পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(Ge এতক্ষণ এই যে ৯ মাত্রার ছন্দটাকে নিয়ে নয়-হয় করছিলুম সেটা বাহাদুরি করবার জন্যে নয়, প্রমাণ করবার জন্যে যে এতে বিশেষ বাহাদুরি নেই। ইংরেজি ছন্দে একসেনটের প্রতাব ; সংস্কৃত হঙ্গে দীর্ঘক্রুশ্বের সুনির্দিষ্ট ভাগ। বাংলায় তা নেই, এইজন্যে লয়ের দাবিরক্ষা ছাড়া বাংলা ছন্দে মাত্রা বাড়িয়ে-কমিয়ে চলার আর-কোনো বাধা নেই। জল পড়ে পাতা নড়ে থেকে আরম্ভ করে পাঁচ ছয় সাত আট নয় দশ মাত্রা পর্যন্ত বাংলা ছন্দে আমরা দেখি । এই সুযোগে কেউ বলতে পারেন, এগারো মাত্রায় ছন্দ বানিয়ে নতুন কীর্তি স্থাপন করব। আমি বলি, তা করো কিন্তু পুলকিত হােয়ো না, কেননা কাজটা নিতান্তই সহজ । দশ মাত্রার পরে আর-একটা মাত্রা যোগ করা একেবারেই দুঃসাধ্য ব্যাপার R I Real চামেলির ঘনছায়া-বিতানে বনবীণা বেজে ওঠে কী তানে । স্বপনে মগন সেথা মালিনী কুসুমমালায় গাথা শিথানে । অন্যরকমের মাত্রাভাগ করতে চাও সেও কঠিন ময় । যেমন তার পরে তেরো মাত্রার প্রস্তাবটা শুনতে লাগে খাপছাড়া এবং নতুন, কিন্তু পয়ার থেকে এক মাত্রা হরণ করতে দুঃসাহসের দরকার হয় না। সে কাজ অনেকবার করেছি, তা নিয়ে নালিশ ওঠে নি। RR গগনে গরজে মেঘ, ঘন করব । এক মাত্রা যোগ করে পয়ারের জ্ঞাতিবৃদ্ধি করাও খুবই সহজ । যথা হে বীর, জীবন দিয়ে মরণেরে জিনিলে, নিজেরে নিঃস্ব করি বিশ্বেরে কিনিলে । বোলো মাত্রার ছন্দ দুর্লভ নয়। অতএব দেখা যাক সতেরো মাত্রা নদীতীরে দুই | কূলে কৃলে | কাশবন দুলি | ছো। পূৰ্ণিমা তারি | ফুলে ফুলে | আপনারে ভুলি | ছো। আঠারো মাত্রার ছন্দ সুপরিচিত। তার পরে উনিশ ঘন মেঘভার গগনতলে, বনে বনে ছায়া তারি, একাকিনী বসি নয়নজলে কোন বিরাহিণী নায়ী। তার পরে কুড়ি মাত্রার ছন্দ সুপ্রচলিত। একুশ মাত্রা, যথা বিচলিত কেন মাধবীশাখা, মািতরি কঁপে থরথর । কোন কথা তার পাতায় ঢাকা চুপিচুপি করে মরমর। তার পরে- আর কােজ নেই। বোধ হয় যথেষ্ট প্রমাণ করতে পেরেছি যে, বাংলায় নতুন ছন্দ তৈরি করতে অসাধারণ নৈপুণ্যের দরকার করে না ।