পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO SR রবীন্দ্র-রচনাবলী এরূপ ছন্দ হালকা কাজে চলে, ইহা যুক্ত-অক্ষরের ভার সয় না এবং সাতকাণ্ড বা অষ্টাদশ পর্ব জুড়িয়া লম্বা দৌড় ইহার পক্ষে অসাধ্য। চৌপদীটা পয়ারের সহােদর বোন। আট মাত্রায় তাহার পা পড়ে, কেবল তাহার পোয়ে মিলের মালজোড়ার ঝংকারটা কিছু বেশি। বাহিরের চেহারা দেখিয়া ছন্দের জাতিনির্ণয় করায় যে প্ৰমাদ ঘটিতে পারে তাহার একটা দৃষ্টান্ত এইখানে দিই। একদিন আমার মাথায় একটা হয় মাত্রার ছন্দ আসিয়া হাজির হইয়াছিল । তাহার চেহারাটা এইয়াকম প্ৰথম শীতের মাসে, শিশির লাগিল ঘাসে, হুহু করে হওয়া আসে হিহি করে কাপে গাত্ৰ । গোটা কয়েক শ্লোক যখন লেখা হইয়া গেছে তখন হঠাৎ উইশ হইল যে, আকারে-আয়তনে চৌপদীর সঙ্গে ইহার কোনো তফাত নাই, অতএব পাঠকেরা আট মাত্রার ক্টোক দিয়াই ইহা পড়িবে- তখন আমি হাল ছাড়িয়া দিয়া চৌপদীর দন্তরেই লিখিতে লাগিলাম। এই ছন্দটিকে ছয় মাত্রার কায়দায় পড়িতে হইলে নিম্নলিখিত-মাত ভাগ হয় প্ৰথম শীতের । মাসে শিশির লাগিল । ঘাসেআমাদের দেশের সংগীতের তাল যদি আপনার জানা থাকে। তবে এক কথায় বলিলেই বুঝিবেন, চৌপদীতে কাওয়ালির লয়ে ক্টোক দিতে হয় এবং আমি যে ছন্দটা লক্ষ্য করিয়া লিখিতেছিলাম তাহার তাল একতালা । কাওয়ালি দুইবর্গ মাত্রার তাল, এবং একতালা তিনবর্গ মাত্রার । ত্রিপদীরও মোটের উপর আট মাত্রা চাল । যথা ভবানীর কটুভাযে । লাজা হৈল কীর্তিবাসে, ক্ষুধানলে কলেবর । WOR | তৃতীয় পদে দুটা মাত্রা বেশি আছে ; তাহার কারণ, যে চতুর্থ পদটি থাকিলে এই ছন্দের ভারসামঞ্জস্য থাকিত সেটি নাই । ‘কুধানলে কলেবর পর্যন্ত আসিয়া থামিতে গেলে ছন্দটা কান্ত হইয়া পড়ে এইজন্য ‘দহে একটা যোগ করিয়া ছোটাে একটি ঠেকা দিয়া উহাকে খাড়া রাখা হইয়াছে। চতুষ্পদ জন্তুর পায়ের তেলোটা চওড়া হয় না, কিন্তু মানুষের খাড়া শরীরের টলটলে ভারটা দুই পায়ের পক্ষে বেশি হওয়াতেই তাহার পদতলটা গোড়ালি ছাড়াইয়া সামনের দিকে খানিকটা বিস্তীৰ্ণ ; সেইটুকুই ত্রিপদীর ঐ শেষ দুটাে অতিরিক্ত মাত্ৰা । এইরূপ অনেকগুলি ছন্দ দেখা যায় যাহাতে খানিকটা করিয়া বড়ো মাত্রাকে একটি করিয়া ছোটাে মাত্রা দিয়া বাধা দিবার কায়দা দেখা যায়। দশ মাত্রার ছন্দ তাহার দৃষ্টান্ত । ইহার ভাগ আট + দুই, অথবা চার+ চার+দুই মোর পানে। চাহ মুখ । তুলি, পরশিব। চরণের। ধূলি । ছয় মাত্রার ছন্দেও এরূপ বড়ো-ছোটোর ভাগ চলে। সেই ভাগ ছয়-4-দুই অথবা তিন+তিন+দুই । Raa