পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Nይ6 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী গানে নিলে। মহম্মদ খার দস্যবৃত্তির চরমকীর্তি রইল খোরাসানে, সেখানে নাদির শাহের হতভাগ্য অন্ধ পুত্র শা-রুখ ছিল রাজা । হিন্দুস্থান থেকে নাদির শাহের বহুমূল্য লুঠের মাল গুপ্ত রাজকোষ থেকে উদগীৰ্ণ করে নেবার জন্যে দস্যশ্রেষ্ঠ প্রতিদিন শা-রুখকে যন্ত্রণা দিতে লাগল। অবশেষে একদিন শা-রুখের মুণ্ড ঘিরে একটা মুখোশ পরিয়ে তার মধ্যে সীসে গালিয়ে ঢেলে দিলে। এমনি করে শা-রুখের প্রাণ এবং ঔরঙ্গেজেবের চুনি তার হস্তগত হল । তার পরে এশিয়ায় ক্রমে এসে পড়ল যুরোপের বণিকদল, ইতিহাসের আর-এক পৰ্ব আরম্ভ হল। পূর্ব পশ্চিমের সংঘাতে । পারস্যে তার চক্ৰবাত্যা যখন পাক দিয়ে উঠছিল তখন ঐ কাজার-বংশীয় রাজা সিংহাসনে । বিদেশীর যন্ত্রণের নাগপাশে দেশকে জড়িয়ে সে ভোগবিলাসে উন্মত্ত, দুর্বল হাতের রাজদণ্ড চালিত হচ্ছিল বিদেশীর তৰ্জনীসংকেতে । এমন সময় দেখা দিলেন রেজা শা। পারস্যের জীৰ্ণ জৰ্জর রাষ্ট্রশক্তি সর্বত্র আজ উজ্জ্বল নবীন হয়ে উঠছে । আজ আমি আমার সামনে যে ইস্পাহানকে দেখছি তার উপর থেকে অনেকদিনের কালো কুহেলিকা কেটে গেছে। দেখা যায় এতকালের দুর্যোগে ইস্পাহানের লাবণ্য নষ্ট হয় নি । আশ্চর্যের কথা এই যে, আরবের হাতে, তুর্কির হাতে, মোগলের হাতে, আফগানের হাতে পারস্য বার বার দলিত হয়েছে, তবু তার প্রাণশক্তি পুনঃপুন নিজেকে প্রকাশ করতে পারলে । আমার কাছে মনে হয় তার প্রধান কারণ-আকেমেনীয়, সাসানীয়, সাফাবি রাজাদের হাতে পারস্যের সর্বাঙ্গীণ ঐক্য বারংবার সুদৃঢ় হয়েছে। পারস্য সম্পূর্ণ এক, তার সভ্যতার মধ্যে কোনো আকারে ভেদবুদ্ধির ছিদ্র নেই। আঘাত পেলে সে পীড়িত হয়, কিন্তু বিভক্ত হয় না । রুশে ইংরেজে মিলে তার রাষ্টিক সত্তাকে একদা দুখানা করতে বসেছিল। যদি তার ভিতরে ভিতরে বিভেদ থাকত তা হলে যুরোপের আঘাতে টুকরো টুকরো হতে দেরি হত না । কিন্তু যে মুহুর্তে শক্তিমান রাষ্ট্রনেতা সামান্যসংখ্যক সৈন্য নিয়ে এসে ডাক দিলেন, অমনি সমস্ত দেশ তাকে স্বীকার করতে দেরি করলে না ; অবিলম্বে প্ৰকাশ পেলে যে, পারস্য এক । পারস্য যে অন্তরে অন্তরে এক, তার প্রধান একটা প্ৰমাণ তার শিল্পের ইতিহাসে দেখতে পাও যায় । আকেমেনীয় যুগে পারস্যে যে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য উদভাবিত হল তার মধ্যে আসীরিয়, ব্যাবিলনীয়, ঈজিপটীয় প্রভাবের প্রমাণ আছে। এমন-কি, তখনকার প্রাসাদনির্মাণ প্রভৃতি কাজে বিপুলসাম্রাজ্যভুক্ত নানাদেশীয় কারিগর নিযুক্ত হয়েছিল। কিন্তু সেই বিচিত্র প্রভার বিশিষ্ট ঐক্য লাভ করেছিল পারসিক চিত্তের দ্বারা। রজার ফ্রাই এ সম্বন্ধে যে কথা বলেছেন। এখানে উদধূত করি : This extreme adaptability is. I think, a constant trait in Persian art. ... We tend, perhaps, at the present time to exaggerate the importance of originality in an art : we admire in it the expression of an independent and selfcontained people. forgetting that originality may arise from a want of flexibility in the artist's make-up as well as from a new imaginative outlook. নানা প্রভাব চারিদিক থেকে আসে ; জড়বুদ্ধি তাকে ঠেকিয়ে রাখে, সচেতন বুদ্ধি তাকে গ্ৰহণ করে আপনার মধ্যে তাকে ঐক্য দেয়। নিজের মধ্যে একটা প্ৰাণবান ঐক্যতত্ত্ব থাকলে বাইরের বহুকে মানুষ একে পরিণত করে নিতে পারে। পারস্য তার ইতিহাসে, তার আর্টে বাইরের অভ্যাগমকে আপন अौलूठ कान निग्रछ । পারস্যের ইতিহাসক্ষেত্রে একদিন যখন আরব এল তখন অতি অকস্মাৎ তার প্রকৃতিতে একটা মূলগত পরিবর্তন ঘটল । এ কথা মনে রাখা দরকার যে, বলপূর্বক ধর্মদীক্ষা দেওয়ার রীতি তখনো আরব গ্রহণ করে নি। অরিবশাসনের আরম্ভকালে পারস্যে নানা সম্প্রদায়ের লোক একত্রে বাস করত এবং শিল্পরচনায় ব্যক্তিগত স্বাধীন রুচিকে বাধা দেওয়া হয় নি। পারস্যে ইসলাম ধর্ম অধিবাসীদের স্বেচ্ছানুসারে ক্রমে ক্রমে সহজে প্রবর্তিত হয়েছে। তৎপূর্বে ভারতবর্ষেরই মতো পারস্যে সামাজিক