পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৭

S8ir রবীন্দ্র-রচনাবলী পথে যেতে যেতে এক জায়গায় দেখি এই উচ্চভূমি হঠাৎ বিদীর্ণ হয়ে নেমে গেছে, আর সেই গহবরতল থেকে খাড়া একটা পাহাড় উঠেছে। এই পাহাড়ের গায়ে অন্তরে অন্তরে খোপে খোপে মানুষের বাসা, ভাঙন-ধরা পদ্মার পাড়িতে গাঙশালিখের বাসার মতো । চারি দিক থেকে বিচ্ছিন্ন এই কোটর-নিবাসগুলিতে প্রবেশের জন্যে কাঠের-তক্তা-ফেলা সংকীর্ণ সঁাকে । মানুষের চাকের মতো এই লোকালয়টির নাম ইয়েজদিখন্তু। দুপর বেজেছে। ইসফাহানের পীেরজনের পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা বহন করে মোটররথে লোক এল । সেই অভ্যর্থনার সঙ্গে এই শা-রেজা গ্রামের একটি কবির কাব্য ছিল মিলিত । সেই কাব্যটির ইংরেজি তৰ্জমা এইখানে লিখে দিই। : The caravans of India always carry sugar but this time it has the perfume of the muse. O caravan, please stop your march, because burning hearts are following thee like the butterflies which burn around the flame of candles. O zephyr. softly blow and whisper on the tomb of Saadi. Thereupon in joy Saadi will come to life in his tomb. Tagore, he is the unique, the philosopher who knows what is past and what the future holds. Let his arrival be blessed and fortunate in the land of the great Cyrus, an august descendant of whom to-day fortunately wears the crown of Persia. পথের ধারে দেখা দিল এলাম পপলার অলিভ ও তৃত গাছের শ্রেণী। সামনে দেখা যায় ঢালু। পাহাড়ের গায়ে দূর প্রসারিত ইসফাহান শহর । V পূর্বেই বলে রেখেছিলুম, আমি সম্মাননা চাই নে, আমাকে যেন একটি নিভৃত জায়গায় যথাসম্ভব শান্তিতে রাখা হয় । উপর থেকে সেইরকম হুকুম এসেছে। তাই এসেছি একটি বাগানবাড়িতে । বাগানবাড়ি বললে একে খাটাে করা হয় । এ একটি মন্ত সুসজ্জিত প্রাসাদ । যিনি গবর্নর তিনি ধীর সুগভীর, শান্ত তার সৌজন্য, এর মধ্যে প্রাচ্যপ্রকৃতির মিতভাষী আচঞ্চল আভিজাত্য । শুনতে পাই এই বাড়ির যিনি মালিক তিনি আমাদের দেশের সেকেলে কোনো কোনো ডাকাতে জমিদারদের মতো ছিলেন । একদা এখানে সশস্ত্ৰে সসৈন্যে অনেক দৌরাত্ম্য করেছেন । এখন অস্ত্ৰ সৈন্য কেড়ে নিয়ে তাকে তেহেরানে রাখা হয়েছে, কারাবন্দীরূপে নয়, নজরবন্দীরূপে । তার ছেলেদের যুরোপে শিক্ষার জন্যে পাঠানো হয়েছে। ভারত গবর্মেন্টের শাসননীতির সঙ্গে কিছু প্ৰভেদ দেখছি । মোহমেরার শেখ, গবর্মেন্টের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উত্তেজিত করবার চেষ্টা করাতে রাজা সৈন্য নিয়ে তাকে আক্রমণের উদ্যোগ করেন । তখন শেখ সন্ধির প্রার্থনা করতেই সে প্রার্থনা মন্ত্রর হল । এখন তিনি তেহেরানে বাসা পেয়েছেন । তার প্রতি নজর রাখা হয়েছে, কিন্তু তার গলায় ফাস বা হাতে শিকল ხt\g fi | অপরাঢ়ে যখন শহরে প্রবেশ করেছিলুম। তখন ক্লান্ত দৃষ্টি শ্ৰান্ত মন ভালো করে কিছুই গ্রহণ করতে পারে নি। আজ সকালে নির্মল আকাশ, স্নিগ্ধ রৌদ্র। দোতলায় একটি কোণের বারান্দায় বসেছি। নীচের বাগানে এলম, পপলার উইলো গাছে বেষ্টিত ছোটাে জলাশয় ও ফোয়ারা। দূরে গাছপালার মধ্যে একটি মসজিদের চুড়া দেখা যাচ্ছে, যেন নীলপদ্মের কুঁড়ি, সুচিকণ নীল পারসিক টালি দিয়ে তৈরি, এই সকালবেলাকার পাতলা মেঘে-ছোওয়া আকাশের চেয়ে ঘনতর নীল । সামনেকার কঁকার-বিছানো রাস্তায় সৈনিক প্রহরী পায়চারী করছে । এ-পর্যন্ত সমস্ত পারস্যে দেখে আসছি। এরা বাগানকে কী ভালোই না বাসে । এখানে চারি দিকে