পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tea রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী প্রথম পরিচ্ছেদের বিষ্ঠ অনুচ্ছেদে ‘প্রদোব’ শব্দের যে প্রয়োগ রবীন্দ্রনাথ করিয়াছেন, পত্রিকায় রচনাটি প্রথম-প্রকাশ-কালে তাহা লইয়া তৎকালীন সাময়িক পত্রে বিতর্ক উপস্থিত হয় । সেই প্রসঙ্গে বিচিত্রার পরিচালক সুশীলচন্দ্ৰ মিত্রকে রবীন্দ্রনাথ যে পত্র লেখেন তাহার প্রাসঙ্গিক অংশ শান্তিনিকেতন কল্যাণীয়েযু আমার লেখায় ‘প্ৰদোষ শব্দের প্রয়োগে অর্থের ভুল ঘটেছে, সেই নিন্দাক্ষালনের জন্য তোমার পত্রিকায় কিছু প্ৰয়াস দেখা গেল । আমার প্রতি তোমাদের শ্রদ্ধা আছে জেনেই আমি বলছি, এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। অজ্ঞতা ও অনবধানতায়, স্বকৃত ও অন্যকৃত দোষে, অনেক ভুল আমার লেখায় থেকে গেছে । মেনে নিতে কখনো কুষ্ঠিত হই নে । পাণ্ডিত্যের অভাব এবং অন্য অনেক দ্রুটি সত্ত্বেও সমাদরের যোগ্য যদি কোনো গুণ আমার রচনায় উদ্যবৃত্ত থাকে। তবে সেইটের ‘পরেই আমার একমাত্র ভরসা, নির্ভুলতার পরে নয় । রাক্রির অল্পাঙ্ককার উপক্রমকেই বলে প্ৰদোষ, রাত্রির অল্পান্ধকার পরিশেষের বিশেষ কোনো শব্দ আমার জানা নেই । সেই কারণে প্রয়োজন উপস্থিত হলে ঐ শব্দটাকে উভয় অর্থেই ব্যবহার করবার ইচ্ছা হয়। এমনি করেই প্রয়োজনের তাগিদে শব্দের অর্থবিস্তৃতি ভাষায় ঘটে থাকে । সংস্কৃত অভিধানে যে শব্দের যে অর্থ, বাংলাভাষায় সর্বত্র তা বজায় থাকে নি । সেই ওজর করেই আলোচিত লেখাটিকে যখন গ্ৰন্থ আকারে প্রকাশ করব তখন প্ৰদোষ কথাটার পরিবর্তন করব না এইরকম স্থির করেছি । সম্ভবত এই অর্থে এই শব্দটার প্রয়োগ আমার রচনায় অন্যত্রও আছে এবং ভাবীকালেও থাকবে । রাত্রির আরম্ভে ও শেষে যে আলো'অন্ধকারের সঙ্গম, তার রূপটি একই, এবং একই নামে তাকে ডাকবার দরকার ঘটে । সংস্কৃতভাষায় সন্ধ্যা শব্দের দুই অর্থই उाङ् किकु वानाग्र उठा फलंद ना । আমার লেখায় এর চেয়ে গুরুতর ভুল, ইস্কুলের নীচের ক্লাসে পড়ছে এমন ছেলে চিঠি লিখে একবার আমাকে জানিয়েছিল। আমি মিথ্যা তর্ক করি নি, তাকে সাধুবাদ দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছি । অপবাদের ভাষা ও ভঙ্গি -অনুসারে কোনো কোনো স্থলে স্বীকার করা কষ্টসাধ্য, কিন্তু না করা ক্ষুদ্রতা । আমি পণ্ডিত নই, শোনা কথা বলছি- কালিদাসের মতো কবির কাব্যেও শাব্দিক ক্রটি ধরা পড়েছে । কিন্তু ভাবিক ক্রটি নয় বলেই তার সংশোধনও হয়নি, মার্জনাও হয়েছে। য়ুরোপীয় সাহিত্যে এবং চিত্রকলায় এরূপ দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। বৈষ্ণব-পুরাণে কথিত আছে, রাধিকার ঘটে ছিদ্র ছিল, কিন্তু নিন্দুকেরাও সেটা লক্ষ্য করলে না। যখন দেখা গোল তৎসত্ত্বেও জল আনা হয়েছে। সাহিত্যে চিত্রকলায় এই গল্পটির প্রয়োগ খাটে । ইতি ২১ জুলাই Saev.2 SR | —f&f6 || veblar yeebə, 9, Şvey বিচিত্রায় উক্ত পত্র পাঠ করিয়া প্ৰবোধচন্দ্র সেন প্রস্তাব করেন, প্রত্যুষ (বা প্ৰত্যুষ) শব্দযোগেই “রাত্রির অল্পান্ধকার পরিশেষকে নির্দেশ করা যায়। প্ৰত্যুত্তরে কবি তাহাকে যে পত্ৰ লেখেন তাহার প্রাসঙ্গিক অংশ সংকলিত হইল প্ৰদেব শব্দের প্রয়োগ নিয়ে তুমি আমার বক্তব্যটি ঠিক হয়তো বোকো নি । প্রত্যুষ শব্দটি কালব্যাজক- অর্থাৎ দিনরাত্রির বিশেষ একটি সময়াংশকে বলে প্রত্যুষ । বাংলাভাষায় ‘সন্ধ্যা’ শব্দটিও তেমনি । আলো-অন্ধকারের সমবায়ের যে একটি সাধারণ ভােবরাপ আছে, যেটা ইংরেজি twilight শব্দে পাওয়া যায় সাহিত্যে অনেক সময় সেইটেরই বিশেষ প্রয়োজন হয়। প্রদোষ শব্দকে আমি সেই অর্থেই ইচ্ছাপূর্বক ব্যবহার করি । ইতি ২৩ আগস্ট Saov SR -বিচিত্রা । আশ্বিন ১৩৩৯, পৃ. ৪২৯