদবাবু।” কেহ কোনো সাড়া দিল না। কেবল সেই বিড়বিড় বকুনি চলিতে লাগিল। শৈলেন পুনশ্চ উচ্চস্বরে কহিল, “কালীপদবাবু, দরজা খুলুন, আপনার সেই নোট পাওয়া গেছে। দরজা খুলিল না, কেবল বকুনির গুজনধ্বনি শোনা গেল । ব্যাপারটা যে এতদূর গড়াইবে তাহা শৈলেন কল্পনাও করে নাই। সে মুখে তাহার অনুচরদের কাছে অনুতাপবাক্য প্রকাশ করিল না, কিন্তু তাহার মনের মধ্যে বিধিতে লাগিল। সে বলিল, “দরজা ভাঙিয়া ফেলা যাক।” কেহ কেহ পরামর্শ দিলে, “পুলিস ডাকিয়া আনো- কী জানি পাগল হইয়া যদি হঠাৎ কিছু করিয়া বসে- কাল যেরকম কাণ্ড দেখিয়াছি- সাহস হয় না।” শৈলেন কহিল, “না, শীত্র একজন গিয়া অনাদি ডাক্তারকে ডাকিয়া আনো ।” অনাদি ডাক্তার বাড়ির কাছেই থাকেন। তিনি আসিয়া দরজায় কান দিয়া বলিলেন, “এ তো বিকার বলিয়াই বোধ হয় ।” দরজা ভাঙিয়া ভিতরে গিয়া দেখা গেলে- তক্তাপোশের উপর এলোমেলো বিছানা খানিকটা ভ্ৰষ্ট হইয়া মাটিতে লুটাইতেছে। কালীপদ মেজের উপর পড়িয়া- তাহার চেতনা নাই। সে গড়াইতেছে, ক্ষণে ক্ষণে হাত-পাড়িতেছে এবং প্ৰলাপ বকিতেছে- তাহার রক্তবর্ণ চোখ দুটাে খোলা এবং তাহার মুখে যেন রক্ত ফাটিয়া পড়িতেছে । আীয় কেহ আছে ?” শৈলেনের মুখ বিবৰ্ণ হইয়া গেল। সে ভীত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কেন বলুন দেখি।” ডাক্তার গম্ভীর হইয়া কহিলেন, “খবর দেওয়া ভালো, লক্ষণ ভালো নয় ।” শৈলেন কহিল, “ইহাদের সঙ্গে আমাদের ভালো আলাপ নাই- আৰ্জীয়ের খবর কিছুই জানি না । সন্ধান করিব । কিন্তু ইতিমধ্যে কী করা কর্তব্য ।”