পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tr8 Versary Yvoss রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বালক বয়স তখন ছিল। কঁচা ; হালকা দেহখানা ছিল পাখির মতো, শুধু ছিল না। তার ডানা । উড়ত পাশের ছাদের থেকে পায়রাগুলোর বঁাক, বারান্দাটার রেলিং-’পরে ডাকত এসে কাক । ফেরিওয়ালা হেকে যেত গলির ওপর থেকে, তপসিমাছের কুড়ি নিত গামছা দিয়ে ঢেকে । বেহালাটা হেলিয়ে কাধে ছাদের পরে দাদা, সন্ধ্যাতারার সুরে যেন সুর হত তার সাধা । জুটেছি। বৌদিদির কাছে ইংরেজি পাঠ ছেড়ে, মুখখানিতে-ঘোর-দেওয়া তার শাড়িটি লালপোড়ে । চুরি করে চাবির গোছা লুকিয়ে ফুলের টবে জেহের রাগে রাগিয়ে দিতেম। নানান উপদ্রবে । কঙ্কালী চাটুজে হঠাৎ জুটত সন্ধ্যা হলে ; বা হাতে তার থেলো ইকো, চাদর কাধে কোলে । দ্রুত লয়ে আউড়ে যেত। লব-কুশের ছড়া ; থাকত আমার খাতা লেখা, পড়ে থাকত পড়ামনে মনে ইচ্ছে হত, যদিই কোনো ছলে ভর্তি হওয়া সহজ হত এই পাচলির দলে ভাবনা মাথায় চাপত নাকো ক্লাসে ওঠার দায়ে, গান শুনিয়ে চলে যে তুমি নতুন নতুন গায়ে । স্কুলের চুটি হয়ে গেলে বাড়ির কাছে এসে । হঠাৎ দেখি, মেঘ নেমেছে ছাদের কাছে ঘেঁষে । আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে রান্ত ভাসে জলে, ঐরাবতের শুড় দেখা দেয় জল-ঢালা সব নলে । রাজপুত্ৰ তেপান্তরে কোথা সে পথহারা । ম্যাপে যে-সব পাহাড় জানি, জানি যে-সব গাত কুয়েনপুন আর মিসিসিপি ইয়াংসিকিয়াং, জানার সঙ্গে আন্ধেক জানা, দুরের থেকে শোনা, নানা রঙের নানা সুতোয় সব দিয়ে জাল-বোনা, নানারকম ধবনির সঙ্গে নানান চলাফেরা, সব দিয়ে এক হালকা জগৎ মন দিয়ে মোর ঘেরা, ভাবনাগুলো তারই মধ্যে ফিরত থাকি থাকি, বানের জলে শ্যাওলা যেমন, মেঘের তলে পাখি ।