পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Re RO ব বান্দ্ৰ ۔ চনাবলী এই পা ফেলে চলার মাঝে মাঝে যতি পাওয়া যায় যথেষ্ট, ইচ্ছা করলে তাকে বাড়ানো-কমানো চলে । কিন্তু, তিন মাত্রার তালটা যেন গোল গড়নের, গড়িয়ে চলে ; পরস্পরকে ঠেলে নিয়ে দৌড় দেয় । চলিতে চলিতে চরণে উছলে চলিবার ব্যাকুলতা, নূপুরে নূপুরে বাজে বনতােল মনের অধীর কথা । এইজনো মাত্রা যদি কোথাও তিনের মাপের একটু বেশি হয়। এ ছন্দ তাকে প্রসন্নমনে জায়গা দিতে পারে না ; দায়ে পড়ে এই অত্যাচার কখনো করি নি এমন কথা বলতে পারব না ; প্ৰভু বুদ্ধ লাগি আমি ভিক্ষা মাগি, ওগো পুরবাসী, কে রয়েছ জাগি, অনাথাপিণ্ডদ কহিলা অম্বুদ নিনাদে ! এ কথা বোঝা শক্ত নয় যে, ‘অনাথাপিণ্ডদ’ নামটার খাতিরে নিয়ম রদ করেছিলেম । গার্ড এসে গাডির কামরায় বরাদার বেশি মানুষকে ঠেসে ঢুকিয়ে দিয়েছে, ঘুষ খেয়ে থাকবে কিংবা আগন্তুক ভাবী দবের । সে কালে অক্ষরগনীতি-করা তিন মাত্রা মূলক ছন্দে যুক্তধ্বনি বর্জন করে চলতুম ; কিন্তু, তাতে বচনায় অতিলালিতোর দুর্বলতা এসে পৌঁছত সেটা যখন আমার কাছে বিবক্তিকর হল তখন যুক্তধ্বনির শরণ নিলুম ; ছন্দটা একদিন ছিল যেন নবনী দিয়ে গড়া পড়িতেছে। যুখী ঝরিয়া, এই দুর্বলতার মধ্যে যুক্তবর্ণ এসে দেখা দিল— নববর্ষার বারিসংঘাতে সিক্তপবন সুগন্ধে তারি কারুণে উঠে। ভরিয়া । তিন-তিন মাত্রায় যার গ্রন্থিযোজনা এমন আর-একটি ছন্দের দৃষ্টান্ত দেখাই— আঁখির পাতায় নিবিড় কাজল গলিছে নয়ন সলিলে । অক্ষরসংখ্যা সমান রেখে এই দুটাে পদে যুক্তবর্ণ যদি চড়াই তা হলে সেটা কেমন হয়- যেমন এক-এক সময়ে দেখা যায়, জোয়ান পুরুষ ক্ষীণ স্ত্রীর ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে পথে চলে নির্মমভাবে । প্ৰমাণ দিই গলিছে অশ্রচার নিকরে । কিন্তু, এই বোঝা পয়ারজাতীয় পালোয়ানের স্কন্ধে চাপালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে না। প্ৰথমে বিনা-বোঝার চালটা দেখানো যাক শ্রাবণের কালো ছায়া নেমে আসে তামালের বনে যেন দিক-ললনার গলিত কাজল-বরিষনে । এটিকে গুরুভার করে দিই বর্ষার তমিশ্রচ্ছায়া ব্যাপ্ত হল অরণ্যের তলে