পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GS) এমন সময়ে তিনি তাতের ইস্কুলের মাস্টারের খবর পাইলেন। সে থানাগড়ের বসাক বংশের ছেলে- তাহার পূর্বপুরুষ অভিরাম বসাকের নাম সকলেই জানে- এখন তাহদের অবস্থা হীন, কিন্তু কুলে তাহারা তাহদের চেয়ে বড়ো । দূর হইতে দেখিয়া গৃহিণীর ছেলেটিকে পছন্দ হইল। স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ছেলেটির পড়াশুনা কিরকম।” জানকীবাবু বলিলেন, “সে বালাই নাই। আজকাল যাহার পড়াশুনা বেশি, তাহাকে হিন্দুয়ানিতে আঁটিয়া ওঠা শক্ত ।” গৃহিণী প্রশ্ন করিলেন, “টাকাকড়ি ?” জানকীবাবু বলিলেন, “যথেষ্ট অভাব আছে। আমার পক্ষে সেইটেই লাভ।” গৃহিণী কহিলেন, “আত্মীয়স্বজনদের তো ডাকিতে হইবে।” জানকীবাবু কহিলেন, “পূর্বে অনেকবার সে পরীক্ষা হইয়া গিয়াছে ; তাহতে আত্মীয়স্বজনেরা দ্রুতবেগে চুটিয়া আসিয়াছে কিন্তু বিবাহ হয় নাই। এবারে স্থির করিয়াছি আগে বিবাহ ; DDS DDBBDDDD DBBD BB EBB rBLLDB BDB DDBD SS রসিক যখন দিনে রাত্রে তাহার গ্রামে ফিরিবার কথা চিন্তা করিতেছে- এবং হঠাৎ অভাবনীয়রূপে অতি সত্বর টাকা জমাইবার কী উপায় হইতে পারে তাহা ভাবিয়া কোনো কুলকিনারা পাইতেছে না, এমন সময় আহার ঔষধ দুইই তাহার মুখের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল। হা করিতে সে আর এক भूछूé दिब्नश् कब्रिटठ फ्राश्नि ना । জানকীবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার দাদাকে খবর দিতে চাও ?” রসিক কহিল, “না, তাহার কোনো দরকার নাই।” সমস্ত কাজ নিঃশেষে সারিয়া তাহার পরে সে দাদাকে চমৎকৃত করিয়া দিবে, অকৰ্মণ্য রসিকের যে সামর্থ্য কিরকম তাহার প্রত্যক্ষ প্রমাণে কোনো ত্রুটি থাকিবে না । শুভলগ্নে বিবাহ হইয়া গেল। অন্যান্য সকলপ্রকার দানসমগ্ৰীীর আগে রসিক একটা বাইসকল দাবি করিলে । তখন মাঘের শেষ । সরষে এবং তিসির ফুলে খেতি ভরিয়া আছে । আখের গুড় জ্বাল দেওয়া আরম্ভ হইয়াছে, তাহারই গন্ধে বাতাস যেন ঘন হইয়া উঠিয়াছে। ঘরে ঘরে গোলা-ভরা ধান এবং কলাই ; গোয়ালের প্রাঙ্গণে খড়ের গাদা কৃপাকার হইয়া রহিয়াছে। ওপারে নদীর চরে বাথানে রাখলেরা গোরুমহিষের দল লইয়া কুটির বাধিয়া বাস করিতেছে। খেয়াঘাটের কাজ প্রায় বন্ধ হইয়া গিয়াছে- নদীর জল কমিয়া গিয়া লোকেরা কাপড় গুটািইয়া ইটিয়া পার হইতে আরম্ভ করিয়াছে । রসিক কলার-পরানো শার্টের উপর মালকেঁচা মারিয়া ঢাকাই ধুতি পরিয়াছে ; শার্টের উপরে বোতাম-খোলা কালো কমাতের কোট, পায়ে রঙিন ফুলমোজা ও চকচকে কালে চামড়ার শৌখিন বিলাতি জুতা। ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের পাকা রান্তা বাহিয়া দ্রুতবেগে সে বাইসকল চালাইয়া আসিল ; গ্রামের কাচা রান্তায় আসিয়া তাহাকে বেগ কমাইতে হইল। গ্রামের লোকে হঠাৎ তাহার বেশভূষা দেখিয়া তাহাকে চিনিতেই পারিল না । সেও কাহাকেও কোনো সম্ভাষণ করিল না ; তাহার ইচ্ছা অন্য লোকে তাহাকে চিনিবার আগেই সর্বাগ্রে সে তাহার দাদার সঙ্গে দেখা করিবে । বাড়ির কাছাকাছি। যখন সে আসিয়াছে তখন ছেলেদের চোখ সে এড়াইতে পারিল না। তাহারা এক মুহুর্তেই তাহকে চিনিতে পারিল । সৌরভীদের বাডি কাছেই ছিল- ছেলেরা সেই দিকে ছুটিয়া চেচাইতে লাগিল, “সৈরিদিদির বর এসেছে, সৈরিদিদির বর।” গোপাল বাড়িতেই ছিল, সে চুটিয়া বাহির হইয়া আসিবার পূর্বেই বাইসকল রসিকদের বাড়ির সামনে আসিয়া থামিল । তখন সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছে, ঘর অন্ধকার, বাহিরে তালা লাগানো। জনহীন পরিত্যক্ত বাড়ির যেন নীরব একটা কান্না উঠিতেছে- কেহ নাই, কেহ নাই। এক নিমেষেই রসিকের বুকের ভিতরটা কেমন করিয়া উঠিয়া চোখের সামনে সমন্ত অস্পষ্ট হইয়া উঠিল । তাহার পা কঁাপিতে লাগিল ; বন্ধ দরজা ধরিয়া সে দাড়াইয়া রহিল, তাহার গলা শুকাইয়া গেল, কাহাকেও ডাক দিতে সাহসী হইল না। দূরে