পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(2\br রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী থামতে গেলে রসনা কূল পায় না। তিনের ছন্দে গতির প্রাবল্যই বেশি, স্থিতি কম। সুতরাং তিনের ছন্দ চাঞ্চল্যপ্রকাশের পক্ষে ভালো কিন্তু তাতে গাষ্ঠীর্ঘ এবং প্রসার অল্প । তিনের মাত্রার ছন্দে অমিত্ৰাক্ষর রচনা করতে গেলে বিপদে পড়তে হয়, সে যেন চাকা নিয়ে লাঠিখেলার চেষ্টা । পিয়ার আট পায়ে চলে বলে তাকে যে কতরকমে চালানো যায় মেঘনাদবধ কাব্যে তার প্রমাণ আছে । তার অবতারণাটি পরখ করে দেখা যাক । এর প্রত্যেক ভাগে কবি ইচ্ছামত ছোটো বড়ো নানা ওজনের নানা সুর বাজিয়েছেন ; কোনো জায়গাতেই পয়ারকে তার প্রচলিত আড্ডায় এসে থামতে দেন নি। প্রথম আরম্ভেই বীরবাহুর বীরমর্যাদা সুগভীর হয়ে বাজল- ‘সম্মুখসমরে পড়ি বীরচুড়ামণি বীরবাহু। তার পরে তার অকালমৃত্যুর সংবাদটি যেন ভাঙা রণপতাকার মতো ভাঙা ছন্দে ভেঙে পড়ল- “চলি যাবে গেলা যমপুরে অকালে । তার পরে ছন্দ নত হয়ে নমস্কার করলে- “কহ হে দেবি অমৃতভাবিশি। তার পরে আসল কথাটা, যেটা সব চেয়ে বড়ো কথা, সমস্ত কাব্যের ঘোর পরিণামের যেটা সূচনা, সেটা যেন আসন্ন ঝটিকার সুদীর্ঘ মেঘগর্জনের মতো এক দিগন্ত থেকে-আর-এক দিগন্তে উদঘোষিত হল- ‘কোন বীরবরে বরি সেনাপতিপদে পঠাইলা রণে পুনঃ রক্ষাকৃলনিধি রাঘবারি । বাংলা ভাষায় অধিকাংশ শব্দই দুই মাত্রার এবং তিন মাত্রার, এবং ত্রৈমাত্রিক শব্দের উপর বিভক্তিযোগে চার মাত্রার । পয়ারের পদবিভাগটি এমন যে, দুই, তিন এবং চার মাত্রার শব্দ তাতে সহজেই জায়গা পায় । চৈত্রের সেতারে বাজে বসন্তবাহার, বাতাসে বাতাসে ওঠে তরঙ্গ তাহার । এ পয়ারে তিন অক্ষরের ভিড় । আবার চকমকি-ঠোকাঠুকি-আগুনের প্রায় চোখোচোখি ঘটিতেই হাসি ঠিকরায় । at: 93TGg biGK 29ry | তারাগুলি সারারাতি কানে কানে কয়, সেই কথা ফুলে ফুলে ফুটে বনময় । এইখানে দুই মাত্রার আয়োজন । প্রেমের অমরাবতী প্ৰেয়সীর প্রাণে, কে সেথা দেবাধিপতি সে কথা কে জানে । এই পয়ারে এক থেকে পাচ পর্যন্ত সকলেরকম মাত্রারই সমাবেশ । এর থেকে জানা যায় পয়ারের আতিথেয়তা খুব বেশি, আর সেইজন্যই বাংলা কাব্যসাহিত্যে প্রথম থেকেই পয়ারের এত অধিক b07oR | 程 পয়ারের চেয়ে লম্বা দৌড়ের সমমাত্রার ছন্দ আজকাল বাংলাকাব্যে চলছে। স্বল্পপ্রয়ণে এর প্রথম প্রবর্তন দেখা গেছে। স্বল্পপ্রয়াণ থেকেই তার নমুনা তুলে দেখাই । গাষ্ঠীর পাতাল, যেথা কালরাত্রি করালবদনা বিস্তারে একাধিপত্য। শ্বাসয়ে অযুত ফণিফণা দিবানিশি ফাটি রোবে ; ঘোরনীল বিবৰ্ণ অনীল শিখাসংঘ আলোড়িয়া দাপাদাপি করে দেশময় তমোহন্ত এড়াইতে- প্ৰাণ যথা কালের কবল ! উচ্চারিত এবং অনুচ্চারিত মাত্রা নিয়ে পয়ার যেমন আট পদমাত্রায় সমান দুই ভাগে বিভক্ত এ তা নয়। এর এক ভাগে উচ্চারিত মাত্ৰা আট, অন্য ভাগে উচ্চারিত মাত্রা দশ । এইরকম অসমান ভাগে ছন্দের