পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছন্দ । @由> আমাদের পঞ্জিকা-অনুসারে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ করে চৈত্রসংক্রান্তিতে তার আবর্তনের এক পর্যায় শেষ হয়, তার পরে আবার সেই পরিমিতকালে পয়লা বৈশাখ থেকে পুনর্বাের তার আবর্তন শুরু হয়। এই পুনরাবর্তনের দিকে লক্ষ করে আমরা বলতে পারি, পৃথিবীর সূর্যপ্ৰদক্ষিণের মাত্ৰাসংখ্যা ৩৬৫ দিন । মহাভারতের কথা অমৃতসমান, • কাশীরামদাস কহে শুনে পুণ্যবান। এই ছন্দের যাত্রাপথে পুনরাবর্তন আরম্ভ হয়েছে কোথায় সে তো জানা কথা । সেই অনুসারে সর্বজনে বলে থাকে, এর মাত্ৰাসংখ্যা চোদ । বলা বাহুল্য, এই চোদ মাত্রা একটা অখণ্ড নিরেট পদার্থ নয় । এর মধ্যে জোড় দেখা যায়, সেই জোড় আট মাত্রার অবসানে, অর্থাৎ "মহাভারতের কথা একটুখানি দাড়িয়েছে যেখানে এসে । পয়ারে এই দাড়াবার আডা দু জায়গায়, প্ৰথম আট ধ্বনিমাত্রার পরে ও শেষার্ধের ছয় ধ্বনি মাত্রার ও দুই যতিমাত্রার শেষে । পৃথিবীর প্রদক্ষিণ-ছন্দের মধ্যেও দুইভাগ আছে, উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন । যতি-সমেত যোলো মাত্রা পয়ারেও তেমনি আছে উত্তরভাগ ও দক্ষিণভাগ, কিন্তু সেই দুটি ভাগ সমগ্রেরই অন্তর্গত । মহাভারতের বাণী অমৃতসমান মানি, কাশীরামদাস ভনে শোনে তাহা সৰ্ব্বজনে । যদিও পয়ারের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ তবু একে অন্য ছন্দ বলব, কারণ এর পুনরাবর্তন আট মাত্রায়, (षष्ठीं ! न्ट्र । আঁধার রজনী পোহালো, জগৎ পুরিল পুলকে । এই ছন্দের আবর্তন ছয় মাত্রার পর্যায়ে ঘটে না, তার কক্ষপথ সম্পূৰ্ণ হয়েছে ৯ মাত্রায় । নয় মাত্রায় তার প্রদক্ষিণ নিজেকে বারে বারে বহুগুণিত করছে। এই নয় মাত্রায়’মাঝে-মাঝে সমভাগে জোড়ের বিচ্ছেদ আছে । সেই জোড় ছয় মাত্রায় না, তিন মাত্রায় । এই ছন্দের লক্ষণ কী । প্রশ্নের উত্তর এই যে, এর পূর্ণভাগ নয় মাত্রা নিয়ে, আংশিক ভাগ তিন, এবং সেই প্ৰত্যেক ভাগের মাত্ৰাসংখ্যা তিন । কোনো পাঠক যদি ছয় মাত্রার পরে এসে ইপি ছাড়েন, তাকে বাধা দেবার কোনো দণ্ডবিধি নেই ; সুতরাং সেটা তিনি নিজের স্বচ্ছন্দেই করবেন, আমার ছন্দে করবেন না । আমার ছন্দের লক্ষণ এই- প্ৰত্যেক পদে তিনি কলা, প্ৰত্যেক কলায় তিন মাত্রা, অতএব সমগ্ৰ পদের মাত্রাসমষ্টি ৯ । অমূল্যবাবু এটিকে নিয়ে যে ছন্দ বানিয়েছেন তার প্রত্যেক পদে দুই কলা । প্রথম কলার মাত্ৰাসংখ্যা ছয়, দ্বিতীয় কলার তিন, অতএব সমগ্ৰ পদের মাত্রাসমষ্টি ৯ । দুটি ছন্দেরই মোট আয়তন একই হবে, কানে শোনাবে ভিন্নরকম । ছান্দসিক যাই বলুন, এখানে ছন্দরচয়িতা হিসাবে আমার আবেদম আছে । ছন্দের তত্ত্ব সম্বন্ধে আমি যা বলি সেটা আমার অশিক্ষিত বলা, সুতরাং তাতে দোষ স্পর্শ করতে পারে ; কিন্তু ছন্দের রস সম্বন্ধে আমি যদি কিছু আলোচনা করি, সংকোচ করব না, কেননা ছন্দ সৃষ্টিতে অশিক্ষিতাপটুত্বের মূল উপেক্ষা করবার নয় । ‘আধার রজনী পোহালো’ রচনাকালে আমার কান যে আনন্দ পেয়েছিল সেটা অন্যছন্দোজনিত আনন্দ থেকে বিশেষভাবে স্বতন্ত্র । কারণটা বলি । অন্যত্র বলেছি, দুই মাত্রায় স্থৈৰ্য আছে, কিন্তু বেজোড় বলেই তিন মাত্রা অস্থির। ত্রৈমাত্রিক ছন্দে সেই অস্থিরতার বেগটাকে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয় । বিংশতি কোটি মানবের বাস এ ভারতভুমি যবনের দাস রয়েছে পড়িয়া শৃঙ্খলে বাধা ।