পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ሉ bro রবীন্দ্র-রচনাবলী তার থেকে দেখা যায়, প্রাচীনকালেও ছন্দের মূলতত্ত্বটি গদ্যে পদ্যে উভয়ত্ৰই স্বীকৃত। অর্থাৎ, যে পদবিভাগ বাণীকে কেবল অর্থ দেবার জন্যে নয়, তাকে গতি দেবার জন্যে, তা সমমাত্রায় না হলেও তাতে ছন্দের স্বভাব থেকে যায় । পদ্যছন্দের প্রধান লক্ষণ পঙক্তিসীমানায় বিভক্ত তার কাঠামো। নির্দিষ্টসংখ্যক ধ্বনিগুচ্ছে এক-একটি পঙক্তি সম্পূর্ণ। সেই পঙক্তিশেষে একটি করে বড়ো যতি। বলা বাহুল্য, গদ্যে এই নিয়মের শাসন নেই। গদ্যে বাক্য যেখানে আপন অর্থ সম্পূর্ণ করে সেইখানেই তার দাড়াবার জায়গা । পদ্যছন্দ যেখানে আপনি ধ্বনিসংগতিকে অপেক্ষাকৃত বড়ো রকমের সমাপ্তি দেয়, অর্থনির্বিচারে সেইখানে পঙক্তি শেষ করে। পদ্য সব-প্রথমে এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে অমিত্ৰাক্ষর ছন্দে, পঙক্তির বাইরে পদচারণা শুরু করলে । আধুনিক পদ্যে এই স্বৈরাচার দেখা দিল পয়ারকে আশ্রয় করে । বলা বাহুল্য, এক মাত্রা চলে না। বৃক্ষ ইব স্তন্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকঃ । যেই দুইয়ের সমাগম আমনি হল চলা শুরু । থাম আছে এক পায়ে দাড়িয়ে থেমে । জন্তুর পা, পাখির পাখা, মাছের পাখনা দুই সংখ্যার যোগে চলে । সেই নিয়মিত গতির উপরে যদি আর-একটা একের অতিরিক্ত ভার চাপানো যায়। তবে সেই গতিতে ভারসাম্যের অপ্রতিষ্ঠিতা প্ৰকাশ পায় । এই অনিয়মের ঠেলায় নিয়মিত গতির বেগ বিচিত্র হয়ে ওঠে। মানুষের দেহটা তার দৃষ্টান্ত । আদিমকালের চারপেয়ে মানুষ আধুনিক কালে দুই পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তার কোমর থেকে পদতল পর্যন্ত দুই পায়ের সাহায্যে মজবুত, কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত টলমলে । এই দুই ভাগের অসামঞ্জস্যকে সামলাবার জন্যে মানুষের গতিতে মাথা হাত কোমর পা বিচিত্র হিল্লোলে হিল্লোলিত । পাখিও দুই পায়ে চলে, কিন্তু তার দেহ স্বভাবতই দুই পায়ের ছন্দে নিয়মিত । টলবার ভয় নেই তার । দুই মাত্রায় অর্থাৎ জোর মাত্রায় যে পদ বাধা হয় তার মধ্যে দাড়ানোও আছে, চলাও আছে ; বেজোড় মাত্রায় চলার ঝোকটাই প্ৰধান । এইজন্যে অমিত্ৰাক্ষরে যেখানে-সেখানে থেমে যাবার যে নিয়ম আছে সেটা পালন করা বিষম মাত্রার ছন্দের পক্ষে দুঃসাধ্য । এইজন্যে বেজোড় মাত্রায় পদ্যধর্মই একান্ত প্রবল। চেষ্টা করে দেখা যাক বেজোড় মাত্রার দরজাটা খুলে দিয়ে। প্রথম পরীক্ষা হােক তিন মাত্রার মহলে । বিরহী গগন ধরণীর কাছে পাঠালো লিপিকা । দিকের প্রান্তে নামে তাই মেঘ, বহিয়া সািজল বেদনা ; বহিয়া তড়িৎ-চকিত ব্যাকুল আকৃতি । উৎসুক ধরা ধৈর্য হারায়, পাৱে না লুকাতে বুকের র্কাপন পল্লবদলে । বকুলকুজে রচে সে প্রাণের মুগ্ধ প্ৰলাপ ; উল্লাস ভাসে চামেলিগন্ধে পূর্বপবনে । পয়ার ছন্দের মতো এর গতি সিধে নয় । এই তিন মাত্রার এবং জোড়-বিজোড় মাত্রার ছন্দে পদক্ষেপ মাঘনৈষধের নায়িকাদের মতো মরালগমনে, ডাইনে-বায়ে ঝোকে-ঝোকে হেলতে—দুলতে । এবার যে-ছেন্দের নমুনা দেব সেটা তিন-দুই মাত্রার, গানের ভাষায় বঁপতাল-জাতীয় । চিত্ত আজি দুঃখদোলে আন্দোলিত। দূরের সুর বক্ষে লাগে । অঙ্গনের সম্মুখেতে পান্থ মাম VYfC fC 5s দিগন্তরে । বিরহবেণু