পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী যোগীনন্দা যোগীনদাদার জন্ম ছিল ডেরাস্মাইল খায়ে । পশ্চিমোতে অনেক শহর অনেক গায়ে গায়ে বেড়িয়েছিলেন মিলিটারি জরিপ করার কাজে, শেষ বয়সে স্থিতি হল শিশুদলের মাঝে । “জুলুম তোদের সইব না। আর” ইয়াক চালাতেন রোজই, পরের দিনেই আবার চািলত ওই ছেলেদের খোজই । দরবারে তার কোনো ছেলের ফাক পড়বার জো কীডেকে বলতেন, “কোথায় টুনু, কোথায় গেল খোকি ৷” “ওরে ভজু, ওরে বান্দর, ওরে লক্ষ্মীছাড়া ।” ইহাক দিয়ে তার ভারী গলায় মাতিয়ে দিতেন পাড়া । চার দিকে তার ছোটাে বড়ো জুটিত যত লোভী কেউ বা পেত মার্কেল, কেউ গণেশমার্কা ছবি । কেউ বা লজজুস, সেটা ছিল মজলিসে তার হাজরি দেবার ঘুষ । কাজলি যদি অকারণে করত অভিমান হেসে বলতেন “ই করে তো”, দিতেন ছাচি পান । আপন সৃষ্ট নাতনিও তার ছিল অনেকগুলি, পাগলি ছিল, পাটলি ছিল, আর ছিল জঙ্গুলি । মায়ের হাতের জারকলেবু যোগীনদাদার প্ৰিয় । তখনো তার শক্ত ছিল মুণ্ডার-ভাজা দেহ, বয়স যে বাট পেরিয়ে গেছে, বুঝত না তা কেহ । মুখ যেন তার পাকা আমটি, হয় নি সে থলথলে । চওড়া কপাল, সামনে মাথায় বিরল চুলের টাক, গোফ জোড়াটার খ্যাতি ছিল, তাই নিয়ে তার জাক । দিন ফুরোত, কুলুঙ্গিতে প্ৰদীপ দিত জ্বালি, বেলের মালা হেঁকে যেত মোড়ের মাথায় মালী । চেয়ে রইতেম মুখের দিকে শাস্তশিষ্ট হয়ে, কাসর-ঘণ্টা উঠত বেজে গলির শিবালয়ে । সেই সেকালের সন্ধ্যা মোদের সন্ধ্যা ছিল সত্যি, দিন-ভ্যাস্তানো ইলেকট্রিকের হয়নিকো উৎপত্তি । ঘরের কোণে কোণে হুয়া, আঁধার বাড়তি ক্রমে, মিটুমিটে এক তেলের আলোয় গল্প উঠতি জমে । শুরু হলে থামতে তারে দিতেমনা তো ক্ষণেক, সত্যি মিথ্যে যা-খুশি তাই বানিয়ে যেতেন অনেক । ভূগোল হত। উলটাে-পালটা, কাহিনী আজগুবি, মজা লাগত। খুবই ।