পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

と8と রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী পরিবর্জিত হল- বহুবিধ, এমন-কি, পরস্পরবিরুদ্ধ হল তার আচার- নানা দেবদেবী নানা সম্প্রদায়ের সঙ্গে অভ্যাগত হওয়াতে ভারতবর্ষে ধর্ম জটিলতার অন্ত রইল না । পারসো এবং মোটের উপর পাশ্চাত্য এশিয়ার সর্বত্রই বাসযোগ্য স্থান সংকীর্ণ এবং সেখানে অন্নক্ষেত্রের পরিধি পরিমিত । সেই ছোটো জায়গায় যে আর্যেরা বাসপত্তন করলেন তাদের মধ্যে একটি বিশুদ্ধ সংহতি রইল, অনাৰ্যজনতার প্রভাবে তাদের ধর্মকর্ম বহু জটিল ও বিকৃত হল না । এশিয়ার এই বিভাগে কৃষ্ণবৰ্ণ নিগ্রেপ্রায় জাতির বসতি ছিল তার প্রমাণ পুরাতন সাহিতো আছে, কিন্তু ইরানীয়দের আর্যত্বকে তারা অভিভূত করতে পারে নি । পারসোর ইতিহাস যখন শাহনামার পুরাণকথা থেকে বেরিয়ে এসে স্পষ্ট হয়ে উঠল তখন পারসো আর্যদের আগমন হাজার বছর পেরিয়ে গেছে । তখন দেখি আর্যজাতির দুই শাখা পারস্য-ইতিহাসের আরম্ভকালকে অধিকার করে আছে, মীদিয় এবং পারসিক । মীদিয়েরা প্ৰথমে এসে উপনিবেশ স্থাপন করে, তার পরে পারসিক । এই পারসিকদের দলপতি ছিলেন। হাখমানিশ । তারই নাম-অনুসারে এই জাতি গ্ৰীক ভাষায় আকেমেনিড (Achaementd) আখ্যা পায় । খৃস্টজন্মের সাডে-পাঁচশো বছর পূর্বে আকেমেনীয় পাবসিকেরা মীদিয়দের শাসন থেকে সমস্ত পাবসাকে মুক্ত করে নিজেদের অধীনে একচ্ছত্র করে ; সমগ্র পারসোর সেই প্ৰথম অদ্বিতীয় সম্রাট ছিলেন বিখ্যাত সাইরাস, তার প্রকৃত নাম খোরাস { তিনি শুধু যে সমস্ত পারস্যকে এক করলেন তা নয়, সেই পারস্যকে এমন এক বৃহৎ সাম্রাজ্যের চুড়ায় অধিষ্ঠিত করলেন সে যুগে যার তুলনা ছিল না । এই বীর্যবংশের এক পরম দেবতা ছিলেন অহুরমজদা । ভারতীয় আৰ্যদের বরুণদেবের সঙ্গেই তার সাজাত । বাহ্যিক প্রতিমার কাছে বাহিক পূজা আহরণের দ্বারা তাকে প্ৰসন্ন করার চেষ্টাই তার আরাধনা ছিল না । তিনি তার উপাসকদের কাছ থেকে চেয়েছিলেন সাধু চিন্তা, সাধু বাক্য ও সাধু কৰ্ম । ভারতবর্ষের বৈদিক আৰ্যদেবতার মতোই তার মন্দির ছিল না, এবং এখানকার মতোই ছিল অগ্নিবেদী | তখনকার কালের সেমেটিক জাতীয়দের যুদ্ধে দয়াধর্ম ছিল না । দেশজোড়া হত্যা লুঠ বিধ্বংসন বন্ধন নির্বাসন, এই ছিল রীতি । কিন্তু সাইরাস ও তার পরবর্তী সম্রাটদের রাষ্ট্রনীতি ছিল তার বিপরীত । তারা বিজিত দেশে ন্যায়বিচার সুব্যবস্থা ও শান্তি স্থাপন করে তাকে সমৃদ্ধিশালী করেছেন । যুরোপীয় অনিৰ্দয় হিতৈষণা প্ৰকাশ করেছেন, তাদের ধর্মে তাদের আচারে হস্তক্ষেপ করেন নি, তাদের স্বাদেশিক দলনায়কদের স্বপদে রক্ষা করেছেন । তার প্রধান কারণ, কী যুদ্ধে, কী দেশজয়ে, তাদের ধর্মনীতিকে তারা ভুলতে পারেন নি । ব্যাবিলোনিয়ায় আসীরিয়ায় পূজার ব্যবহারে ছিল দেবমূর্তি । বিজেতারা বিজিত জাতির এই-সব মূর্তি নিয়ে যেত। লুঠ করে । সাইরসের ব্যবহার ছিল তার বিপরীত । এইরকম লুঠ-করা মূর্তি তিনি যেখানে যা পেয়েছেন সেগুলি সব তাদের আদিম মন্দিরে ফিরিয়ে দিয়েছেন । তার অনতিকাল পরে তারই জ্ঞাতিবংশীয় দরিয়ুস সাম্রাজ্যকে শত্ৰুহন্ত থেকে উদ্ধার করে আরো বহুদূর প্রসারিত করেন । পার্সিপোলিসের স্থাপনা এরই সময় হতে । এই যুগের আসীরিয়া ব্যাবিলন ঈজিপ্ট গ্ৰীস প্রভৃতি দেশে বহু কীর্তি প্ৰধানত দেবমন্দির আশ্রয় করে প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু আকেমেনীয় রাজত্বে তার চিহ্ন পাওয়া যায় না । শত্রুজয়ের বিবরণচিত্র যে-যেখানে পাহাড়ের গায়ে ক্ষোদিত সেখানেই জরথুৰীয়দের বরণীয় দেবতা অহুরমজদার ছবি শীর্ষদেশে উৎকীর্ণ, অর্থাৎ নিজেদের সিদ্ধিলাভ যে তারই প্ৰসাদে এই কথাটি তার মধ্যে স্বীকৃত । কিন্তু মন্দিরে মূর্তিস্থাপন করে পূজা হত তার প্রমাণ নেই। প্রতীকরূপে অগ্নিস্থাপনার চিহ্ন পাওয়া যায় । ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ হতেই একদেবতার সরল পূজাপদ্ধতি পারসিক জাতিকে ঐক্য এবং শক্তি দেবার সহায়তা করেছে। उठ८ठ प्रश् (न | বড়ো সাম্রাজ্য হাতে নিয়ে স্থির থাকবার জো নেই। কেবলই তাকে বৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে হয়, বিশেষত চারিদিকে যেখানে প্রতিকুল শক্তি। এইরকম নিত্য প্ৰয়াসে বলক্ষয় হয়ে ক্লান্তি দেখা দেয় । অবশেষে হঠাৎ আঘাতে অতি স্কুল রাটিক দেহটা চারি দিক থেকে ভেঙে পড়ে। কোনো জাতির মধ্যে