পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO O রবীন্দ্র-রচনাবলী কলকলনি আছে। গীতাঞ্জলি’ হইতে আপনি আমার যে লাইনগুলি তুলিয়া দিয়াছেন তাহা আমাদের চলতি ভাষার হসন্ত সুরের লাইন । আমার সকল কাটা ধন্য করে ফুটবে গো ফুল ফুটবে। আমার সকল ব্যথা রঙিন হয়ে গোলাপ হয়ে উঠবে। আপনি লক্ষ্য করিয়া দেখিবেন এই ছন্দের প্রত্যেক গাঠে গাঠে একটি করিয়া হসন্তের ভঙ্গি আছে। "ধন্য’ শব্দটার মধ্যেও একটা হসন্ত আছে। উহা “ধনীন” এই বানানে লেখা যাইতে পারে। এইটে সাধু ভাষার ছন্দে লিখিলাম যত কাটা মম সফল করিয়া ফুটিবে কুসুম ফুটিবে। সকল বেদনা অরুণ বরনে গোলাপ হইয়া উঠিবে। অথবা যুক্তবর্ণকে যদি এক মাত্রা বলিয়া ধরা যায়। তবে এমন হইতে পারে সকল কণ্টক সার্থক করিয়া কুসুমন্তবক ফুটিবে। বেদনা যন্ত্রণা রক্তমূর্তি ধরি গোলাপ হইয়া উঠিবে। এমনি করিয়া সাধু ভাষার কাব্যসভায় যুক্তবর্ণের মৃদঙ্গটা আমরা ফুটা করিয়া দিয়াছি এবং হসন্তর ধাশির ফ্যাকগুলি সীসা দিয়া ভর্তি করিয়াছি। ভাষার নিজের অন্তরের স্বাভাবিক সুরটাকে রুদ্ধ করিয়া দিয়া বাহির হইতে সুর যোজনা করিতে হইয়াছে। সংস্কৃতভাষার জবি-জহরতের ঝালরওয়ালা দেড়-হাত দুই-হাত ঘোমটার আড়ালে আমাদের ভাষাবিধুটির চোখের জল মুখের হাসি সমস্ত ঢাকা পডিয়া গেছে, তাহার কালো চোখের কাটাক্ষে যে কত তীক্ষতা তাহা আমরা ভুলিয়া গেছি। আমি তাহার সেই সংস্কৃত ঘোমটা খুলিয়া দিবার কিছু সাধনা করিয়াছি তাহাতে সাধু লোকেরা ছি ছি করিয়াছে। সাধু লোকেরা জরির আঁচলাটা দেখিয়া তাহার দর যাচাই করুক ; আমার কাছে চোখের চাহনিটুকুর দীর তাহার চেয়ে অনেক বেশি ; সে যে বিনামূল্যের ধন, সে ভট্টাচার্যপাডার হাটে বাজারে भवन कीं । छार्छ S०२S R সম্মুখসমরে পড়ি বীরচুড়ামণি বীরবাহএই বাক্যটি আবৃত্তি করিবার সময়ে আমরা সম্মুখ শব্দটার উপরে ঝোক দিয়া সেই এক ঝোকে একেবারে ‘বীরবাহু' পর্যন্ত গড় গড় করিয়া চলিয়া যাইতে পারি। আমরা নিশ্বাসটার বাজে-খরচ করিতে নারাজ, এক নিশ্বাসে যতগুলা শব্দ সারিয়া লইতে পারি ছাড়ি না । আপনাদের ইংরাজি বাক্যে সেটা সম্ভব হয় না, কেননা, আপনাদের শব্দগুলা বেজায় রোখা মেজাজের । তাহারা প্ৰত্যেকেই টু মারিয়া নিশ্বাসের শাসন ঠেলিয়া বাহির হইতে চায় । She was absolutely authentic, new, and inexpressible- a KTP Sef RCrow vT সব কটাই উচু হইয়া উঠিয়া নিশ্বাসের বাতাসটাকে ফুটবলের গোলার মতো এক মাথা হইতে আর-এক মাথায় ষ্টুড়িয়া ষ্টুড়িয়া চালান করিয়া দিতেছে । প্রত্যেক ভাষারই একটা স্বাভাবিক চলিবার ভঙ্গি আছে। সেই ভঙ্গিটারই অনুসরণ করিয়া সেই ভাষার নিত্য অর্থাৎ তাহার ছন্দ রচনা করিতে হয় । এখন দেখা যাক, আমাদের ভাষার চাল-চলনটা কী রকম । ১ গীতিমাল্য ?