পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Vo8S কবির সংবর্ধনা-ভোজের অন্তে বুশেয়ারের গবর্নরের বক্তৃতা জনাব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচ্যাকাশের উজ্জ্বলতম তারা ; তার মনীষার দীপ্তি শুধু এশিয়া মহাদেশকে নয়, সমান্ত বিশ্বকে আলোকিত করেছে । আজ যে তিনি পারস্যদেশে পদাৰ্পণ করেছেন, এতে আমাদের দেশ গীেরবান্বিত হল । পুরাকালে ভারতবর্ষ ও পারস্যদেশ পরস্পরের কাছাকাছি এসেছিল ; ধর্ম শিল্প এবং আরো অনেক উপায় অবলম্বন করে তারা পরস্পরকে অনুপ্রাণিত করেছিল । সেই নিবিড় আত্মীয়তায় দুটি দেশেরই প্রচুর লাভ ; সেটাকে পুনরুজজীবিত করার প্রকৃষ্ট উপায় হচ্ছে এই মহাপুরুষের আমাদের দেশে পদাৰ্পণ । আজ তার আগমনে সমস্ত ইরানদেশে একটা সাড়া পড়ে গেছে ; আমরা সকলেই একান্ত কামনা করি, তার এই ভ্ৰমণে যেন তিনি আনন্দলাভ করেন, আমাদের মধ্যে যা-কিছু সত্য, যা-কিছু ভালো আছে, আমাদের দেশে ভ্ৰমণ ও অবস্থান -কালে তাই দিয়ে যেন আমরা তাকে খুশি করতে পারি । কবির উত্তর চিন্তাসমৃদ্ধ এই প্রাচীন দেশের প্রতি আমি চিরকালই অন্তরে গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করে এসেছি ; এই দেশ দেখা এবং এ দেশের অধিবাসীদের পরিচয় লাভ করাটা আমার অনেক দিনের আকাঙক্ষার বিষয় ছিল । বাংলাদেশের কবি আমি আজ ইরানদেশে এসেছি, প্ৰাণের প্রীতি ও শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিয়ে । দুঃখ এই, আমার এই বৃদ্ধ বয়স ও ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে আমি ইচ্ছামত ঘুরে বেড়াতে পারব না, প্ৰাণ ভরে এখানকার জীবনযাত্রার নিকটসংস্পর্শে আসতে পারব না । তবুও এটা বলতে পারি যে, এখান থেকে আমি প্রচুর অনুপ্রেরণা ও শাশ্বত মূল্যের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিবব । পারস্যে এসে আপনাদের নিকট যে বিরাট অভ্যর্থনা পেলুম এর জন্য আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি । -विफ्रेिय । उlश्च >७७३०, *j, >१७-७० ১৪ এপ্রিল [ ১৯৩২ ] তারিখে কবি-কর্তৃক পারস্য-সম্রাট রেজা শাপহলবীর নিকট প্রেরিত তারের মর্মানুবাদ মহারাজ, যে উদার আতিথেয়তা আপনার নিকট পেলেম তার জন্যে ইরান থেকে বিদায় নেবার আগে আমার হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা আপনার কাছে নিবেদন করি । আপনি আপনার নিজস্ব প্রাণশক্তি দেশের জীবনের মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন, আপনার প্রতি আমার ব্যক্তিগত শ্ৰদ্ধা-অৰ্ঘ্য রেখে যাই । আপনার প্রজাবগের প্রতি আমার অন্তরের প্রীতির নিদর্শনস্বরাপ কয়েকটি কথা বলে। আজ বিদায় গ্রহণ করব । ইরানের বক্ষুবর্গের প্রতি আজ শেষ পর্যন্ত তোমাদের কাছে বিদায় নেবার সময় এসেছে ; কৃতজ্ঞতায় ভরা আমার এই হৃদয়খানি তোমাদের দেশে রেখে গেলেম । তোমাদের সম্রাট তার সাম্রাজ্যে আমাকে নিমন্ত্ৰণ করে যে সম্মান দিয়েছেন তোমরা রাজভক্ত প্ৰজার মতো সেই সম্মানের মর্যাদা রেখেছি এবং তোমাদের চিরাচরিত আতিথেয়তার ইতিহাসবিশ্রাত যশ অম্লান রেখেছি । তোমাদের এই উদার অভ্যর্থনা আমি গ্ৰহণ করেছি। অন্তরের সঙ্গে, বিশেষত যখন এর মধ্যে রয়েছে আমার মাতৃভূমির প্রতি আন্তরিক-শ্রদ্ধা-নিবেদন । যে দুটি জাতির মহাস্থান আজ ভারতবর্ষ ও পারস্য, ইতিহাসের প্ৰথম যুগে তারা যখন অনাগত ভবিষ্যতের মধ্যে তাদের জয়যাত্রা শুরু করেছিল তখন তারা ছিল এক । কালচক্ৰে তারা পৃথক হয়ে গড়ে তুলাল এশিয়ার দুটি বিরাট সভ্যতা, তার মধ্যে প্রকাশের ভঙ্গিমা বিভিন্ন হলেও অন্তরের তেজ ও প্রাণশক্তি একই রকম । যুগে যুগে তাদের মধ্যে চিন্তাসমৃদ্ধ চিত্তের আদান-প্ৰদান চলে এসেছে, যতদিন-না এশিয়া তন্দ্রবেশে আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়ল ।